somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিসিআইসি কলেজ, আরেকটি প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়ন কারখানা, আরেকটি ক্ষয়িত ভাবমূর্তি

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

”আমার বউও আমাকে ষোলআনা দেয় না”, “ বল শারীরিক মিলনের মধ্য দিয়ে কিভাবে এইডস ছড়ায়” (এইচএসসি পাঠ্যক্রমে হুমায়ুন আহমেদের অপরাহ্ন গল্পটি দ্রষ্টব্য), “এমন জায়গায় মারব, কাউকে দেখাতে পারবি না”। বিদ্যায়তনে কত প্রকারে এবং কি কি উপায়ে যৌন নিপীড়ন সংঘটিত হতে পারে উপরের বাক্যগুলো সেটির ক্ষুদ্র বহি:প্রকাশ মাত্র। বিসিআইসি কলেজের অসংখ্য নারী শিক্ষার্থীর নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা এইসব (কেবলই কি বিসিআইসি কলেজ? নিশ্চয়ই নয়)। সম্প্রতি কথা হল বিসিআইসি কলেজের নিপীড়িত এমন দুই প্রতিবাদী নারী শিক্ষার্থীর সাথে। তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বিষয়টির সাথে সাথে সহজেই অনুমেয় যে এটি বিশেষ কোন ব্যাচ বা বছরের ঘটনা নয়। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। উচ্চপদ ও পুরুষালী ক্ষমতা/নিপীড়নের ঐতিহাসিকতা।

এই ধরণের কথোপকথন, বাপ-মা তুলে গালি দেয়া, তরুণী শিক্ষার্থীদের টেবিলের নিচে হেড বেন্ড করিয়ে রাখা, বেত মারা, ডাস্টার বেত ছুঁড়ে মারা এসবের মধ্যে যৌন নিপীড়নকে আইনগতভাবে চিহ্নিত করা কিংবা আরো জরুরী চেতনাগতভাবে উপলব্ধি করা; উভয়ই অপরাধী সন্ধানে/শাস্তি দানে যে ঘোলাটে পরিস্থিতির সাক্ষ্য বহন করে সেটা আসলে ব্যবস্থার/চর্চার সেই শিশ্নবাদীতাকে ইঙ্গিত করে যার ভাগিদার আমরা সবাই। এবং মানবাধিকার/আইনের বইগুলোতে যতটা মিহি সচেতনতা বা জোরালো শাস্তির কথাই বলা হোক না কেন চর্চায় যে নিপীড়ন বিদ্যমান তা এককালীন বা স্থানিক নয়।

বিসিআইসি কলেজের প্রতিবাদী নারী শিক্ষার্থীরা যারা এর প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছেন, বরাবরের মতই তারা পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার রোষানলে পড়েছেন। তারা কালো কাপড় মুখে বেঁধে প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ করেছেন। পত্রিকায় সেই খবর ছাপা হয়েছে। যেই শিক্ষক এই প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়েছেন তাকে ট্রান্সফার করা হয়েছে। একটি প্রহসনমূলক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল যা নিপীড়ক শিক্ষকদের পূর্বপদে বহাল রেখেছে আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কিছুই হয় নাই এই সম্মতি আদায়ের চেষ্টা করেছে। একজন শিক্ষিকা বলেছেন ‘তোমাদের মগজ ধোলাই করা তো তিন মিনিটের ব্যাপার’। অনুসন্ধান কমিটি যে প্রশ্নপত্র তৈরী করেছিল তাতে মূল আগ্রহ ছিল কারা কারা প্রেস ক্লাবের সামনে উপস্থিত ছিল সেটা বের করা, তাদের উপস্থিতির প্রমাণ পোক্ত করা। শিক্ষার্থীদের মাথায় কোরান দিয়ে বলা হয়েছে, ‘এইবার বল তোরা কে কে প্রেস ক্লাবে গিয়েছিলি’। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবমূর্তি রক্ষার খোলশে নিপীড়ককে উদ্ধার করার গল্পটা পূনরাবৃত হয়েছে কেবল এর চেয়ে ভিন্ন কিছু হয়নি।

সকল প্রকার নিপীড়নই যে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি যে কোন সময় যৌনাত্মক হয়ে উঠতে পারে সেটা উপলব্ধি করতে না চাওয়াটা চেতনার পুরুষতান্ত্রিকতার ফলাফল। প্রথাগত আইনও এই একই অবচেতনার পথেই হাঁটা দেয় প্রতিনিয়ত। একজন নারী যখন যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে হাজির হয় তখন আইন বা ব্যবস্থাপনার কাজ সেটাকে সত্য প্রমাণের নয় বরং অসত্য প্রমাণের। তদন্তের এইটাই লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। জাবির নিপীড়িত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তিনি নিপীড়িত হননি এটা প্রমাণ করা যায় নি; উল্টো নিপীড়ক শিক্ষককে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রচলিত ব্যবস্থাপনার তথাকথিত ভাবমূর্তি রক্ষার আড়ালে আসলে কাজ করে পুরুষ আধিপত্য বাঁচানোর এরকম শ্লোগান। ক্ষমতার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িতরা এই মতাদর্শকে নিজেদের পাঠ্যক্রম বলে মনে করেন। বিদ্যায়াতনে নিপীড়ন হয় এবং এই নিপীড়নকে বৈধতা দেয়া যখন ভাবমূতি রক্ষার বিষয় হয়ে ওঠে তখন পরিণামে সেটা ভাবমূর্তির ক্ষয়িত উপজাতকেই দেখিয়ে দেয়।

এই ধরণের পরিস্থিতিতে প্রতিবাদ করা যে কতটা দুরুহু তা লড়াইকারী প্রত্যেকের অভিজ্ঞতায় স্পষ্ট। কলেজ থেকে টিসি দিয়ে দেয়া, পাস করতে না দেয়া, নাম্বার কমানো, ক্লাসে প্রতিনিয়ত অপমান করা কি না। বিসিআইসি কলেজে গাউস, তপন, তাজুল, মিজান, বাদল এই নামগুলো দোর্দন্ড প্রতাপশালী নিপীড়কের নাম। এদের সহকারী সম্ভবত পুরো ব্যবস্থাপনা এমনকি পুরো সমাজ। এর প্রতিবাদও বহুদিন ধরে উচ্চারিত হয়েছে কিন্তু ভাবমূর্তির খোলশ আর বস্তুত পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোর বয়ানে প্রতিদিনকার এই ফ্যাসীজম বহাল থেকেছে। প্রতিবাদী স্বরকে টুঁটি চেপে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যারা প্রতিবাদী হয়েছেন উল্টো তাদের নির্মূল করা হয়েছে। বিদ্যায়তন সহ সমাজের প্রতিটি স্তরে এই লিঙ্গবাদী ফ্যাসীজম বন্ধ করা না হলে এটি কেবল শেকড়ই ছড়াবে আর আমরা ভাবমূর্তির ট্রফি হাতে একে অন্যকে সাধুবাদ জানাতে থাকব আর গর্বিত স্বরে বলব, জানিস জানিস আমাদের প্রতিষ্ঠানে কিন্তু কোন যৌননিপীড়ন হয় না, এর সবকিছু ঐখানে হয় (যেমন জাবি, যেমন বিসিআইসি), কি খারাপ বল।
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×