somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝিম দুপুরের গল্প

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুপুরবেলা দুচোখে কিছুতেই ঘুম আসে না টুকুনের। আসে না বললে অবশ্য একটু ভুল হয়ে যাবে। ঘুম আসবে তখন যখন ঘুমুতে ইচ্ছে করবে। টুকুনের ইচ্ছেই হয় না দুপুরে ঘুমুতে। তার মনে হয় আরে ঘুমের জন্য তো সারারাত পড়ে আছে। তাহলে দিনের বেলা ঘুমিয়ে সময়টা নষ্ট করার মানে কী!
বুঝে পায় না সে।
মাকে জিজ্ঞেস করে। প্রশ্নের উত্তরতো পায়ই না, উল্টো আরো ধমক খায়। মা ধমকে বলেন, ‘এতো পন্ডিতি করতে হবে না তোকে মানেটানে জানতে হবে না। ঘুমের দরকার ঘুমুবি।’
‘আরে সেই দরকারটা কী সেটাই তো জানতে চাচ্ছি. . . .’Ñ ধমকের পর আবার প্রশ্ন করার চেষ্টা করে টুকুন।
কিন্তু মায়ের চোখ রাঙানি দেখে প্রশ্ন আর শেষ করতে পারে না। মাঝপথে এসে আপনাতেই তার কণ্ঠ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ মায়ের ওই চোখ রাঙানিটাকে সে খুব ভয় পায়। ঘুমের ইচ্ছে না থাকাতেও বিছানায় গড়িয়ে দুপুরটাকে বিকেলে টেনে নিয়ে যায় ওই চোখ রাঙানির ভয়ে। ইচ্ছে থাকুক আর না থাকুক মায়ের একই কথা দুপুরে ঘুমুতে হবেই হবে। বহু ঘ্যানঘ্যান করেও লাভ হয় নি। তাই টুকুন এখন আর কোন কথা বলে। জানালা লাগোয়া বিছানাটায় মায়ের পাশে শুয়ে শুয়ে জানালা দিয়ে উদাস হয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে সে। মা টুকুনকে ঘুমের জন্য কিছুক্ষণ তাগাদা দেন তারপর তলিয়ে যান গভীর ঘুমে ।
আজও তেমনি মায়ের পাশে শুয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে টুকুন। ঘুমের তাগাদা দিতে দিতে মা নিজই ঘুমিয়ে গেছেন কিছুক্ষণ আগে। টুকুন তাকিয়ে আছে মাঠঘাট পেরিয়ে বহুদূর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটার দিকে। রুপোর ফিতের মত আঁকাবাঁকা নদীর পানিতে রোদ পড়ে ঝিকমিক করছে। কোন বাঁধন ছাড়া নদীর ঢেউগুলো বয়ে যাচ্ছে অজানায়। নদীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে টুকুনের মনে হলো ইশ্ আমি যদি ওই নদীর হতে পারতাম। তবে ইচ্ছে মত যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারতাম কেউ আমাকে আটকে রাখতে পারতো না। জানালার বাইরে হঠাৎ কোথা থেকে কতগুলো রঙবেরঙের প্রজাপতি এসে ওড়াউড়ি করতে লাগলো। টুকুনের ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রজাপতিগুলোর ওড়াউড়ি দেখে তার মনে হলো ওরা বুঝি নাচছে। তার একটু দুঃখ হলো, আহা! ওরা কী মজা করে নাচছে খেলছে আমিও যদি ওদের মতো হতে পারতাম। আমাকে আর এই দুপুরে ঘুমুতে হতো না। উড়ে উড়ে ঘুড়ে ঘুড়ে সময় কাটিয়ে দিতাম। প্রজাপতির কথা ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে গিয়েছিলো টুকুন। হঠাত তার ঘোর ভাঙলো ডাক শুনে। তার মনে হলো তাকে বুঝি জানালার বাইরের প্রজাপতিগুলো তাকে ডাকছে। প্রজাপতিগুলো উড়ে উড়ে নাচতে নাচতে তাকে বলছে, ‘এসো তুমিও চলে এসো আমাদের সাথে।’
টুকুন অবাক হয়ে বললো, ‘কিভাবে আসবো?’
‘কেন? উড়ে উড়ে।’
‘উড়ে উড়ে? কিন্তু কিভাবে উড়বো?’
‘ডানা মেলে।’
‘ডানা পাবো কোথায়?’
টুকুনের কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো প্রজাপতির দল যেনো টুকুন খুব মজার কোন কথা বলেছে। হাসতে হাসতে ওরা বললো, ‘ডানা তো তোমার আছেই।’
টুকুন অবাক হয়ে দেখলো সত্যিই তার কাধ বরাবর দুটো বর্ণিল ডানা।
প্রজাপতিরা তাগিদ দিলো, ‘কই এসো।’
ওদের কথা শুনে টুকুন ডানা দুটো মেলে দিলো। আর সাথে সাথেই সে একটা প্রজাপতি হয়ে গেলো। রঙবেরঙের ডানাওয়ালা একটা ছোট্ট প্রজাপতি। ডানা মেলে সে জানালার ফাঁক গলে চলে এলো জানালার বাইরের প্রজাপতিদের দলে। সবাই মিলে হাসতে হাসতে উড়ে চললো নদীর দিকে। নদীর কাছে এসে প্রজাপতিরা সব থামলো। তারপর ঘাসের ডগায় বসে একটু জিরিয়ে নিতে লাগলো । ওদের পাশে বসে নদীর অন্য পাড়ের দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে রইলো টুকুন। তাই দেখে একটা প্রজাপতি জিজ্ঞেস করলো, ‘অমন করে কী দেখছো?’
