আমাদের চাওয়ার শেষ নেই । আর সুনির্দিষ্ট কোন বিষয়ে চাওয়া যখন তার স্বাভাবিক সীমা ছাড়িয়ে যায় তাকে তখন আসক্তি বলা হয়। আরো বলতে পারি কোন কিছু পাওয়া যখন আমাদের মন ভরাতে পারে না , তৃপ্ত করে না বরং সেই জিনিসই আরো চাওয়ার জন্য অস্থিরতা সৃষ্টি হয় । তা আসক্তি। খুব সাধারন উদাহরন ধরুন – খানাদানা। আমরা কোন খাবারের প্রতি যখন অতিমাত্রায় আগ্রহী হই এবং সেটা বারবার গ্রহন করি সেটা তখন আসক্তির পর্যায়ে পরে । যে কোন প্রয়োজন সাধারনভাবে কল্যাণকর । কারন প্রয়োজন সৃষ্টি না হলে আমরা তা পূরনের জন্য সচেষ্ট হই না । কিন্তু আসক্তিতে প্রয়োজন তার সীমা ছাড়িয়ে অকল্যানের ঘরে অবস্থান করে। আসক্তি সাধারনভাবে অকল্যানকর । আমরা কত কিছুতে ই আসক্ত হই তা দেখুন :
খাবারে আসক্তি- প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া।
পোশাকে আসক্তি – অনেক থাকার পরেও আরো পোশাক কেনার ও সংগ্রহের বাতিক।
টাকার বা সম্পদের প্রতি আসক্তি – দুর্নীতিবাজদের দিকে তাকালে এর উদাহরন পাবেন।
নেশায় আসক্তি – সকল নেশাই আসক্তির পূর্নরূপ।
বিনোদনে আসক্তি – বর্তমান যুগের টিভি, ডিসের সামনে অহেতুক বসে থাকা ।
ইন্টারনেট আসক্তি – এটা আধুনিকতম আসক্তির নাম।
নর, নারীতে আসক্তি
আলস্য , অতি ঘুমে আসক্তি
ক্ষতিকর আড্ডায় আসক্তি
.......ইত্যাদী বহু আসক্তি আপনি চিহ্নিত করতে পারবেন। এখন কথা হলো সকল আসক্তিই কি ক্ষতিকারক? সাধারন উত্তর : হ্যা। কারন আসক্তিতে আপনি আপনার স্বাভাবিকতাকে হারিয়ে ফেলেন। আকাঙ্খা থাকবে, কিন্তু আসক্তি থাকবে না – এটাই স্বাভাবিক হওয়া উচিত । আপনার জুতার প্রতি খুব সখ। আপনি বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা কিনতেই থাকলেন । ঘর ভরে ফেললেন জুতা দিয়ে। আপনার শাড়ীর সখ। দুটো আলমিরা বোঝাই শাড়ী । বাজারে গেলেই আরো নতুন কিনতে থাকেন। টিভিতে কোন সিরিয়াল একদিন না দেখলে আপনার জীবন বৃথা মনে হয়। বাসায় ফিরে টিভি নিয়ে বসেন ,রাত বারোটায় রিমোট হাত থেকে ছাড়েন ।এগুলো কি ক্ষতিকারক নয়? আপনার সাধারন বিচার বুদ্ধিতে কি বলে? যতধরনের অপচয় মানুষ আসক্তির কারনে করে তা কি আপনি হিসাব করেছেন । গৌতম বুদ্ধ দীর্ঘ সাধনার পরে দু:খের কারন আবিস্কার করতে গিয়ে বলেছেন :
দু:খ আছে, দু:খের কারন আছে, দু:খের কারন আসক্তি ।
আসলেই আমাদের সকল দু:খের কারন অনুসন্ধান করতে গেলে দেখবেন তা হচ্ছে আসক্তি । তাহলে এখন আসক্তি থেকে কিভাবে মু্ক্ত থাকতে পারবেন? এখনই কাগজ কলম নিয়ে বসে যান:
১। আপনার জীবনে আসক্তিগুলোকে চিহ্নিত করুন। সেগুলোর একটা লিস্ট তৈরী করুন।
২। আসক্তিগুলো আপনার কিভাবে ক্ষতি করছে তা পাশাপাশি লিখুন।
৩। সেগুলো কিভাবে দূর করতে পারেন –তার উপায় আবিস্কার করুন। যেমন: আজ একঘন্টা টিভি কম দেখে বই পড়তে পারেন বা কিছু লিখতে পারেন।
আসলে জীবনকে দু:খময় করার জন্য মানুষের নিজের অভ্যাসই দায়ী। অতিরিক্ত আকাঙ্খা মানুষকে আসক্তির দিকে নিয়ে যায় এবং দু:খে নিমজ্জিত করে।
আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরানে বলেছেন :
--অপরের চেয়ে অধিক সুখ সম্পদ লাভের আকাঙ্খাই মানুষকে আজীবন মোহাচ্ছন্ন করে রাখে , যতক্ষন না সে কবরে উপনীত হয় । --সুরা তাকাছুর: ১-৩
আসুন আমরা আমাদের জীবনকে দু:খমু্ক্ত করে গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট হই। সকল আসক্তি বর্জন করি এবং অনন্য মানুষ হবার পথে অগ্রসর হই ।
ধন্যবাদ।আগামীকাল আবার দেখা হবে।