somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গাঁও গেরামের গল্প মধ্যযুগের মধ্যনগর

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হিমাদ্রি শেখর ভদ্রঃ
ভরা বর্ষায় চারদিকে পানি আর হেমন্তে চারপাশে বিছিন্ন কিছু গ্রাম আর এ গুলোর মধ্যেভাগে এক টুকরো নগর এর নাম মধ্যনগর। সুনামগঞ্জের অনুন্নত পশ্চাদপদ লোকালয়। যদিও এর পুর্ব নাম ছিল আনন্দনগর। মধ্যনগরের প্রবীণ প্রাজ্ঞদের কাছ থেকে জনা যায়, আনন্দ বর্ম্মণ নামের একব্যক্তির নামের সাথে মিল রেখে প্রথম নামাকরণ করা হয় আনন্দনগর নামে। চারদিকে জল বেস্টিত হওয়ার কারণে দূর থেকে দেখতে অনেকটা দ্বীপের মতো মনে হওয়ায় আনন্দনগর নাম পরিবর্তীত হয়ে মধ্যনগর নাম হয়। চারপাশে সুবিশাল জলরাশি মধ্যভাগে একচিলতে জনবসতী ও নগর। একারণেই নাম পরিবর্তন করে মধ্যনগর নামাকরণ করা হয়। সুনামগেঞ্জর জেলরোডস্থ লঞ্চঘাট অথবা সাহেব বাড়ির নৌকাঘাট থেকে মধ্যরাতের ৭/৮ ঘন্টার একঘুম তারপর সকালের সোনা রোদে চোখ মেলতেই মধ্যনগর। যে ভাবেই যান না কেন ৭/৮ ঘন্টার দীর্ঘ পথ পারী দিয়ে মধ্যনগরে পৌঁছতে হয়। অথচ জেলা সদর থেকে মাত্র ৬৮ কিলোমিটার দূরে মধ্যনগররের ভৌগলিক অবস্থান। মধ্যনগরের সাথে মধ্যযুগের দারুণ সব মিল রযেছে। মধ্যযুগ মানেই হলো নিকষ-কালো অন্ধকারাছন্ন একটি যুগ। মধ্যনগর হলো একবিংশ শতকের ভেতরে মধ্যযুগের ভেতরে ছোট্ট এক নগর এর উত্তরে চির প্রবাহমান মনাই নদী দণি পূর্ব দিকে সুশান্ত সুমেশ্বরী নদী ও পশ্চিমে গোরাডুবা এবং বোয়ালা হাওর এর মধ্যে এক বর্গকিলোমিটার ভূ-খন্ড জুড়ে বি¯তৃত মধ্যনগর। নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে এখানকার মানুষজন পল্লী বিদ্যুতের নাম দিয়েছে “লাইট সাহেব”। দিনরাত সব মিলিয়ে ৬ ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকেনা এখানে। জনসাধারণের চিকিৎসার জন্য নেই কোন হাসপাতাল বা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। দুইজন এলোপ্যাথিক ও একজন এল.এম.এফ ও তিন চার জন হোমিও প্যাথিক ডাক্তার ৪০/৫০ টাকা ভিজিটের বিনিময়ে বঞ্চিত মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কয়েক যুগ ধরে। ধর্মপাশা উপজেলা সদরে একটি হাসপাতাল রয়েছে দূরত্ব জনীত কারণে কেউ আর হাসপাতাল মুখো হয় না। ইংরেজী গ্রামার বইয়ের জনপ্রিয় একটি ট্রান্সলেশন “ডাক্তার আসিবার পুর্বে রোগী মারা গেছে” এ বিষয়টি মধ্যনগরের মানুষের সাথে উৎপ্রেত ভাবে জড়িয়ে আছে। মধ্যনগরে ডাক্তার আসিবার পুর্বে অনেক রোগী মারা যাওয়ার অনেক রেকর্ড রয়েছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে সুনামগঞ্জ জেলার কৃষিজাত পণ্যের বৃহত্তম বাজার হলো এটি। ফী বছর এখানকার ধানের আড়তে বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে লাখ লাখ টন ধান কেনাবেচা হয়ে থাকে। শুষ্ক মওসুমে রবিশস্য বিক্রীর অন্যতম ত্রে এটি। প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট মধ্যনগর বাজারের সব মিলিয়ে পাকা রাস্তা রয়েছে মাত্র দেড় কিলোমিটার। অথচ পুরো বাজারে রয়েছে একটি থানা, একটি খাদ্য গুদাম,একটি তহশীল অফিস,একটি হাইস্কুল এন্ড কলেজ, একটি বালিকা বিদ্যালয়, একটি মন্দির,একটি মসজিদ,একটি ইউনিয়ন পরিষদ,শতাধিক মুদী দোকান, প্রায় অর্ধশত ধানের আড়ত সহ অনেক গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনা। ১৯৭৬ সালের ১৩ জুন জেলার এগারতম মধ্যনগর থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। মধ্যনগর,চামরদানী, বংশীকুন্ডা উত্তর ও বংশীকুন্ডা দণি এই চারটি ইউনিয়নের ১৪৭ টি গ্রাম নিয়ে এটির অবস্থান। থানা প্রতিষ্ঠার ৩২ বছর পরও উপজেলায় উন্নীত হতে পারেনি রাজনৈতিক রেষারেষীর কারণে। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ২০০১ সালের ৯ মে সরকার এটি কে উপজেলা ঘোষণা করে তা আজও কার্যকর হয়নি। মধ্যনগর সদরে কোন হাসপাতাল বা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। গরীব মানুষেরা চিকিৎসা সেবা পায়। এমনকি কোন এম বি বি এস পাস করা ডাক্তারও নেই। কোন ডাক্তার এখানে ব্যাক্তিগত প্রেক্টিসের জন্য আসে না বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য। তবে মধ্যনগর থানার অধীনে উত্তরবংশীকুন্ডা ও রামদীঘা গ্রামে দুটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে তাতে এখন পর্যন্ত কোন ডাক্তারের পদধুলি পড়েনি। অট্টালিকা সর্বস্ব এদুটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র গোহাল(গরুর রাখার ঘর) ঘরে পরিণত হয়েছে। শিাই জাতির মেরুদন্ড । কিন্তু বিছিন্ন এ জনপদে শিা ব্যবস্থা এখনও তিমিরে রয়ে গেছে। বাজরের চলাচলের পাকা রাস্তাটি অনেকটা এবরো থেবরো হয়ে আছে। এটি যেন কিছুতেই আর অগ্রসর হতে চায় না। স্বাধীনতার পর থেকে মধ্যনগরবাসী শুধু রাজনীতিবিদের নির্বাচনী মুলার তথাকথিত উন্নয়ন প্রতিশ্র“তি ছাড়া আর কিছুই পায়নি। অনেক রাজনীতিবিদ স্থানীয় সাংসদ ও তাদের উপর ওয়ালারা বহুবার মাঠে-ময়দানের ভাষণের ফুল ঝুড়ি উপহার দিয়েছেন কিন্তু বাস্তবতায় মহাশুন্যের গোলক ধাঁ ধাঁ ছাড়া আর কিছুই পায়নি হতভাগা মধ্যনগরবাসী। ###

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×