somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোযার মাসে এটা সেটা চিন্তাভাবনা ...... (মাথায় যা আসে......)

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এইসব রোযা রেখে টেখে ক্লান্ত হয়ে মাথায় যা আসছে তা লিখেই ফেললাম, যা ভাবি। চিন্তাভাবনা করে লেখা না , সুতরাং কোনো কথা খারাপ লাগলে দুয়েকটা মাইনাস দিয়ে যাইয়েন , কিন্তু মাফ ও কইরা দিয়েন।)

আমরা সবাই এক কাতারে


দুপুরে অফিসের বেসমেন্টে নামাজ পড়তে গেলাম। রমযান মাস উপলক্ষে একটা এলাকা কাঁচ দিয়ে ঘিরে এসি লাগিয়ে স্পেশাল প্রেয়ার রুম করা হয়েছে , যাতে জামাতে নামায পড়া যায়।
প্রথম কাতারে কান্ট্রি ডিরেক্টর (উনি বিদেশী মুসলিম) , তার ডানপাশে আমাদের ফ্লোরের টি-বয়, বামপাশে একজন ইন্টার্ণ। আমি ছিলাম পেছনের কাতারে , আমার পাশে হেড অফ এইচআর আর আমার টিমমেটরা।

দুটো জিনিষ ভালো লাগলো। অবশ্যই কান্ট্রি ডিরেক্টর আর আমাদের টি-বয়ের পাশাপাশি নামাজ পড়া, আরেকটা হলো জাকির ( টি-বয় ) কিন্তু আমাদের পেছনে দেখে ও তার জায়গাতেই নামাজটা পড়েছে।
আমরা অন্তত এমন একটা পরিবেশ এর নিশ্চয়তা দিতে পেরেছি যে , যার যার উপযুক্ত মর্যাদাটা সে গ্রহণ করে নিতে পারে। প্রেয়ার রুমে/মসজিদে অন্তত আমরা সবাই সমান এই বোধটা কাজ করছে দেখেই ভালো লেগেছে।
কারণ কিছুদিন আগে মতিঝিলের এক অফিসে গিয়েছিলাম ( রোযার আগে), জোহরের নামাজ পড়তে গিয়ে দেখি অনেকে তার ইমিডিয়েট বসকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে পেছনে চলে আসছিলো।
নামাজের কনসেপ্টের সাথে ব্যাপারটা শোভন মনে হয়নি।

সংযম? নাকি সব আমার চাই?


আজ ইফতারে কিছু পাড়াতুতো বড়ভাইকে ডেকেছিলাম। পরিবার হতে 'নির্বাসিত' ব্যাচেলর জীবন যাপন করি, সুতরাং উপাদেয়-লেয়-পেষ্য সবকিছুই যে 'মুদ্রাদ্বারা ক্রয়কৃত' হবে তা আর না বললেই নয়।
সুতরাং দলবেঁধে বের হলাম, ইত্যাদি ইত্যাদি কেনার জন্য। প্রায় দশ এগারোটা পদ কেন শেষ, বাকী আছে হালিম কেনা। এই ব্যাপারে আমি আবার খুব খুঁতখুঁতে, কারণ ঢাকার অধিকাংশ দোকানেই 'হালিম'
নামে যা বিক্রি হয় তা হচ্ছে ডাল দিয়ে হাবিজাবি গরুর মাংসের রান্না! এমনকী কলাবাগানের 'তথাকথিত' বিখ্যাত মামা হালিম ও আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

গ্রীনরোডে তো আর অমন ভালো কিছু হালিম পাওয়া যায় না , তাই সিদ্ধান্ত নিলাম পান্থপথ মোড়ের মধুবন থেকেই কিনবো, ওটাকে অন্তত হালিম বলা যায়।

যাবার পথে ভাইয়া হঠাৎ দাঁড়িয়ে বললেন। ..., যা কেনা হয়েছে তাতোই খেয়ে কুলাতে পারবো না, হালিম না কিনলে হয় না , ওটা যদি...।
আমি প্রশ্নবোধকভাবে উনার দিকে তাকালাম...। গ্রীন রোডের মাথায় একজন দরিদ্র বৃদ্ধা থাকেন, ঠিক ভিক্ষা করেন না, আশে পাশের লোকজনই হয়তো চালিয়ে নেন। এক কেজি হালিমের দাম
দুইশ চল্লিশের উপরে,ভাইয়া চান এই টাকাটা দিয়ে উনি সহ কয়েকজনের জন্য কিছু ইফতার কিনে দিতে।

