somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাঝিপাড়ার শিশুদের স্কুলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লক্ষ্মীপুর সদর থেকে প্রায় বার কিলোমিটার দক্ষিণে মজু চৌধুরীর হাট নামক একটি জায়গা আছে। চমৎকার একটি পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে এটি। শহরের কোলহল থেকে মুক্ত থাকার জন্য মোটর সাইকেল হাঁকিয়ে শহর থেকে অনেকেই স্বপরিবারে মেঘনা নদীর বুকে বেড়াতে চলে যায়। লক্ষ্মীপুর শহর ছাড়িয়ে দুইপাশে ঘন গাছের ছায়াশীতল পথ মাড়িয়ে মজু চৌধুরী হাট পৌঁছুতে মনটা আনন্দে ভরে যায়।
কিছুদিন আগেও এই স্থানটি তেমন পরিচিত ছিল না। এখান থেকে ভোলা যাওয়ার সহজ এবং সংক্ষিপ্ত একটি নদীপথ স্থানটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এখান থেকে প্রতিদিন দুইটি ফেরি ছাড়ে ভোলাগামী বাস-ট্রাক নিয়ে। আগে যেখানে ঢাকা ঘুরে বরিশাল রোডে ভোলা যেতে হতো, সেখানে মাত্র চার/পাঁচ ঘন্টার পথ- মজু চৌধুরী হাট থেকে।
মেঘনা নদীর একটি শাখাকে শাসন করার জন্য একটি স্লুইস গেট আছে। স্লুইস গেটের উপর দিয়েই একটি রাস্তা এগিয়ে গিয়ে বহুদূর বিস্তৃত চর অঞ্চলের দিকে চলে গেছে।
স্লুইস গেট পার হয়ে হাতের ডানদিকে একটি কাচা রাস্তা পশ্চিমে মেঘনা নদীর শাখাকে দুই ভাগ করে দাড়িয়ে আছে। রাস্তাটি দৈর্ঘ্যে আনুমানিক ৫০০ গজ হবে। কাচা রাস্তাটিকে ঘিরে দুই পাশে প্রায় ৬০/৭০টি মাঝি পরিবার থাকে। ৭০/৮০ বৎসর ধরে এ স্থানটিকে কেন্দ্র করে এই জনপদটি গড়ে উঠেছে। এরা মেঘনার বুকে নৌকা নিয়ে সারা দিনমান ব্যাপী ইলিশ ধরে। মহাজনের নিকট বিক্রি করে যা পায় তা দিয়েই চাল,ডাল, তেল, নুন কিনে এনে নৌকায় বসেই রান্না করে। পরিবারের সবাই মিলে খায়। নৌকার মধ্যেই ঘুমায়।
৭০/৮০ টি পরিবারে গড়ে ৬ জন করে সদস্য ধরলে প্রায় ৫০০ জনের একটি জনগোষ্ঠী। এরা বছরের পর বছর ধরে এখানে থাকছে। বড় হচ্ছে। বিয়ে শাদি করছে। পৃথক হয়ে আরেকটি নৌকার মালিক হচ্ছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই মাঝিপাড়ার পুরো জনগোষ্ঠীতে মাত্র একজন কোনরকমে দাখিল পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছে কিন্তু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ওর নাম মোঃ সোহরাব। মাঝিপাড়ায় শিক্ষিত ব্যাক্তি হিসেবে সোহরাবের খুব সম্মান। সোহরাব নৌকা ছেড়ে টেঁকে (নদীর পাশে গ্রামে) গিয়ে উঠেছে স্ত্রী সহ। সোহরাবের স্ত্রী ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়েছে। বিয়ের পর কিছুদিন সোহরাব স্ত্রী সহ নৌকায় ছিল।
ওরা চলে যাবার পর এই জনপদে আর শিক্ষিত ব্যক্তি বলতে রইলো সোহরাব মাঝি। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়াশুনা। এই মঝির বয়স ৩৮ বছর হবে। ৩ ছেলেমেয়ে সহ ৫ জনের সংসার তার। বাচ্চা তিনটির বয়স চার থেকে সাত পর্যন্ত।
প্রতিটি সংসারে গড়ে ৩টি করে শিশু আছে। সেই হিসাবে মোট শিশুর সংখ্যা ২০-২৫০। জনপদটির আশেপাশে কোন স্কুল নেই যে শিশুরা পড়বে। সারাদিন নৌকায় কাটিয়ে এরা মাছ ধরে। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা বৈঠা ধরে নৌকাকে সুদূর মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরে চলে যায়। সূর্য যখন পশ্চিম পাঠে অস্ত যায়, শিশুরা ঘরে ফিরে।