টুকুন বললো, ‘আচ্ছা নদীর ওই পাড়ে কী আছে?’
টুকুন যেন খুব অ™ভুত একটা কিছু বলে ফেলেছে এমন ভাব করে খুব অবাক হলো সবগুলো প্রজাপতি। তারপর জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কখনো নদীর ওইপাড়ে যাওনি?’
‘না তো।’
‘হায় হায় এ বলে কী! খুব যেন কোন অপরাধ করে ফেলেছে টুকুন। এমন একটা ভাব নিয়ে প্রজাপতিরা বললো, কেন যাও নি।’
‘কেউ নিয়ে যায় নি তাই।’ সহজ জবাব টুকুনের।
তাই শুনে একটুক্ষণ চুপ করে রইলো ওরা। তারপর বললো, ‘যাবে তুমি ওইপাড়ে?’
‘অবশ্যই যাবো।’
‘চলো।’
প্রজাপতিরা উড়তে লাগলো। ওদের পিছনে উড়তে শুরু করলো টুকুন। উড়তে উড়তে চলে এলো নদীর ওই পাড়ে। ওপাড় গিয়ে টুকুনের চোখ দুটো বিস্ময়ে হয়ে উঠলো বিশাল বড়ো। যতদূর চোখ যায় শুধু লাল আর লাল। ব্যাপার কী! অবাক চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে টুকুন তাকালো প্রজাপতিদের দিকে।
প্রজাপতি দলের একজন বললো, ‘অবাক হয়েছো?’
ওপর নিচে মাথা নাড়লো টুকুন।
‘গ্রামের নাম গোলাপ গ্রাম। গ্রামের যতদূর পর্যন্ত তুমি দেখতে পাচ্ছো সব হচ্ছে গোলাপ গাছে ঝুলে থাকা গোলাপ ফুল। একসাথে অনেক গোলাপ তো তাই সব লাল মনে হচ্ছে।’
এবার মুগ্ধ হয়ে গেলো টুকুন। লালে লাল গোলাপ গ্রামের দিকে তাকিয়ে এক অন্য কেম ভালো লাগা ছুয়ে গেলো তাকে। আবার সেই সাথে একটু মনও খারাপ হলো। ইশ্ কী সুন্দর এ দৃশ্য দেখা থেকে সে বঞ্চিত হয়ে ছিলো এতোদিন। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলো টুকুন।
সেই ঘোর কাটলো এক প্রজাপতির কথায়, ‘এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে কী চলবে নাকি? গোলাপ গ্রাম ঘুরে দেখবে না?’
সাথে সাথেই টুকুন বললো, ‘অবশ্যই যাবো। অবশ্যই যাবো।’
‘চলো। চলো।’ এক সাথে হাউকাউ করে উঠলো প্রজাপতিরা সব।
সবাই মিলে ছুটোছুটি, ও না, না, ছুটোছুটি না উড়োউড়ি করে চললো ওরা সবাই।
হঠাৎ টুকুন আবিষ্কার করলো প্রজাপতিরা সবাই ওকে রেখে আগে আগে উড়ে চলছে। ব্যাপার কী? টুকুন যেন উড়তে পারছে না। তার মনে হলো তাকে যেন কে আটকে ফেলেছে। নিজেকে মুক্ত করার জন্য নড়া চড়ার চেষ্টা করলো টুকুন। তারপর একসময় মনে হলো সে মুক্ত। প্রজাপতিরা বহুদূর এগিয়ে গেছে। টুকুন চিৎকার করলো, ‘আমাকে নিয়ে যাও। তোমাদের সাথে আমিও যাবো।’
টুকুন হঠাৎ যেন একটা ধাক্কা খেলো। প্রজাপতিগুলো কেমন ঝাপসা হয়ে যেতে লাগলো। চোখ কচলে আবার ভালো মত তাকালো টুকুন। কিন্তু প্রজাপতিদের দেখতে পেলো না। দেখতে পেলো। কী দেখতে পেলো? টুকুন দেখলো সে শুয়ে আছে খাটে। পাশে শুয়ে আছেন মা। তাকিয়ে আছেন তার দিকে। টুকুন তাকাতেই মা বললেন, ‘কই যাবি? ঘুমা।’
টুকুন কিছু বললো না। উদাস হয়ে জানালা দিয়ে তাকালো বাইরে। নদীর দিকে। নদীর ওপাড়ের দিকে। যেখানে আছে গোলাপ গ্রাম। লালে লাল গোলাপ ফুলে ছাওয়া গোলাপ গ্রাম।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×