রাজী না হবার প্রশ্নই আসে না, পরে দেখলাম হালিম বাদে যা কিনেছিলাম তাইই খেয়ে শেষ করা যাচ্ছে না।

আমি খুব বেশী ধর্মপ্রাণ মানুষ তা নই, কিন্তু নিজের কাছে কাছে নিজেই লজ্জা পেয়ে যে প্রশ্নটা জাগে তাহলো রোযার অন্যতম উপাদান যে সংযম , তার কতটুকু আবেদন আমরা রাখি।
নাকি রোযা নিছক আমাদের জন্য একটা উৎসব - খাবার দাবার তারপর জামাকাপড়ের প্রদর্শনপ্রবণতার? ঈশ্বরবিশ্বাসী আস্তিকদের একধরণের হিপোক্রেসী উপলক্ষ হিসাবে কি রোযাকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করে ফেলিনি?

নিজেকে দিয়েই চিন্তা করি, আর আগের কয়েকদিনে খালাতো ভাইয়ের বন্ধুর বাসায় গুলশানের এবাকাস পূর্ণিমাতে খেয়ে খেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি , অথচ রোযার দস্তুর হচ্ছে এই অতিরিক্ত খরচ টা যথাসম্ভব বাঁচিয়ে দরিদ্রের দান করা।

আমাদের সব পেতে হবে , আমাদের সব খেতে হবে (উপরন্তু হলেও ) এই বিকৃত মানসিকতা নিয়েই যে আমরা মনে হয় মাসটাকে পবিত্র থেকে প্রহসন বানিয়ে ফেলেছি।

বাংলাদেশে কি আসলেই মন্দা চলছে?


আগামী সপ্তাহে আমার ছোটভাইটার জন্মদিন, তাই ওর জন্য কিছু কিনতে বের হলাম শনিবার। এমনিতেই আমাকে মার্কেটে দেখা আর ডুমুরের ফুল দেখা নাকি সমার্থক, বন্ধুরা বলে।
বসুন্ধরা সিটি আমার বাসা থেকে একমিনিট আটত্রিশ সেকেন্ডের পথ, কিন্তু নিতান্তই কিছু কেনার দায়ে না পড়লে আমি ওমুখ হই না, বিশেষত শুক্র বা শনিবার।

কিন্তু পঞ্চম রোজার দিনই মার্কেটের অবস্থা দেখে ভিরমি খেলাম। এখনই 'সব কিনে ফেলবো' পার্টিদের যেরকম বাড়ন্ত অবস্থা দেখছি, তাতে শেষ দিকে কী অবস্থা হবে আল্লাই মালুম!
(এইবার শেষের দিকের ওইসব জ্যাম অসুস্থ কেনাবেচা হাউকাউ দেখার জন্য আমি থাকবো না , শান্তি!!)

আর বিক্রেতারা ও মোটামুটি 'সয়াবিন তেল পলিসি' নিয়েছেন মনে হলো। যা দাম চাইবে কেউ না কেউ সেই দামে কিনবেই, সুতরাং পাঁচশো টাকার জিনিষ অবলীলায় বারোশো বলা তাদের জন্য ডালভাত।

বাইরের হাত পেতে থাকা আমাদেরই ভাইবোনদের দেখে ভাবি, কোনটা আসলে বাংলাদেশ?
কি বানিয়েছেন আমাদের পূর্বপুরুষরা, আর কি বানাচ্ছি আমরা?



সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪৫
২৭টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

সততা হলে প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে

লিখেছেন মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৯

বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। ক্রেতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো থাকা উচিত:

(১) ওজন মাপার যন্ত্র কী ঠিক আছে?
(২) মিষ্টির মান কেমন?
(৩) মিষ্টি পূর্বের দামের সাথে এখনের দামের পার্থক্য কত?
(৪) এই দোকানে এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×