somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসার অনন্য রূপ

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ওদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। ওরা মানে নীতু এবং শিমুল। মনের মধ্যে তীব্র আনন্দ বিরাজ করলেও একটা গভীর দু:খে ছেয়ে আছে ওদের মন। ওদের মনে পড়ে যায় গত বছর এই দিনগুলোতে কি কান্ডটাই না ঘটিয়েছিল ওরা। পরিবারের তীব্র বাঁধা উপেক্ষা করে ঘর ছেড়ে পালিয়ে এক অজানা সুখের বাঁধনে আবদ্ধ হয়েছিল ওরা। পরিণাম- বাসায় আর কোন দিন ফিরতে না পারা।
উপায় না পেয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চলে আসে ঢাকা শহরে। শিমুল নীতুকে নিয়ে এক বন্ধুর বাসায় ওঠে। বন্ধুকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। বন্ধু ওকে অভয় দিয়ে বলে, যতদিন তুই একটা ব্যবস্থা করতে না পারিস ততদিন নিশ্চিন্তে আমার এখানে থাকবি। কোন সমস্যা নেই। একেবারে দু:শ্চিন্তা করবিনা। আর দেখি তোর জন্য কোন চাকরির ব্যবস্থা করা যায় কিনা। শিমুল কিছুটা আশ্বস্ত হয়। নীতুর মধ্যে খানিকটা অস্বস্তি থাকলেও বাস্তবতাকে মেনে নেয়ার চেষ্টা করে।
এর কিছুদিনের মধ্যেই শিমুল একটা কাজ পেয়ে যায়। গেট দারোয়ানের চাকরি। বেতন তিন হাজার টাকা। বাড়ির মালিক খারাপ না। ভালই তার ব্যবহার। ছয়তলা বাড়ি। বাড়িঅলা থাকে তিনতলায়। বাকি ফ্লোরগুলো সব ভাড়া দেয়া। এদিকে নীতুও গার্মেন্টসের কাজে যোগ দেয়। মাসে দেড় হাজার টাকা পায়। বাড্ডাতে একটি ছোট রুম ভাড়া নেয়। ভাড়া দুই হাজার টাকা। শুরু করে নতুন জীবন সংগ্রাম। যেখানে আছে আনন্দ, আছে অর্থকষ্টের বেদনা। এভাবেই ওদের দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে যায়।
এতক্ষণ ওরা এসব স্মৃতিরোমন্থন করছিল । দুজনেই বিছানায় শুয়ে আছে। ফাঁকে ফাঁকে একে অপরকে আদর করছে। ওদের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও টাকার অভাবে ওদের ইচ্ছাগুলো শুধু ইচ্ছাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তবায়নের ধারে কাছেও যেতে পারেনা। শিমুল হঠাৎ করে ঘড়ি দেখে। বাজে ৮টা। ওর ডিউটি শুরু হবে সাড়ে আটটায়। তাড়াতাড়ি নীতুর ভালবাসার আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। জামাকাপড় পড়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে হাটাঁ শুরু করে।
এদিকে নীতু সিদ্ধান্ত নেয় আজ সে আর গার্মেন্টসের কাজে যাবেনা। সারাদিন বাসায় থাকবে। ওর মনটা খচখচ করতে থাকে। আজ ওদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। কিন্তু ওকি কিছুই দিবেনা শিমুলকে? শুধুই কি আদর? আর কিছুনা? না, ও আজ শিমুলকে একটা সারপ্রাইজ দিবে। শিমুলকে বুঝিয়ে দিবে ওর জন্য নীতুর ভালবাসা কত তীব্র। কিন্তু কিভাবে দেবে সারপ্রাইজ? ওর কাছে তো এক্সট্রা কোন টাকা নেই। দুজনের যা আয়, তা দিয়ে কোন রকমে দিন চলে যায় ওদের। তার উপর ঘরে নতুন অতিথি এলে কীভাবে জীবন নির্বাহ করবে সেই দুশ্চিন্তাও ওর মনে আঘাত করে। নীতু কোন কিছুই ভেবে পায়না।
