somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোজা ১৭: তওবা বা ফিরে আসা

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লক্ষ করুন আমি তওবার সাথে সমার্থক শব্দ হিসাবে ফিরে আসা কে ব্যবহার করেছি। আসলে তওবা এমন একটি শব্দ যা অনেক সময় আমাদেরকে বিকর্ষন করে। আমরা এটাকে কঠিন ধর্মীয় বিষয় মনে করি এবং ভাবি –আচ্ছা ঠিক আছে, দেখা যাবে..। কিন্তু ধর্ম বর্ণ নির্বেশেষে, আমি মনে করি তওবা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি বলবেন, সেটা কেমন, তওবা তো মুসলমানদের জন্য। না, আসলে তওবা মানে হচ্ছে নিজের ভুল স্বীকার করে সৃষ্টিকর্তার কাছে মাফ চাওয়া। এবং এটা সবার জন্যই প্রযোজ্য। আমরা তো প্রতিনিয়ত আমাদের চলার পথে নানারকম ভুল করে থাকি । মানুষ মাত্রেই ভুল করে। এবং সেই ভুলের কারনে সে ভুক্তভোগী হয় কিন্তু নিজেই । আমাদের প্রতিটা ভুলেরই একটা সাধারন প্রতিক্রিয়া হয় আমাদের মধ্যে। আমরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের কোন ভুল স্বীকার করতে চাই না। যে কোন একটা ভুলের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিক্রিয়া কি হয়?
: আমরা আমাদের সেই ভুলকে স্বীকারই করি না।
: ভুলকে স্বীকার করলেও সেটাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করি ।
: ভুলকে স্বীকার করি কিন্তু সেজন্য অনুতপ্ত হবার প্রয়োজন মনে করি না।
আমরা আমাদের যে ভুলগুলোর কথা বলছি তা সাধারন মানবীয় ভুল নয় । সাধারনত যা অপরাধ বা যা আমার জন্য করা মানুষ হিসাবে যুক্তিযুক্ত নয় সেগুলোর কথা বলছি। আপনি বাজারে গিয়ে একটা জিনিস কিনতে ভুলে গেলেন – এটা কোন অপরাধ নয় । কিন্তু আপনি একজন লোকের সাথে উদ্ধত আচরন করলেন, কিংবা আপনি কারো টাকা মেরে দিলেন বা আপনি কাউকে জেনেশুনে ঠকালেন এটা অপরাধ। এবং এই সকল অপরাধের জন্য আমাদের ক্ষমা চাইতে হয়। মানুষ এই ধরনের অপরাধ করবে এটা সৃষ্টিকর্তা জানেন । এবং এজন্যেই তিনি মানুষের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা বা তওবা করার বিধান রেখেছেন। কেন মানুষকে তওবা করতে হবে বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে? কারন, মানুষ তার সামগ্রিক বিকাশ ও সুন্দরভাবে পৃথিবীতে বিচরন করার জন্য যে মূল চরিত্র বা ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে, ভুল বা অপরাধ করার মাধ্যমে সে তার সেই চরিত্রে বা ক্ষমতায় বাধার সৃষ্টি করে। ফলে তার কর্মক্ষমতা এবং স্বাভাবিকভাবে কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়, যেটা মানুষ বুঝতে পারে না। তখন তার সেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য তাকে অনুতপ্ত হতে হয় বা তওবা করতে হয়।
