somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাজি

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনে হয় টুসিকে আর জেতানো যাবে না। আমার কি দোষ? বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেছে যে তাও আমাকে বলেনি। আমিইতো অন্যের কাছ থেকে শুনে বাজিতে জেতানোর জন্য প্রতিনিয়ত নিজ সত্ত্বার বিরুদ্ধে গিয়ে বিরক্তিকর প্রেমাস্পদ শব্দাবলী আওড়িয়ে স্ব-প্রতিভার বিরুদ্ধাচরণ করে যাচ্ছি। হ্যাজিটেশন আর কাকে বলে! ভাবতেই পারি না, আমি এখন বিয়ের কথা বলি। অথচ ঠিক এ সময় থেকে পেছনের ফেলে আসা যৌবনাবৃত সময়ে বিয়ের বিরুদ্ধে বলতে বলতে বন্ধুমহলে বিয়ে বিরোধী হিসেবে দারুণ পরিচিতি পেয়েছি। এখনতো চোখ বুঁজলেই একটি ঘোমটা পরা রঙে ভরা কৃত্রিম সুন্দর চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যা ভাবলেই বমি এসে মুখ জমে যেতো সোনা রঙা সে সময়ে।

সপ্তাহ টানা না খেয়ে থাকা ক্লান্ত নাবিকের হঠাৎ দ্বীপ খুজে পাওয়ার সুখের মতোই সুখী হয়েছিলাম কোন একসময়। যখন আমি সত্যিই পথভ্রষ্ট ছিলাম বা দিশায় ছিলাম না। দিব্যি নিজেকে সুখী ভাবতে শুরু করলাম। কয়েক মিনিটে এভারেস্ট জয়ের মতো আত্মবিশ্বাসী হয়ে অবস্থাদৃষ্টে মনে হওয়া অনেক অসাধ্য সাধন করেছিলাম। আজ সত্যিই বিস্মিত হই ওসব ভেবে। মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় .......ধ্যাততেরি! আমি স্পষ্ট বলতে চাই আমার কোন দোষ ছিলো না, যখন সে আমাকে স্রেফ জানিয়ে দিলো... আমি তোমার আগেও নেই পাছেও নেই! সেদিন আমার মোটেও অবাক হওয়ার কিছু ছিলো না, যদিও আমি ভাঙতে চেয়েছি প্রাণের সুখে। ভীষণ ভেঙেছিও, একেবারে নুয়ে পড়েছিলাম ভাঙতে ভাঙতে। আশ্চর্য অবিশ্বাসে অশ্রুপাত করেছিলাম নির্বিকার ভঙ্গিতে। নাহ আমার মোটেও তা উচিত হয়নি, মোটেই না। আমার উপলব্ধির মাঝে ছিলো শুভংকরের ফাঁকি। বুঝা উচিত ছিলো সদ্য পৃথিবীকে চেনার চেষ্টায় থাকা একটি বালিকার ভুল হবে পদে পদে। বুঝা উচিত ছিলো............. ইত্যাদি ইত্যাদি।

সবই ছিলো, যা অতীত। তবে আছে কি? যাকে বর্তমান ভাববো? ওরেব্ব্যাস! যা আছে তাও কম কিসের? দুনিয়াসুদ্ধ অবহেলার খঞ্জরাঘাতে সৃষ্ট কিছু মাটিরঙা দাগ কিন্তু পাজরটা ফেঁড়ে নিলেই দেখতে পারবে। কয়জনেরইবা এমন দাগ থাকে? আমার আছে বলে আমি ভাবি হয়তোবা জীবনের এই একটি দিক দিয়ে আমি কিঞ্চিত অভিজ্ঞ। বিষয়টিকে আমার বাবা যেভাবে দেখে আমি সেভাবে দেখতে পারি না। বাবাতো আমাকে বলেই দিয়েছে, টুসি তোকে এভাবে ছ্যাকা দিতে পারলো? আমি ছাক্যা বলি না। তাতে তৃপ্তি পাওয়া যায় না। তবে তৃপ্ত হওয়ার মতো কিছু খুঁজে বার করতে পারিনি।

অনেকদিন পর আবার আমার সাথে যোগাযোগ করে অনুশোচনায় গলাটাকে ভারী করার চেষ্টা করেছিলো। আমি বুঝলাম একটু পর কান্না করার চেষ্টাও করতে পারে। এটা যে তার জন্য খুবই কঠিন হবে, তা বুঝতে পেরে আমি রাগ ওঠিয়ে নিয়ে দুধের বাচ্চার মতো বলে দিলাম ‘খুবইতো ভালোবাসি, সত্যি বাসি!’ তার হাঁফ ছেড়ে বেঁচে যাওয়াতে আমিও দায়িত্ব পালন করার তৃপ্তিতে ভুগতে থাকলাম। একবেলা সময়ের কিয়দাংশ হলেও শিহরিত হয়েছিলো তাকে বুকে জড়ানোর কাল্পনিক সুখে অথবা স্বাস্থ্যবতী ঠোটগুলোর কেবল নড়াছড়াতেই। তাতেই আমার ঋণী হওয়ার কারণ ঘটে গেলো। ঋণ শোধের প্রয়াসে কলুর বলদ হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা জেনেও খোশ মেজাজেই তার জীবন্ত অভিনয়ের সমর্থনে আমিও তাকে ভেবে অযথা হাসতে জানি, মন খারাপ করতে পারি। এর চাইতেও বেশিভাবে কি মানুষ নষ্ট হতে পারে? অথচ বন্ধু মহলে সবসময় এমন একটা ভাব ধরে থাকি যে, আমার ব্যক্তিত্ব কি আর একটি মেয়ের হাতে জিম্মি থাকে! তারাও এমনভাবে তাকায় যে খুবই ব্যক্তিত্বশীল এক পুরুষের মুখোমুখি বসে আছে বা দাড়িয়ে আছে। আর ওইদিকে কতগুলো মেয়ের উচ্চকিত বলাবলি ‘ছেলেটা নিশ্চিত গোবেচারা টাইপের, কেমন গাধা বানাচ্ছি তাকে!’ এমন গাধার্থ বিশেষন স্ব-ইচ্ছায় বরণ করে নেয়ার মাঝে যদি বিন্দুমাত্র সুখও না থাকতো তবে কি আর আমি তা মেনে নিতাম?

