somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হরর/কমেডি সিনেমা, ভিডিও গেমস, ইংলিশ ফুটবল: একটি জাতিকে বিচার

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হরর/কমেডি সিনেমা, ভিডিও গেমস ইংলিশ ফুটবল ইত্যাদির জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে নিশ্চয়ই একটি জাতিকে নিরপেক্ষভাবে বিচার করা যায়না, কিন্তু কিছু বৈশিষ্ট্য বা প্রবণতাকে তো চিহ্নিত করা যায়ই।

আমি বলছি মালয়েশিয়ার কথা। এখানে সিনেমা ও টেলিফিল্ম বা টেলিসিরিয়াল হিসেবে হরর ও কমেডি জঁরা সবচাইতে জনপ্রিয়। কিংবা বলা যায় এই দুই জঁরার জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। এখানে প্রতিবছর প্রায় ১৫টির মতো সিনেমা নির্মিত হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক থাকে হরর ও কমেডি ছবি। সিনেপ্লেক্সগুলোতে যখন মালয়, ইংরেজি, হিন্দি, তামিল বা চীনা ভাষার ছবি পাশাপাশি চলে, সেখানে অন্তঃত একটা হরর বা একটা কমেডি ছবি থাকবেই। টেলিভিশনের প্রাইম টাইমে দেখা যায় ভূত-প্রেতের সিরিয়ালের ছড়াছড়ি। কমেডি নামে হাস্যরসের প্রাণান্ত প্রচেষ্টাও প্রাইম টাইম দখল করে রাখে। আমি অবাক হই।

আর দেখা যায় সাইবারক্যাফেগুলোতে শতশত কম্পিউটারের সামনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের বয়েসী ছেলেরা ভিডিও গেমস খেলছে। সাইবারক্যাফে বলতে আমার ধারণা ছিল যেখানে ইন্টারনেট সার্ফিং করা হয়। কিন্তু এখানকার সাইবারক্যাফেতে দেখা যায় ওয়েব ব্রাউজিংয়ের চাইতে কম্পিউটারগুলো বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে গেমস খেলতে। এরকম প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষদের ভিডিওগেমসপ্রীতি দেখে আমি বিস্মিত হই।

মালয়েশিয়া ব্যাডমিন্টনে এবারের অলিম্পিকে রূপা পেয়েছে, হকি বিশ্বকাপেও নিয়মিত অংশ নিয়ে থাকে। কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তানের পরই এশিয়ায় মালয়েশিয়া একটি হকি-শক্তি। কিন্তু এখানে সবচাইতে বেশি জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। আরও ভালভাবে বলতে গেলে ইংলিশ ফুটবল। সন্ধ্যার সময় রেস্টুরেন্টগুলোতে বিশাল সব স্ক্রিনে চলে ইংলিশ ফুটবলের প্রদর্শনী। খাবারের জন্য মুখ হাঁ-করা বন্ধ রেখে মানুষ হাঁ করে রুনির খেলা দেখে। আমি আশ্চর্য হই।

আমি তখন আমাদের দেশের সঙ্গে তুলনা করতে বসি। এবং পার্থক্য দেথে অবাক হই। আমাদের দেশে বা ভূ-ভারতেও হরর বা কমেডি এরকম জনপ্রিয় হতে পারেনি কখনোই। হলিউডে হরর বা কমেডি শক্তিশালী ধারা, কিন্তু তা কখনোই অন্যান্য মূল জঁরাকে অতিক্রম করতে পারেনি। বলা যায় হরর বা কমেডি সবকিছুর মধ্যে সবচাইতে নন-সিরিয়াস দু'টি জঁরা। বয়ষ্ক, ম্যাচিউরড বা সিরিয়াস লোকে এগুলো তেমন দেখেনা। বা দৈবাৎ দেখলেও তার কাছে প্রধান হয়ে উঠেনা। তারচয়ে বরং এ্যাকশন, রোমান্টিক সিনেমা আমাদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক বা নিরীক্ষাধর্মী আর্ট ফিল্মও আমাদের দেশে বেশ সমাদর পেয়ে থাকে।

কারণ বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যাবে মালয়েশীয়রা ভূত-প্রেত ভালোমতোই বিশ্বাস করে। 'হানতু'র ভয়ে তারা মোটামুটি সন্ত্রস্ত থাকে, এবং তার শাপ থেকে মুক্ত থাকতে তারা কোরান-হাদিসে আশ্রয় খোঁজে। আমি একদিন এক সিরিয়ালশেষে দেখলাম, একজন মাওলানা টাইপ লোক কোরানের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে এইসব অশুভ শক্তি থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে তার বয়ান করছেন। আসলে মালয়েশীয়রা সভ্যতার সংস্পর্শে এসেছে খুব বেশি দিন হয়নি। এখন তারা এশিয়ার একটি অর্থনৈতিক পরাশক্তি হলেও তারা এক-দুইশো বছর আগেও বনে-জঙ্গলে-পাহাড়ে বসবাস করতো, ফল-মূল খেয়ে জীবনযাপন করতো। ব্রিটিশরা এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদের খবর পেয়ে নানা ধরনের স্থাপনা গড়তে শুরু করে, টিন ও রাবার চাষ শুরু করে, শ্রমিক হিসেবে চীনা ও তামিলদের আমদানি করে, নগরের বিকাশ হতে থাকে। তখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া একটি অনাধুনিক রাষ্ট্রই ছিল। মূলত মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বই মালয়েশিয়াকে আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করে। কিন্তু সদ্য জঙ্গলজীবন ছেড়ে আসার কারণে কুসংস্কারগুলো মন থেকে দূরীভূত হয়নি। মানসিক ম্যাচিউরিটিরও ঘাটতি দেখা যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। আত্মমর্যাদাবোধও বিকশিত হয়নি অনেকক্ষেত্রে। টোটালিটেরিয়ান শাসনব্যস্থার কারণে, যা মাহাথিরেরই প্রবর্তিত, মানসিক সব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশও স্বাভাবিক নয়। যথেষ্ট পরিমাণে মুসলমান হবার পরও তাই ইরাক আক্রমণ হলে এখানকার সাধারণ মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করেনা। পুঁজিবাদ ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকায় বিশ্বরাজনীতির ঘাত-প্রতিঘাত তাদের স্পর্শ করেনা। মানুষগুলো দেখে মনে হয় ডান্ডা খেয়ে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া একেকটি শান্ত-নিরীহ মানুষ। জাতিগত বৈষম্য আছে, কিন্তু বৈষম্যের শিকার সংখ্যালঘিষ্টদের ক্ষোভের তেমন কোনো প্রকাশ নেই। অন্যের সংস্কৃতি, শিক্ষা, ক্রীড়া নিয়েই তাই তাদের মাতামাতি।

আমার মনে হয় কেবলমাত্র অপরিপক্ব মানসিকতাই হরর/কমেডি সিনেমা, ইংলিশ লিগ, রেসলিং, ভিডিও গেমসের মতো বস্তুর কাছে বাঁধা পড়তে পারে।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:০০
২৬টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×