somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাচনের হাওয়া

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে এই সময়ে সবচেয়ে মূল্যবাদ অনুমাণ ১৮ই ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন দল জয়ী হবে? পুরোনো রাজনীতির অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ শুরু হওয়ার আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করা এবং সুক্ষ্ণ কিংবা স্থুল কারচুপির অভিযোগ লিপিবদ্ধ হওয়ার সম্ভবনাও প্রবল।

১৮ই ডিসেম্বরের নির্বাচন হবেই, রাজনৈতিক দলগুলো যেকোনো মূল্যেই এই নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে, যদিও নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত নিবন্ধন করবার ক্ষেত্রে তারা আগ্রহী এমনটা নয়। বিশেষত ধর্মভিত্তিক দলগুলো অবশ্যই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হওয়ার বিরোধী।

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত হওয়ার শর্ত ছিলো বিশেষ কোনো ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে এমন কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত হতে পারবে না। চমৎকার একটি বিধি ছিলো এটা। এমন কি প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোটও এই বিধি মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলো। তবে তখন পরিস্থিতি ভিন্ন রকম ছিলো। নির্বাচন কমিশন সংলাপ অনুষ্ঠানের আগেই শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া বানোয়াট অভিযোগেই অন্তরীণ, এবং একই সাথে হাফিজউদ্দীন এবং দেলোয়ার বিষয়ক জটিলতায় বিএনপি সংলাপে অংশগ্রহন করতে নারাজ ছিলো, পরবর্তীতে হাফিজউদ্দীনকে বিএনপির মুখপত্র বিবেচনা করবার পরে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে গ্রহন করে স্বাগত জানিয়েছিলো সংস্কারপন্থী নেতারা, তারা এটাকে নিজেদের বিজয় বলে দাবি করেছিলো এবং একই সাথে দেলোয়ার পন্থী সংস্কারবিমুখ মানুষেরা এটাকে অগ্রহনযোগ্য পক্ষপাতিত্ব মনে করেছিলো।

সেই সংলাপেও সংস্কারবাদী হাফিজউদ্দীন নির্বাচন কামিশনের বিধিমালা মেনে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। অন্তত প্রথম দফার আলোচনায় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত বিধিমালার নিবন্ধনের শর্তটি কারো কাছেই আপত্তিকর বিবেচিত হয় নি, ছোটো ছোটো লতানো দলগুলো এমন কি আওয়ামী লীগ নিজেও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করবার একটা দাবি তুলেছিলো। তবে নির্বাচন কমিশন সেই দাবী আমলে আনেন নি।

যুদ্ধাপরাধী প্রসঙ্গে বাংলাদেশে প্রচলিত মত হাস্যকর এবং বিভ্রান্তিকর। যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ স্খলন হয়ে যায় নি, এমন কি কতিপয় মৃদু যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক মানুষকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও পরিচিত যুদ্ধাপরাধীদের কাউকেই সাধারণ ক্ষমার আওতায় রাখা হয় নি। তবে রাজনৈতিক বক্তব্যের অনেক ভুলই শেখ মুজিব করেছেন, আবেগের আতিশষ্যে তিনি যা করে গেছেন যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশে তার দায় আমাদের এখনও বহন করতে হচ্ছে।

মাদ্রাসা শিক্ষা নিষিদ্ধ রাখবার পরে সেটাকে পুনরায় বিধিসম্মত করবার সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে চিহ্ণিত একজন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী নেতা খান এ সবুরকে নিজস্ব উদ্যোগে মুক্ত করা- এইসব অমার্জিত, অবিবেচনাপ্রসুত আচরণের দায় ব্যক্তি মুজিবের উপরেই বর্তায়। একই ভাবে পাকিস্তানপন্থী খন্দকার মোশতাকক নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্বের সাথে ঘনিষ্ঠ করে ফেলবার মতো রাজনৈতিক ভুলও তার জন্য ভীষণ ক্ষতিকর হয়েছে। মনে রাখতে হবে মুজিব হত্যার পরবর্তী সময়ে মোশতাকই নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশকে ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলো। তবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক জামায়াতের নেতাদের মুক্তির ঘোষণা এসেছিলো জিয়াউর রহমানের বদান্যতায়।

নির্বাচন কমিশন অতীত ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অবৈধ সূচনাকেও মেনে নিয়েছে। এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে অস্বীকার করেই যুদ্ধাপরাধীদের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠিত করেছে। এবং একই সাথে অভিযুক্ত করা যায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেও, তারা নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মৃদু অনুরোধ জানিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন এবং রাজনৈতিক সংলাপে অংশগ্রহন নিষিদ্ধ করতে।

বাংলাদেশের প্রচলিত মত- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় নি তাই তারা যুদ্ধাপরাধী নয়, বিচারে অভিযুক্ত হলে তাদের রাজনৈতিক অধিকার রদ করা যাবে, তবে দালাল আইনের ভাষ্য, যেটা এখনও বলবত আছে, কোনো যুদ্ধাপরাধীই আদালতে বেকসুর খালাস না পেলে অন্য কোনো নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারবে না। ভোট দান কিংবা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো ক্ষমতাই নেই তাদের যতক্ষণ না তাদের বিচার সমাপ্ত হচ্ছে।

আশ্চর্য বাংলাদেশে আশ্চর্য ঘটনা ঘটে। বিচার স্থগিত রেখে তাদের মুক্তি দান, নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পুনরুত্থান প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমতা বলে প্রদত্ত ঘোষণায় যেটা বর্তমানে অবৈধ বিবেচিত হচ্ছে, এ সত্ত্বেও বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত না হয়েও রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

তৃতীয় দফা রাজনৈতিক সংলাপ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রাজনৈতিক শোধন ব্যর্থ হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো অনুকম্পা লাভের রাজনৈতিক সংলাপের মশকরার পরে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় ১৮ই ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ঘোষিত হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে চেয়ে এটাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, তবে তারা অন্য সকল অবস্থানের মতো এটাতেও স্থির থাকতে পারে নি, নিয়ম ছিলো স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক দলের কর্মী কিংবা নেতাদের রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্ঠতা ছাড়তে হবে, এই বিধি রদ করেছে নির্বাচন কমিশন।

সুতরাং বিএনপি কিংবা জামায়াতের এই উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের বিরোধিতা করা অনর্থক, তারা পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে এই বিষয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে। এক ধাক্কায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গছিয়ে দেওয়ার আগেই ২ ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেই ভালো।

নির্বাচন হবেই , এই বিষয়ে সংশয় নেই, নির্বাচন শেষে বিএনপি এবং তার মিত্ররা ক্ষমতা আসবে না কি আওয়ামী লীগ এবং তার মিত্ররা ক্ষমতায় আসবে এটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে দামী প্রশ্ন বাংলাদেশে। অন্তত ২০শে ডিসেম্ভবরের আগে এই প্রশ্নের উত্তর জানা সম্ভব না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×