বাথরুমে যায়। অনেকক্ষণ ধরে গোসল করে। চুল মুছতে মুছতে বের হয়। আয়নার সামনে দাড়িয়ে ফ্যানের বাতাস দিয়ে চুল শুকাতে শুরু করে। চুল দেখতে থাকে খুটিয়ে খুটিয়ে। ওর এত সুন্দর লম্বা চুলই শিমুলের সবচেয়ে বেশি পছন্দ। কোন কিছুর অজুহাতে শিমুল সবসময় ওর চুল ধরবেই। হঠাৎ ওর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়। ও কার কাছেই যেন শুনেছে যে গুলশানের বিউটি পার্লারগুলোয় নাকি চুল বিক্রি করে টাকা পাওয়া যায়। ও সিদ্ধান্ত নিল চুল বিক্রি করবে। তা থেকে যা পায়, তা দিয়েই শিমুলকে একটা সারপ্রাইজ দিবে।
এদিকে শিমুল বাসার নিচে বসে আছে। ওরও একই চিন্তা। নীতুকে একটা সারপ্রাইজ দিতে হবে। কিন্তু কিভাবে? ওর কাছেও তো এক্সট্রা কোন টাকা নেই। আজ সে তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার জন্য উন্মুখ। অথচ আজ যেন সময় ফুরাতেই চায়না। বারবার ঘড়ি দেখে। হঠাৎ ও ঘড়িটার দিকে একটু অন্যভাবে চায়। এই ঘড়িটাই ওর ব্যবহার্য একমাত্র দামি জিনিস। এর দাম আড়াই হাজার টাকা। ওর এক বন্ধু অনেক আগে সৌদিআরব গিয়েছিল। সে এটা ওকে গিফট করেছে। শিমুর এবং নীতুর- দুজনের কাছেই ঘড়িটা বেশ প্রিয়। শিমুল বিশেষ যত্ন নেয় ঘড়িটার যাতে কোন দাগ না পড়ে। ঘড়িটা এখনো অনেক সুন্দর। ও চিন্তা করে যে ঘড়িটাই সে বিক্রি করবে। ও ভাবে এত সুন্দর একটা ঘড়ি ওর মত গেটদারোয়ানের হাতে মানায়না। তার চেয়ে বরং এটা বিক্রি করে নীতুকে একটা চমৎকার সারপ্রাইজ দেয়া যাবে।
ডিউটি শেষ করেই শিমুল ঘড়িটা বিক্রি করতে ছোটে। বিক্রি করার পরই সে সিদ্ধান্ত নেয় নীতুর সুন্দর চুল যাতে আরো সুন্দর লাগে এজন্য দামি একটা শ্যাম্পু কিনবে। যেই ভাবা, সেই কাজ। চলে যায় গুলশানের নাভানা টাওয়ারে। আটশ টাকা দিয়ে একটা বিদেশি সানসিল্ক শ্যাম্পু ক্রয় করে। আর চুলকে সজ্জিত করার জন্য কিছু ফ্যান্সি ক্লিপ।
শিমুল বাসায় চলে আসে। মনে ফুরফুরে আনন্দ। এসেই নীতু নীতু বলে জোরে চিৎকার করে ডাক দেয়। মনের আনন্দে গান গাইতে থাকে। নীতু তখন বাথরুমে গোসল করছে। শিমুলের ডাক শুনে দ্রুত বের হয়ে আসে। ওর মাথা গামছা দিয়ে ঢাকা। ওকে দেখেই শিমুল আনন্দের সাথে বলতে লাগল, এই যে কেশবতী নারী, দেখো, তোমার কেশকে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করার জন্য কি নিয়ে এসেছি। শিমুলের হাতে শ্যাম্পু দেখে নীতু একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। শিমুল দেখে নীতুর মুখমন্ডলে আনন্দের কোন ছোয়া নেই। ও সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে ওর মাথার গামছা ধরে টান মারে। একি! শিমুল একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যায়। নীতু ওকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। এবং ওর চুল বিক্রির টাকা দিয়ে কেনা একটা চমৎকার পাঞ্জাবি ওর হাতে দেয়। হাতে দেয়ার সময় দেখে শিমুলের হাতে ঘড়ি নেই। একি তোমার ঘড়ি কোথায়? শিমুলও সব ঘটনা খুলে বলে।
নিজেদের ঘটানো ঘটনাগুলো দেখে দুজনেরই চোখেমুখে বিস্বাদের ছায়া ভেসে ওঠে। দুজন দুজনকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে একি করল! পরক্ষণেই হেসে ওঠে নীতু। হাসতে হাসতে বলে, এই হল আমাদের ভালবাসা!!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×