somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই লিখছি...

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার সাবেক কর্মস্থলে বয়স এখনো ত্রিশও হয়নি, এমন একজন সাংবাদিকের এরই মধ্যে ত্রিশ-বত্রিশ টি বই বেরিয়েছে। প্রতি বই মেলাতেই তার পাঁচ-ছয়টি করে বই বের হয়। সব ক'টিই হটকেক। একেকটি বই মেলায় একেকটি বইয়ের তৃতীয় কী চতূর্থ সংস্করণও বের হয়।

দূর্ভাগ্যবশতঃ এর কোনোটিই এখনো আমার পড়া হয়ে ওঠেনি। তবে ফেব্রুয়ারি এলেই টের পাই তার কদর। বই মেলায় নিজস্ব প্রকাশনার স্টলের সামনে ভীড় ঠেলে উঁকি দিয়ে তাকে দেখেছি, সে খুব গদলঘর্ম হয়ে বিকশিত দন্তে একের পর এক অটোগ্রাফ দিয়ে যাচ্ছে। বলতে দ্বিধা নেই, অটোগ্রাফ শিকারীদের মধ্যে আবার বালিকাদের সংখ্যাই বেশী।

জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয় পোস্ট কার্ড আকৃতির তার নিজস্ব বইয়ের চাররঙা বইয়ের বিজ্ঞপন। আর সে সব বিজ্ঞপনের ভাষা! ...একটির কথা বলি। সেটা অনেকটা এ রকম...

'আপনি কী প্রেমে ব্যর্থ? অথবা চুটিয়ে প্রেম করছেন? আথবা ভাবছেন, শিগগিরই প্রেমে পড়বেন? আপনার অবস্থা যা-ই হোক না কেনো, এই বইটি আপনার জন্য অবশ্য পাঠ্য। চ্যালেঞ্জ--বইটি আপনার ভালো লাগতেই হবে।'...

আর সে সময় অফিসে তাকে খুঁজে পাওয়াই দুস্কর। তবু দু-এক সন্ধ্যায় হঠাৎ হঠাৎ তিনি একটুক্ষণের জন্য অফিসে আসেন। বগলদাবা করে নিয়ে আসেন নিজের লেখা সদ্য প্রকাশিত ঝকঝকে মলাটের দারুণ সব বই। অটোগ্রাফসহ কিছু কিছু বিলি করেন বিগ বসদের।

অফিসের সেলিব্রেটি লেখক কাম সাংবাদিককে নিয়ে সে সময় দীর্ঘক্ষণ স্মোকিং রুমে আলাপ-চারিতা জমে ওঠে। টুকরো টুকরো কথা শুনতে পাই, তিনি নাকী বই লিখে রাতারাতি সুনাম কুড়িয়েছেন। একের পর এক প্রকাশক তাকে একটি চটি বই মোটা অংকের বিনিময়ে বের করার জন্য হন্যে হয়ে খোঁজেন। সেই সাথে তার পায়ে পায়ে ঘোরে ব্যস্ততা আর লক্ষ্মী, বোধহয় স্বরস্বতিও।

*

বছর খানেক আগে বাল্যবন্ধু, মার্কিন প্রবাসী ও সচল শামীম হক বাংলা মেইলর ডট কম-এ জানতে চেয়েছিলেন, আমি নিজে এ পর্যন্ত কয়টি বই লিখেছি?...ইত্যাদি।

একটিও নয়--এমন সোজাসাপ্টা সংক্ষিপ্ত উত্তরে সে অবাক হয়ে আবারো বলেন, কেনো নয়? লেখা-লেখিই যেহেতু পেশা, সেহেতু আমার অন্তত দু-চারটি বই এরমধ্যে বেরিয়ে যাওয়া উচিৎ। আমার সমস্যাটি কোথায়? টাকা? যদি টাকার প্রয়োজন হয়, সে হয়তো আমাকে হেল্প করতে পারে। আমি যেনো তাকে দ্রুত একটি মধ্যম মানের বাজেট পাঠাই।...