ভালোই চলছিলো। প্রেম আর প্রেম। আমিতো প্রায়ই বৌ বলে ডাকি। আহারে... তার হাসিতে যে পাড়ায় পাড়ায় ডাক পড়ে, কতোই না কলরোল। আমিও খুব মুগ্ধ হতে শিখে গেছি। অভস্ত্য হয়ে গেছি শিহরণে। কিন্তু বাজিতে সে বোধ হয় হেরে যাচ্ছে। আবার তার মনের গতি ভিন্নধারায় প্রবাহিত হওয়ার প্রানান্তকর চেষ্টায় খালি বাঁক নিচ্ছে। আমিও কোমর পেঁছিয়ে নেমেছি নদীকে সাগরেই মেশাতে। আর কতো, হারতো মানতেই হবেই। খালি তাকে ফেরানোর চেষ্টায় থেকে ভরাপেট শূন্য করে আমি ক্ষুদার্ত হচ্ছি নির্বিবাদে। শক্তিহীণ হতে মোটেও দেরি নেই। আরে বাবা- আমি ক্ষুদাকেতো অস্বীকার করতে পারি না।

হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে সে এখন আমাকে বলে ‘এখানে খালি প্রেম আর প্রেম, সারারাত রুমমেটরা ছেলেদের সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত, প্রেমের অফার পেতে পেতে আমি ক্লান্ত, খুব ভয়ে আছি- যদি না আবার মন আমার মোড় নিয়ে নেয়, তবেতো সব শেষ’। সারারাত ধরে ভেবেছি। বিশ্বাস করুন, সারারাত খালি ভেবেছি কেন মোড় নেবে? আমারতো সবই ঠিকঠাক আছে। শরীরটা একটু স্বাস্থ্যহীণ হলেও যৌনভাবে সক্ষম আছি। চেহারাটাও আগের চাইতে ভালোই রোমান্টিক হচ্ছে বলে কলিগেরা বলে থাকে। তবে কেন তার এভাবে মোড় নেয়ার কথা আসে? তা কি শুধু দেহের জ্বালার জন্য? তবেতো সেই দেহের রহস্য আবিষ্কার করার দরকার হয়ে পড়েছে। দরকারী ভেবে সারা রাত জেগে এক্স রেটেড সাইটে নগ্ন নারীর দেহ দর্শনে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। একেকটা মডেলের দেহের ভাষার কাছে আমার রুচিবোধ জয়ী হতে থাকল স্বাভাবিকভাবেই। তবুও দেখছি আর ভাবছি, প্রতিটি মনের রাণীই যদি এমনটি ভাবতে থাকে তবে কষ্ট করে পাত্রী দেখে, লোক লাগিয়ে খবর নেয়ার কোন দরকার পড়ে না- মেয়েটা আদৌ সতী কি না! রাতে হাতে হাতে বদল হওয়া মেয়েদের শরণাপন্ন হওয়াই শ্রেয় এবং নিরখচায় শাদী মোবারক সম্পন্ন করা যায়।

তবুও তাকে জয়ী করার প্রচেষ্টায় আমার সততার কথা না ভাবলেই নয়। আমি বলছি না যে, শুধু তাকে জয়ী করতেই আমি এতো সময় ব্যয় করি না। এতো মহৎ হাতেম এখনো হতে পারিনি। সরল স্বীকারেই বলছি, তাকে নিয়ে দেখা সেই এক বালিশে ঘুমানোর স্বপ্ন আমার মাঝে ভালোই আন্দোলিত হয়। এখানেই আমি বেশ্যা হয়ে গেলাম আর সে হলো স্বাতী। তবুও অধিকতর সংশয় নিয়ে আমি নাখুশিই রইলাম। কারণ তার হাবভাব বলে সে বাজিতে জিততে পারবে না। অদূর কালেই সে মোড় নেবে আমার বাড়ির প্রধান ফটকের কিঞ্চিত দূরে ওই পথের বাঁকে এসেই।
দীর্ঘশ্বাসের উচ্চারিত একটা নষ্ট উক্তি আওড়াতে ভালোই লাগে ‘তুমি কি জয়ী হবে?’
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:১৭
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×