somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেই যে আমার নানা রং এর দিনগুলি

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনের প্রতিটা সকাল একই রকম আসেনা। আজকের সকালটা কেমন যেনো অন্যরকম। বাইরের আলোর দিকে তাকিয়ে নিজের মধ্যে একটা আলো খেলা করছিলো। ঘুম ভেঙে যাবার পর জানালার পর্দার সরিয়ে বাইরের আকাশটা দেখি। ভোরের আকাশ এর নীচে শহরের বাতিগুলোকে কেমন পানসে মনে হয়। এমন সকালে উঠা হয়না আজকাল। অথচ এই সব সকালে উঠলে এখনো ছোটবেলার মত খুব ভালো লাগে।

ছোটবেলায় ভোর বেলায় উঠলেই মায়ের সাথে নামাজ পড়তাম। এর পর বাসার সামনে ফুল বাগানে কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি। শরৎকাল হলে শিউলী ফুল কুড়ানো।এরপর পড়তে বসা। পড়া শেষ হলে চিঠি লেখা।

আমার ছোটবেলায় পত্রমিতা আপু ছিলো। ওর নাম হীরা।হীরা শামীম। সিলেটের রায়নগর ছিলো ওদের বাড়ী। এমন সকালে আমি মাঝে মাঝে হীরা আপুকে চিঠি লিখতাম। ভাবতে কি ভালো যে লাগে....কত্ত ছোটবেলায় আমার কাছে প্রতি সপ্তাহে চিঠি আসতো........। ঢাকা থেকে ভাইজানের।আপুর। অন্যদিকে হীরা আপুর এবং পরে হীরা আপুর সুবাদে পরিচয় হওয়া দাদামনির।

হীরা আপুর বড় বোনেরা সম্ভবতঃ ভাইজানের পরিচিত ছিলো।সেই থেকে পরিচয়।
আমার আপু থাকতে ঢাকা ইউনিভার্সিটির শামসুন নাহার হলে।ওর কাছ থেকেও চিঠি আসতো। আমি তো নিয়মিত চিঠি লিখতাম। আপুকে একটা চিঠি লিখেছিলাম যা নিয়ে ও প্রায়ই খেপাতো।
"আপু কেমন আছো?
তোমরা কবে আসবা? আব্বা ,মা ,আমি ভালো আছি।আমাদের লাল গরুটার একটা বাছুর হয়েছে। ওর গায়ে সাদা সাদা দাগ।ওর নাম দেয়া হয়েছে বল্টু।"
আপু অনেক দিন পর্যন্ত এই চিঠির লাইন গুলো বলে খেপাতো। আমি তখন খেপে যেতাম।কিন্তু এখন ভাবলে ভালোই লাগে।

আর একবার ভাইজানকে একটা চিঠিতে লিখেছিলাম.....(ভাইজান থাকতো ঢাকা মেডিকেলের ফজলে রাব্বি হলে।)
"ভাইজান,সালাম নিও।কেমন আছো?আমি খুব ব্যস্ত।চিঠি লেখার সময় পাই না।আজ একটু আগে ফুটবল খেলে আসলাম।আমাদের দল ২-০ গোলে জিতেছে।"
ভাইজান চিঠিতে হাতের লেখা খারাপ হলে খুব রাগ করতো।তাই ওর কাছে চিঠি লিখতে বসলে খুব মনোযোগী থাকতে হতো।
ছুটিতে বাড়ীতে আসলে আপু ভাইজান সুযোগমত এই সব চিঠির কথা বলে ব্লাকমেইল করতো।
ভাইজান সবসময় চাইতো আমি যেনো আব্বার খেয়াল রাখি।তাই চিঠিতে সবসময় লিখতো আব্বার সার্টের বোতাম ঠিক আছে কিনা।জুতায় কালি দেয়া আছে কিনা।কাপড় ইস্ত্রি করা আছে কিনা,যেনো খেয়াল রাখি।

আমাদের বাসায় যে ডাকপিওন টা আসতো। বাসার সামনে এসে সাইকেল থেকে নেমে সাইকেলের বেলটা টুংটাং করতো আর ডাকতো সাজিমনি চিঠি। আমি বাসায় থাকলে পড়িমড়ি করে ছুটে আসতাম।
কখনো আপু,কখনো ভাইজান,দাদামিন ,হীরা'পু অথবা পাশের বাসার বাবুদার চিঠি আসতো।
বাবুদা তখন রংপুরে কারমাইকেল কলেজে পড়তো। খামের মধ্যে ভরে আমার জন্য মিমি আর চুইং গামের বাহারী কাগজ পাঠাতো। যা পেলে মিমি আর চুইংগামের জন্য মন কেমন করতো।

দাদামনি দারুণ চিঠি লিখতো।মনে হতো কথারা এসেছে খামে ভরে।সেইসব সময়ে দাদামনির হাতের লেখা আমি নকল করতাম।দাদামনির চিঠি জুড়ে থাকতো বৌদিমনি,উনাদের ছেলে ময়ূখ আর দাদামনির মায়ের গল্প।দাদামনির বাড়ী ছিলো চট্রগ্রামের আঁধারমানিক গ্রামে।উনি চাকরীর সুবাদে সিলেটে থাকতেন।

সেই দাদামনিকে দেখেছিলাম একবার.....ভাইজান ভাবী তখন মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে চাকরী করে। চিরটাকাল ভাবনা বিলাসী আমি,আমার লেখা পড়ে দাদামনি আমাদের বাড়ীর সবাইকে যেমন করে ভেবেছিলো...... মির্জাপুরে বেড়াতে এসে হয়তোবা তেমন করে পাননি তাদের। আমার কাছের মানুষদের ব্যবহারে হয়তোবা আমার বলামত উষ্ণতা খুঁজে পাননি,যা উনাকে ব্যথিত করেছিলো। আমি তখন কলেজে পড়ি। এরপর থেকে দাদামনির সাথে যোগাযোগ থাকেনি।আমি দুই একবার চিঠি দিয়েছিলাম কিন্তু উত্তর আসেনি।

দাদামনি আমার জন্য ভূপেন হাজারিকার দুইটা ক্যাসেট এনেছিলেন।
সেই সব গান শুনলে এখনো দাদামনিকে মনে পড়ে।কে জানে উনি কোথায় কেমন আছেন।উনার ছোট্ট একটা বোনকে উনি কি মনে রেখেছেন কিনা কে জানে!উনাদের ছেলে ময়ূখ এতদিনে অনেক বড় হবার কথা।

অনেক দিন খুব মন খারাপ লাগতো। মাকে বলেছিলাম সব কথা।মা বুঝতো । একমাত্র মা আমাকে চিরটাকাল বুঝেছে। আমার ভাবনাবিলাসী মনটাকে ছুঁতে পেরেছে। মা বলতেন তুই যা তুই তাই।কখনো বদলাবি না। কোন ঘাত প্রতিঘাতে হেরে যাবি না।তেমনি থেকেছি। আমি যেমন ছিলাম ,সেই ছেলেবেলার সবার সাজিমনি।কাউকে এতটুকু ভুলে যাইনি।

(চলবে....)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:০৯
৪৫টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×