somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অষ্ট্রেলিয়ার জাতীয় নির্বাচন! কোন মার্কা’র ব্যবহার নেই!

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ভোট কেন্দ্রে গেলাম। না! আমি অষ্ট্রেলিয়ার ভোটার নই! বাংলাদেশেরই ভোটার! নিজের দেশের নাগরিকত্ব ধরে রাখতে সম্মান বোধ করি। কিন্তু এদের ভোটের ব্যাপার-স্যাপার দেখতে যেতে তো আর দোষ নেই! আর এখানে ভোটকেন্দ্রের একেবারে ভীতর পর্যন্ত যে কেউ যেতে পারে। ডেকে জিজ্ঞাসাও করবে না কেউ!
জাতীয় ভোট কিন্তু ভোট কেন্দ্রের ভিতরে না যাওয়া পর্যন্ত বোঝারই উপায় নেই যে আজকে ভোটের দিন! ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের রাস্তায় জনা ছয়েক লোক দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার নির্দেশিকা সম্বলিত ফ্লায়ার বিলি করছে! এরা বিভিন্ন দলের ভলান্টিয়ার! কোথায়ও কোন পুলিশ, সিকিউরিটি গার্ড, কেউ নেই। আর এদের আর্মি তো শুধু বহিঃশত্রুর আক্রমণ রক্ষায় এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
আর একটা ব্যাপার খুব চোখে পড়ার মতো! এদের নির্বাচনে কোন মার্কার বালাই নেই। ব্যালট পেপারে শুধু প্রার্থী এবং পার্টির নাম থাকে। পোষ্টার নেই, ব্যানার-ফেস্টুন নেই। নেই কোন নাচা-নাচি ফালা-ফালি। ভোটাররা আসছে, ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছে। তবে ভোট কেন্দ্রে ভীড় আছে বেশ।
ভোট দেখার ইচ্ছাটা ছিল তাই ভোটকেন্দ্রে যাওয়া! স্কুলের বড় একটা হলরুমকে ভোটকেন্দ্র বানানো হয়েছে এখানে। লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম ভিতরে ঢোকার জন্য। হলরুমটায় ঢুকেই দেখলাম রুমের একেবারে শেষ মাথায় লাইন দেওয়া অনেকগুলো ছোট ছোট কাউন্টারের মতো করা! না! কোন দরজা বা পর্দা নাই! শুধু একজনের লেখা যাতে অন্যজন দেখতে না পারে সেভাবেই শক্ত বোর্ডকাগজ দিয়ে বেড়ার মতো দিয়ে কাউন্টারগুলো তৈরী করা হয়েছে। সামনে দেখলাম বেশ কয়েকটা ভোট বাক্স! ভোট বাক্সগুলোও কাগজের তৈরী। মোট তিন ধরণের ভোট বাক্স রাখা হয়েছে। প্রত্যেক ভোটারকে দুইটা করে ভোট দিতে হবে। একটা প্রাদেশীক ভোট যেটাকে এরা বলে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস। অন্যটা এমপি ভোট যেটাকে এরা বলে সিনেট ভোট। অনেক দেশে প্রাদেশিক এবং জাতীয় নির্বাচন আলাদাভাবে হলেও অষ্ট্রেলিয়ায় বরাবরই দুই ভোট একসাথেই হয়। অষ্ট্রেলিয়ার নির্বাচন কমিশনের আরেকটা নিয়ম হচ্ছে ভোট হবে অবশ্যই শনিবারে! শনিবার এদের ছুটির দিন তাই সবাই ভোট দিতে আসতে পারে। ভোট দেয়া এখানে বাধ্যতামূলক। কোন ভোটার ভোট না দিলে তার জবাবদিহি করতে হয়, শাস্তিরও বিধান আছে।
হলরুমের ভেতরে বেশ কয়েকটি টেবিল। সেখানে নির্বাচন পরিচালনাকারী লোকজন কাজ করছে। প্রত্যেককে দুইটি করে ব্যালট পেপার দিচ্ছে তারা। প্রাদেশীক ভোটের ব্যালটটা বেশ ছোট। প্রাদেশীক ভোটে পাশ করা খুব কঠিন। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট প্রাদেশীক আসনে যাদের জেতার সম্ভাবনা প্রবল সেই সব দলই সেখানে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। যেমন আমার এলাকায় প্রধান বিরোধী দল লিবারেল পার্টির কোন প্রার্থী নেই। যদিও তারা এবার ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশী। কিন্তু যেহেতু তারা মনে করেছে এই সিটে তাদের জয়ের কোন সম্ভাবনা নেই, তাই তারা প্রার্থী দেয়নি। এবং এটাই স্বাভাবিক এখানে। শুধু শুধু কোন দল প্রার্থী দেয়না যদি না তাদের প্রার্থী প্রতিযোগীতা করতে না পারে।
একজন অষ্ট্রেলিয়ান ভোটার সে অষ্ট্রেলিয়ার যেখানেই থাকুক না কেন সেইখানকার যে কোন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তার নিজস্ব আসনের প্রার্থীর জন্য ভোট দিতে পারেন। অন্য এলাকার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে এই ভোটদানকে তারা এবসেন্ট ভোট বলে। প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে তাই তিন ধরণের ভোটবাক্স রাখা আছে, একটা প্রাদেশীক ভোটের জন্য, দ্বিতীয়টা এমপি ভোটের জন্য এবং তৃতীয়টা এ্যাবসেন্ট ভোটের জন্য। এ্যাবসেন্ট ভোটার তার দুটো ভোটই একটি খামের ভিতর ঢুকিয়ে এ্যাবসেন্ট বাক্সে ফেলে দেয়। পরে নির্বাচন কমিশনের লোকজন এ্যাবসেন্ট ভোটারদের ভোটগুলো ব্যালটে উল্লেখিত এলাকাসমূহে পাঠিয়ে দেয়।
এখানে ব্যালটে সীল বা টিপ দেওয়ার কোন বিষয় নেই। ব্যালটে ভোটারের নাম, ঠিকানা লিখতে হয়। প্রাদেশিক ব্যালটে প্রার্থীদের নামের পাশে বক্স দেয়া থাকে। পছন্দমতো প্রার্থীর নামের পাশের বক্সে সংখ্যা লিখে দিতে হয়। এমপি ভোটের ব্যালট পেপার খুবই লম্বা, অসংখ্য প্রার্থী। এমপি ব্যালটের দুটি ভাগ। উপরের ভাগে পার্টিগুলোর নাম এবং নিচেয় প্রার্থীদের নাম থাকে। ভোটারকে যে কোন একটি অংশ ব্যাবহার করতে হবে। সে কোন পছন্দের পার্টিকে ভোট দিতে পারে বা পছন্দের প্রার্থীকে।
কত পার্থক্য! বাংলাদেশে আমরাও নির্বাচন করি! আর এখানে অষ্ট্রেলিয়ায় এরাও নির্বাচন করে! কবে যে আমরা দেশকে সভ্য-মানবিকতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবো??
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×