ধরুন আপনি পা পিছলে কাদা পানির মধ্যে পরে গেলেন, সমস্ত গায়ে আপনার কাদা ময়লা লেগে একাকার । এখন এ অবস্থায় কি আপনি আপনার কাজে যেতে পারবেন? না, আপনাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে। না হলে আপনি আপনার স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন না। একজন মানুষ অপরাধ করার মাধ্যমে আসলে নিজেকে এভাবেই কলুষিত করে ফেলে। যে যত্ক্ষন তওবা বা অনুতপ্ত না হয় , ততক্ষন সে এই অদৃশ্য ময়লা মেখে অবস্থান করতে থাকে । এটাই বাস্তবতা। একজন মানুষ যিনি ভুল করেন এবং অপরাধ করেন তিনি কখনোই ভেতর থেকে স্বাভাবিক থাকতে পারেন না, বাইরে যতই ফিটফাট থাকুন না কেন। এখানেই ফিরে আসার প্রশ্ন। তওবা করুন , ভুল স্বীকার করুন এবং ফিরে আসুন। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে ভুল স্বীকার বা তওবা কার কাছে? আমরা অপরাধ করি দুইভাবে:
১। সৃষ্টির ক্ষতি করার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে ।
২। মানুষের সাথে সরাসরি অপরাধ ।
উভয় ক্ষেত্রেই সৃষ্টিকর্তার কাছে তো অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে। তবে আরেকটি কথা আছে। আপনি যার সাথে অপরাধ করেছেন, তার কাছেও আপনাকে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে । এটা তওবা করার একটা আপাত কঠিন দিক যা মানুষ সাধারনত করতে চায় না বা করতে পারে না । তবে এই অভ্যাস মানুষের জন্য একটা পরম ক্ষমতায় রূপান্তরিত হতে পারে। আর একটা সত্য হল যে মানুষ এভাবে ক্ষমা চাইতে পারে এবং তওবা করতে পারে , তার ভুলের পরিমান স্বাভাবিকভাবেই কমে যেতে থাকে ।
এখন এই তওবা করা বা ফিরে আসার মাধ্যমে আমরা কি অর্জন করতে পারি?
১। প্রথমত বিশুদ্ধ ব্যক্তিত্ব। একজন অপরাধী আর একজন নিরপরাধী কি সমান?
২। আমরা জীবনযাত্রায় আমাদের ভুলের পরিমান ক্রমশ কমাতে পারি।
৩। আমাদের মেধার বিকাশ হবে স্বত:স্ফুর্ত । কারন মেধার বিকাশের ক্ষেত্রে বড় বাধা আমাদের ভুল বা অপরাধ।
৪। অপরাধ স্বীকার করার মাধ্যমে আমরা পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারি । এভাবে যে সম্পর্ক ভেঙে গেছে তাও জোড়া লাগানো সম্ভব।
৫। আমরা যারা আধ্যাত্মিকভাবে নিজেদেরকে অগ্রসর করতে চাই তাদের জন্য তওবা একটা অবশ্য পালনীয় ব্যাপার।
আর প্রথমেই বলেছিলাম তওবা মানে ফিরে আসা। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে তওবার মাধ্যমে আমরা নিজেদের কাছে নিজেরাই ফিরে আসি । আমরা ফিরে আসতে পারি আমাদের মূল সত্ত্বার কাছে। আমাদের মূল শক্তির কাছে।
পবিত্র কোরানে আল্লাহতাআলা বলেছেন :
--যারা মন্দ কর্ম করে, এবং পরে অনুতপ্ত হয়, আর বিশ্বাস করে তবে ইহার পরে নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা পরম ক্ষমাশীল , করুনাময় । -- সূরা আল আরাফ:১৫৩
আসলে যতবারই ভুল করেন না কেন, যত বড় ভুলই করেন না কেন , প্রতিবার তওবা করুন। প্রতিবার ভুল স্বীকার করুন , প্রতিবার ফিরে আসুন আপন স্বকীয়তায়। দেখবেন আপনার জীবন একটা আনন্দময় অভিযাত্রায় পরিণত হয়েছে। আর এজন্যে প্রয়োজন শুধুমাত্র আপনার ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টা।
আসুন রমজান মাসে আমরা আমাদের অতীতের সকল ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে থাকি এবং আমাদের ভবিষ্যতকে আলোকময় করে তুলি । ক্ষমা চাওয়া কিন্তু রমজান মাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয় , তবে এই মাস উপলক্ষে আমরা শুরু করতে পারি ।
ধন্যবাদ । আগামীকাল আবার দেখা হবে ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×