somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জয়নাল পলায়নের সিদ্ধান্ত ০২

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোখলেস ভাইয়ের অনুমান মিথ্যা হয় নি, তিলপা পাড়া এখন কালা সাদেকের রাজত্ব। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে চাওয়া মানুষেরা এখন নিয়মিত বখরা দেয় সাদেককে।
তবে একদিন সাদেকও অপসারিত হবে, সবাই প্রতিস্থাপনযোগ্য, অপরিহার্য কেউ নয়। যেকোনো প্রতিষ্ঠানই নিজস্ব প্রয়োজনে একটা ব্যবস্থা তৈরি করে নেয়, অমর্যাদাকর হলেও, প্রতিষ্ঠানের সুনামের সাথে না গেলেও প্রতিষ্ঠান এই ব্যবস্থাকে চালু রাখে, এবং প্রতিষ্ঠানই একদিন কোনো এক ব্যক্তিকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে।
ব্যক্তিঅপসারণের প্রতিহিংসা চলতে থাকে প্রতিষ্ঠানে। রাষ্ট্রও প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রও কখনও কখনও ব্যক্তিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। পারসোনা ননগ্রাটা অভিধা দিয়ে, রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য ক্ষতিকারক বিবেচনা করে রাষ্ট্র নিজেই ব্যক্তিকে নির্মূল করতে তৎপর হয়।

ব্যক্তিঅপসারণমূলক রাষ্ট্র নিজস্ব ব্যখ্যায় বলতে চায় ব্যক্তির অপরাধ ব্যক্তি সমাজের জন্য ক্ষতিকারক সব্যস্ত হয়েছে। ব্যক্তির সামাজিক প্রয়োজনীয়তা, তার সামাজিক অস্তিত্বকেও মুছে ফেলা হয় নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই। হয়তো একটা ব্যক্তি হঠাৎ করেই উবে যেতে পারে না। ব্যক্তির একটা রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব বিদ্যমান।

মোখলেস ভাইয়ের কথাগুলো এমনই ছিলো। ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব কি? রাষ্ট্র ব্যক্তিকে পরিচয় দেয়। তাকে জন্মসনদ দেয়, রাষ্ট্রের তালিকায় ব্যক্তির নাম থাকে, নাগরিক পরিচয় দিলে ব্যক্তির কাছেও রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়।

রাষ্ট্র সেই দায়বদ্ধতা এড়াতে ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় পরিচয় মুছে ফেলে নিপূন ভাবেই। একজন মানুষ যার কোনো অস্তিত্ব নেই, রাষ্ট্র তাকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় হত্যা করলেও রাষ্ট্রকে এজন্য কোনো ভাবেই অপরাধবোধে ভুগতে হয় না। লেলিন নিজেই এমন অনিয়মতান্ত্রিক কঠোরতার চর্চা করছেন নিজস্ব মানবিক রাশিয়ায়।
৫৮ ধারায় বলি হয়েছে পরিবার, কত মানুষকেই প্রতিবিপ্লবী বলা হয়েছে, বিপ্লবের লক্ষ্যের সাথে আপোষ করতে পারবে না, বিপ্লবের গৌরব এবং লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে এমন বিবেচনায় লেলিন নিজেই ৫৮ ধারা প্রবর্তন করেছিলেন রাশিয়া।

ফেব্রুয়ারীর বিপ্লবের পরে অক্টোবর বিপ্লব, নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তনের সাথে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এবং দীর্ঘ মেয়াদের গৃহযুদ্ধ, কোন সময়টাতে রাশিয়াতে মানুষ মানবিক জীবন কাটিয়েছে। রাশিয়ার পতন রাশিয়ার প্রসবকালেই নির্ধারিত ছিলো।

দেখো একটা বিষয় বিবেচনা করে, রাষ্ট্র আসলে বিমূর্ত একটা সত্ত্বা, এটাকে প্রকাশিত করে কারা? এখানের নাগরিক এবং যদি সেই ভাবে বলতে চাও তাহলে অগ্রসর মানুষেরাই রাষ্ট্রকে প্রকাশ করে। অগ্রসর মানুষেরা বলতে আমারা বুঝি যারা বুদ্দিবৃত্তির চর্চা করছে, যারা মানুষের স্বপ্ন নির্মাণ করে এবং মানুষের স্বপ্নকে বিনির্মান করে। যারা মানুষের অস্তিত্বকে ছেনি গাঁইতি চালিয়ে একটা আকার দেয়, সেইসব শিল্পমনস্ক মানুষেরাই রাষ্ট্রকে চিত্রিত করে।
প্রগতিশীল, সৃষ্টিশীল মানুষদের প্রতি অবজ্ঞা আর অবিচারে রাষ্ট্র নিজেই নিজেকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। যখন তুমি কোনো শিল্পীকে বলছো সে সামাজিক পরগাছা, যে পরান্নভোগী সামাজিক উৎপাত তখনই তুমি রাষ্ট্রের শেকড় কাটছো।

রাষ্ট্রকে দার্শনিক ভিত্তি দিবে কারা? কারা রাষ্ট্রের দর্শন আর এই দর্শন চর্চার গলদকে প্রকাশ করবে, সেই অগ্রসর মানুষেরা। তুমি তাদের নিয়মিত নিধন করবে, তাদের প্রকাশিত মতকে দমনের চেষ্টা করবে, তুনি নিজস্ব রাষ্ট্রের খুঁত গুলো নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতে চাইলে রাখতে পারো, কিন্তু নাগরিক রাষ্ট্রের খুঁতগুলো উপলব্ধি করে বলেই কোনো কোনো রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় ঘোষিত পরগাছা এই খুঁতগুলো প্রকাশে সোচ্চার হয়।

যেকোনো রাষ্ট্রই একই সাথে প্রজাপালক এবং প্রজানিপীড়কভুমিকায় অবতীর্ণ হয়। এটা রাষ্ট্রের চরিত্র নয় বরং রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রন করে যেই অর্থনৈতিক চক্র, এটা তারই ভাবনার প্রকাশ। তোমার নিয়মিত আহার জোগানোর জন্য কৃষকের প্রয়োজন কিন্তু যে কৃষক ক্ষেতে নিড়ানী না চালিয়ে তোমার গলায় কাস্তে চালাবে সেই কৃষকের প্রয়োজন নেই রাষ্ট্রের। তাই অধিকারসোচ্চার যেকোনো মানুষকেই নির্দ্বিধায় দমন করবে রাষ্ট্র।

তুমি বাংলাদেশে দেখো, কুষ্ঠিয়ায় কৃষক সারের দাবিতে মিছিল করলো, সেখানে গুলো চালালো কারা? রাষ্ট্রের পুলিশ, অথচ রাষ্ট্র এদের কাছেই খাদ্যের জন্য জিম্মি। রাষ্ট্র নিজের এই জিম্মি অবস্থাকে অস্বীকার করতে চায়।

জয়নাল অবশ্য এইসব উপলব্ধিকে নিজের সাথে মিলিয়ে দেখতে চায় এই অবসরে। আপাতত নিজের ডেরায় যাওয়া নিরাপদ নয়। বরং অনেক বেশী প্রানঘাতি সিদ্ধান্ত হবে এটা। জগন্নাথের সামনে থেকে আন্দালিফ ভাইকে ফোন করবে ভেবে নিয়েই জয়নাল উঠে পড়লো।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৫৩
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×