somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্ষার বাউরে বিলীন সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের গ্রাম

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

''আশ্বিন মাইয়া (মাসের) বাউরে, (বাউরী বাতাস) ও পুতরে না যাইও হাওরে''। হাওর অঞ্চলের সংগ্রামী মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই প্রবচন। এতে মা ও পুত্রের ভালোবাসার বহিপ্রকাশ ঘটলেও হাওর অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবনেরই অংশ। রাতে যখন হাওরে বাউর (বাউরি বাতাস) বয় তখন বিপন্ন হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের লাখ লাখ মানুষ। বাবা শা’জলাল-শারফিনের দোহাই দিয়ে সন্তান সন্ততি কোলে কাদে নিয়ে তারা বেড়িয়ে পড়ে ঘর থেকে। নিজেদের বসত ভিটা রার জন্য আল্লা-রসুলের পাশাপাশি আউলিয়াদের নামেও কোরাস কণ্ঠে দোহাই দেয়। বর্ষায় হাওর ভয়ংকর বাউরে বিুব্দ সাগরের রূপ নেয়। বিুব্দ আফাল (প্রলয়ংকরী ঢেউ) আছড়ে পড়ে মানুষের বসত ভিটায়। ভেঙ্গে নেয় বসত ভিটা। দেবে যায় ঘরবাড়ি। যুগ যুগ ধরে এভাবেই হাওরের বাউরের সাথে যুদ্ধ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের লাখ লাখ মানুষ।
বর্ষায় সুনামগঞ্জের হাওর বেষ্টিত প্রায় শহস্রাধিক গ্রামের লোকজন বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিগত সময়ের প্রলয়ংকরী বন্যায় প্রায় শতাধিক গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। বিভক্ত হয়ে গেছে অর্ধ শতাধিক গ্রাম। ১৯৮৮ সালের বন্যায় তাহিরপুর উপজেলার দণি শ্রীপুর ইউপির মারালা গ্রামটি হাওরের ঢেউয়ে ভেঙ্গে তিন খন্ড হয়ে গেছে। বাউরে ভিটা ভেঙ্গে যাওয়ায় গ্রামটি বর্তমানে ছোট হয়ে তিন খন্ড হয়ে গেছে। এই সময় গ্রামের প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার ভিটামাটি হারিয়ে অন্যত্র সরে গেছে। পার্শবতী মদক গ্রামটিও চিরতরে বিলীন হয়ে গেছে। মদন গ্রামটি কেবল স্মৃতিতেই বেচে আঁছে। চলতি বন্যায়ও তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধরমপাশা, শাল্লা, দিরাই উপজেলার প্রায় সহশ্রাধিক কাচাঘরবাড়ি ও ভিটা তিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের হাওরপাড়েরর মানুষের কাচা ঘরবাড়ি প্রায় নব্বই ভাগ। বর্ষায় অধিকাংশ কাচা ঘরবাড়িই তিগ্রস্ত হয়। হাওরের বাউরে ভেঙ্গে নেয়। আবার পানি কমার সাথে সাথে দুর্ভোগে পড়ে লোকজন। তখন পানির টানের সাথে ঘরবাড়িও নিচে নেমে যায়। অনেকেরই কাচা ঘরবাড়ি তখন ভেঙ্গে পড়ে। এবারের বন্যায় তাহিরপুর উপজেলার ছিলাইন, জয়পুর, গোলাবাড়িসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় শতাধিক কাচা ঘরবাড়ি ভিটাসহ ব্যাপক তিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের ফুলভরি, বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের ঘরবাড়িও তি গ্রস্ত হয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলার মশলঘাট, বেহেলি গ্রামেরও অনেক কাচা ঘরবাড়ি তিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষায় এভাবে হাওরের বাউরে হাওর এলাকার কাচা ঘরবাড়ি বসতভিটা বিলীন হলেও এ গুলো রার জন্য সরকারের প থেকে কোনও উদ্যোগ নেয়া হযনি। তবে স¤প্রতি কয়েকটি এনজিও ফাড প্রটেকশন প্রজেক্টের মাধ্যমে হাওর পাড়ের গ্রাম গুলোকে বাউরের কবল থেকে রার জন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বম্বরপুর, শাল্লা ও জামালগঞ্জের কিছু এলাকার গ্রাম গুলোকে এই প্রজেক্টের আওতায় এনে ইট দিয়ে বেষ্টনী দেয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় গ্রামের চতুরদিকে বৃ লাগানো হয়েছে।
জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার মশলঘাট গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক ছুরত জামান বলেন, ইবার বন্যায় আমরার গ্রামে খতি অইছে বেশি। আমার ঘরে ইটের গাথনি ছিল। ইবারের বাউরে আমার ইটের গাথনিও ভেঙ্গে গেছে। মারালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক কামাল উদ্দিন বলেন, এখন অল্প বাউরেই গ্রাম গুলো তিগ্রস্থ হয়। কারণ বাড়ির ইড়ে (আঙ্গিনায়) বিভিন্ন প্রজাতির বন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন বেড়া দেয়ার জন্যও বন মিলেনা। আগে হাওরে প্রচুর বন থাকলেও বিলের ইজারাদাররা অবাধে কেটে উজার করে ফেলছে। ওই গ্রামের কৃষক হারিছ আলী বলেন, বাউরের তান্ডবে প্রতি বছর তার বাড়ি ভেঙ্গে যায়। প্রতি বছর আবার মাটি কেটে ভিটা তৈরী করেন। এভাবেই তিনি সংগ্রাম করে বেচে আছেন। একারণেই হাওরপাড়ের গ্রাম গুলো দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। বসতভিটা হারানো লোকজন শহরের বস্তিতে এসে ঠাই নেয়।

৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×