স্থল বলতে ৫০০ গজের রাস্তার এই শেষ মাথাটুকু। ওখানে মার্বেল খেলা, মাটির মধ্যে দাগ টেনে ঘুটি খেলা কিংবা ছোঁয়া-ছুয়ি খেলা এগুলোই শিশুদের বিনোদন।
চলতি বছর এখানকার বয়ষ্ক বাসিন্দাদের ভোটার করা হয়েছে। এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান এসে ভোটারদের সাথে হাত মিলিয়ে ভোট চেয়ে গেছে- কিন্তু কেউ বাচ্চাদের একটি স্কুলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেনি।
এই দুই-আড়াইশ বাচ্চার জন্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি স্কুল গড়ে তোলার পরিকল্পনা থেকে গত ১৪ জুলাই ২০০৮ সালে একটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়।
গত ২৬ আগষ্ট মাঝিপাড়ার অধিবাসীদের মধ্যে বিদ্যানুরাগী ৫ জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সদস্যরা সবাই মিলে সুন্দর একটি স্কুলের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে তাদের ছোট ছোট বাচ্চারা সবাই সুর করে পড়বে অ-তে অজগর ঐ আসছে ধেয়ে কিংবা আ-তে আমটি আমি খাব পেড়ে। মাঝিপাড়ার সেই মাঝিদের স্বপ্নক বাস্তবায়নের জন্য আমরা উদ্যোগ নিযেছি একটি স্কুল ঘর করে দেওয়ার ।
প্রথমে ভেবেছিলাম শুধু বাঁশের পালা বসিয়ে উপরে ত্রিপল দিয়ে একটি পাঠশালা গড়ে তুলবো। কিন্তু বাতাসের তোড়ে এরকম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৬ মাসও টিকবে না। মাঝিদের আবার স্বপ্নভঙ্গ হবে। তাই অন্তত টিনের চালা দিয়ে একটি স্থায়ী ঘর তুলে দিতে হবে।
মাঝিদের স্বপ্নের এই ঘরটুকুকে একটু ভালো করে তুলে দিতে পারলে ওরা নতুন স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকতে পারতো। বর্তমান এই দুর্মূল্যের বাজারে টিনের ছাউনি দেওয়া সামান্য একটু স্থাপনা গড়ে তুলতে বিশ/ত্রিশ হাজার টাকা চলে যায়। মাত্র ৬০ জন ব্যক্তি ৫০০ টাকা করে দিলেই মাঝিপাড়ার শিশুদের জন্য এরকম একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব।
মাত্র ৪ জন ব্যক্তি মাসপ্রতি ৫০০ টাকা করে দিলেই শিক্ষক সহ অন্যান্য ন্যূনতম সুবিধাগুলো দেওয়া সম্ভব।
মাঝিপাড়ার সেই রোস্তম আলী, চুন্নু মোল্লা, হানিফ বয়াতিরা অপেক্ষায় আছে তাদের একটি স্বপ্নের স্কুল ঘর থাকবে।
আসুন না আমরা সবাই মিলে মাঝিপাড়ার এই স্কুল ঘরটি নির্মানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নে অংশীদার হই। পাশাপাশি একটি সুন্দর নাম চাচ্ছি.....আপনাদের সবার কাছে।

(বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আমি অনলাইনে থাকতে পারছি না। পাঠকদের যে কোন কৌতুহলী জিজ্ঞাসার জবাব আমি অনলাইনে আসলে দেবো। প্রমিস)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:২৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফিরে দেখা - ২৭ মে

লিখেছেন জোবাইর, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:০৪

২৭ মে, ২০১৩


ইন্টারপোলে পরোয়ানা
খালেদা জিয়ার বড় ছেলে, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন বেনজীর আহমেদ ও আমাদের পুলিশ প্রশাসন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪২



বৃষ্টিস্নাত এই সন্ধ্যায় ব্লগে যদি একবার লগইন না করি তাহলে তা যেন এক অপরাধের পর্যায়েই পরবে, যেহেতু দীর্ঘদিন পর এই স্বস্তির বৃষ্টির কারণে আমার আজ সারাদিন মাটি হয়েছে তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×