আমি তাকে বলি, আমার অঢেল টাকা নেই। সত্যি বলতে বরং উল্টোটাই সত্যি, এমন কী মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে আমার বেতনের সমস্ত টাকাই ফুরিয়ে যায়...এমনটাই ঘটে বেশীর ভাগ সময়। তবে বই প্রকাশের জন্য প্রবাসী বন্ধুর দ্বারস্থ হতে হবে, এমনটা নয়।

আসলে বই প্রকাশ করার জন্য উপযুক্ত লেখা বা মনোবল কোটিই আমার নেই...সে সময় শামীম হককে এমনটাই বলি আমি। আর বলি, সাবেক সহকর্মীর সেলিব্রেটি লেখক হিসেবে উত্থানের সংক্ষিপ্ত কাহিনী ও আমার লেখক হয়ে ওঠার দীর্ঘ প্রস্তুতির কথা।

অভিমানী বাল্যবন্ধু ওই মেইলটির কোনো জবাব দেন না। হয়তো ধরেই নেন, কলোনিয়াল হ্যাঙ-ওভার জনিত কারণে আমি এক ধরণের হীনমন্যতায় ভুগছি।

*

সে যা-ই হোক। দেড় দশকেরও বেশী সময় পাহাড়ে, বনে বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে অনেকটা জীবন পুড়িয়ে তথ্য-সাংবাদিকতা হয়েছে, হচ্ছে।... পেশাগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কথাই বলা হয়নি ওই সব প্রতিবেদনে।

সেই সব অকথিত কথামালা রিপোর্টারের ডায়রি থেকে সংবাদ-নেপথ্য কথন হয়ে কখন যেনো দ্রুত টাইপ হতে হতে প্রকাশ হয়ে পড়ে নিজস্ব খেরোখাতার ব্লগে...সচলে আর সামহোরিনে। সবাই এর পাঠক নন...এমন কী অনেকেই নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন, আমি কোন পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন সময়ের কথা বলছি? এই সব কী স্বাধীন দেশে ঘটেছে? নাকী আমি বলছি একাত্তরের রক্তাক্ত কোনো যুদ্ধদিনের কথা?

সহব্লগার জামাল ভাস্করের ব্লগে রাঙামাটির এক সাংবাদিক তো দাবিই করে বসলেন, রাঙামাটিতে না কী কোনো পুনর্বাসিত (?) বাঙালি নেই। প্রতি মন্তব্যে এর প্রতিবাদ করায় তিনি অপ্রসাঙ্গীকভাবে ব্যক্তিগত আক্রমনই করে বসলেন!

*

আমার প্রথম বই, তা-ও পাহাড়ের নেপথ্য কথন--প্রকাশিত হতে যাচ্ছে...এমন কথা জেনে দিনের পর দিন আমাকে ইমেইলে ও এসএমএস বার্তায় নিঃস্বার্থভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন, উৎসাহ দিচ্ছেন সহব্লগার শ্যাজা দি ও মুশফিকা মুমু। ব্লগার মাহবুব লীলেন ভাই ও আহমেদুর রশিদ টুটুল ভাই বাড়িয়ে দিয়েছেন-- সত্যিকারের ভালবাসার হাত। শ্রদ্ধেয় অরূপ দা (আহমেদ অরূপ কামাল) অনেক ব্যস্ততার ভেতরেও এক কথায় রাজি হয়েছেন বইটির প্রচ্ছদ করে দিতে। আর বন্ধুবরেষু, অতিথি ব্লগার ফারহানা জাহাঙ্গীর তো ধরেই নিয়েছেন, আমি এরই মধ্যে দারুন এক সুলেখকে পরিনত হয়েছি!!

তো এখনই তাদের ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করবো? না থাক...আগে বইটা প্রকাশ হোক তো! =p~

---

আপডেট: এই লেখাটি প্রকাশের পর পরই ই-মেইলে অরূপ দা পাঠানো বইটিই অসাধারণ একটি প্রচ্ছদ পেলাম। সেটিই এখন লেখাটিতে জুড়ে দিলাম।।


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৯
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×