somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিপোষ্ট: নিজেকে হারানোর বেদনা আমরা কেউ বুঝি না।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্ম হলে মৃত্যু হবেই। মৃত্যু যে কোন প্রাণীর জন্য এক অবধারিত ঘটনা। এখানে কিন্তু প্রাণী বলা হয়েছে। কোন বিশেষ জীব কে বোঝানো হয়নি। ধর্মেও বলা হয়েছে, প্রতিটি প্রাণিকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। তবে মানুষের মৃত্যু একটু অন্যরকম। সে একটা আবেগ ঘন ঘটনা। অনেক মায়ার বন্ধন ছিড়ে তাকে চলে যেতে হয় চিরতরে। আপন মানুষটিকে ফিরে পাবার আকূল আকুতি করেও কোন লাভ নেই। কারণ, মৃত্যুর কাছে মানুষ পরাজিত। সেই অন্ধকার অজানা জগতটার ডাক যখন চলে আসে তখন তা উপেক্ষা করার উপায় নেই।

যে মানুষটি চলে গেলো তার সম্পর্কে আমরা কেউ কি কখনো ভেবে দেখেছি? তার মনের হাজারো কথা, তার কষ্টের কথা, তার আবেগের কথা, তার সপ্নের কথা, তার নিঃসঙ্গতা। এ সব তো ছিলো তার মাঝে। যা তার মৃত্যুর সাথে সাথে মাটি চাপা পড়েছে। সে সব কি ভেবে দেখেছে কেউ?

মৃত্যুর পরের কথা না হয় বাদই দিলাম। বেঁচে থেকেও যে আমরা মানুষরা মৃত হয়ে যাই! তা কি আমরা অনুভব করতে পারি? আমরা যে নিজের সাজানো জগত থেকে আস্তে আস্তে দুরে সরে যাই তা কি আমরা বুঝি? যেমন, একটি মানব শিশু যখন পৃথিবীতে আসে তখন তার কাছে সব কিছুই অজানা। সে তখন শুধু চিনতে পারে তার মায়ের কোল এবং মায়ের গায়ের গন্ধ। আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা শিশুটি তার জগতটাকে তৈরী করতে থাকে তার পরিচিত কিছু মানুষকে নিয়ে। তার খেলনা, তার দুষ্টমি, তার ছুটোছুটি। কোন বাস্তবতার মুহুর্ত তাকে আক্রমণ করতে পারে না। তার ভাবনার জগতটাকে নড়বড়ে করতে পারে না। সে ব্যস্ত থাকে তার আপন সত্ত্বা নিয়ে। কিন্তু তার বেড়ে ওঠার মাঝে থাকে অনেক শাসন। সাথে তো আদরও থাকে। সেই আদরে সে ভুলে যায় সব কিছু। আস্তে আস্তে দোষ-গুনে ভরা একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সে গড়ে উঠতে থাকে। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার মাঝেও সে তার আপন জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না। পড়াশুনা, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সে ঢুকে পড়ে অন্য এক জগতে। জীবনকে নিয়ে তখন তার এক ভাবনার জগত তৈরী হয়। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের পেছনে সে ছুটবে বলে ঠিক করে নেই। ছোট ছোট সপ্ন দেখতে শুরু করে নিজেকে নিয়ে। কখনো সে সিনামার নায়ক হয়ে যায়, কখনো সে বড় কোন খেলোয়াড় হয়ে যায়, কখনো হয়ে যায় বড় কোন শিল্পি, কখনো বিজ্ঞানী, এরকম আরও বহু জগতে সে নিজেকে ভাবতে শুরু করে। হঠাৎ হয়তো সে ভালোবেসে ফেলে কাউকে। তখন তার সেই আপন জগতটাতে নিয়ে আসে তার ভালোবাসার মানুষটাকে। তাকে নিয়ে গড়ে তোলে গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্ন। কত রাত হয়তো সে ভেবেছে তার সব স্বপ্ন নিয়ে। তার মনের গোপন কথাগুলো নিজেই একা একা বিড়বিড় করেছে মনে মনে। এ সবই তার আপন জগত। নিজস্ব ভাবনা। যেখানে পদচারন করার সাধ্য অন্য কারও থাকে না।

মানুষের বসবাস বাস্তবতার মাঝে। আর তাই ধীরে ধীরে তার অনেক স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েও সে চলতে থাকে তার বাকি স্বপ্ন পূরণের আশায়। বাস্তব জগতটাকে সে বুঝতে শিখে। বাস্তবতা-স্বপ্ন দুটোর মাঝের যে যুদ্ধ তা সে হজম করতে শিখে। একদিন তার কাঁধে এসে পড়ে কিছু দায়িত্ব বোধ। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান সব কিছু এসে পড়ে তার জগতে। তার একার ভাবনার জগতে তখন আসে আরও কিছু মানুষের ভাবনা। আরও কিছু মানুষের স্বপ্ন পূরণে ব্যস্ত হয়ে সে ভুলতে বসে তার স্বপ্নের কথা। ব্যস্তায় সে হারিয়ে ফেলে নিজেকে। একটু ভালো থাকার আশায় সে ছুটতে থাকে। কিন্তু সে যে নিজের অজান্তেই ভুলে যায় নিজেকে। নিজের সাথে আর তার কথা বলা হয় না। আর তার নিজেকে নিয়ে কোন জগত তৈরী হয় না। নিজের জন্য একান্ত সময় সে আর বের করতে পারে না। কখন সময়ের সাথে সে ছিটকে যায় নিজের জগত থেকে সে তা বুঝতেই পারে না। এভাবেই হঠাৎ একদিন কড়া নাড়ে মৃত্যু। তখনো সে ভুলে যায় নিজেকে। তার মনের গহিনের কথাগুলোর চেয়ে তার কাছে বড় হয়ে ওয়ে উঠে তার রেখে যাওয়া আপন মানুষগুলো। এই মানুষের পরিচয়। মানুষের মহত্ত্ব তো এখানেই। আমরা সব মানুষ নিজেকে নিয়ে ভাববার সময়টুকু পাই না। আমরা ব্যস্ত থাকি কিসের নেশায়, কিসের আশায়? তা এক প্রশ্ন... অথবা যুক্তিবাদীরা হয়তো ব্যখ্যা দাড় করাতে পারবেন।

কিন্তু সত্যতো তাই। আমরা ভাবি না আমরা কখন ছিটকে গেছি নিজের আপন জগত থেকে। বাস্তবতার করাল গ্রাসে আমরা ভুলে যাই নিজেকে। আমরা ভুলে যাই আমাদের নিজ স্বত্ত্বাকে। আমাদের আপন ভাবনার মৃত্যুর সাথে সাথে যে আমাদের স্বত্ত্বারও মৃত্যু ঘটে তা আমরা ভেবে দেখি না কেউই।মৃত্যুর আগেই যে আমাদের মৃত্যু ঘটে তা কি আমরা বুঝতে পারি না, আমাদের মন যে এক অজানা বেদনায় কাঁদে তাও আমরা বুঝতে পারি না। হয়তো বুঝতে চাইও না। আপন মানুষকে হারিয়ে আমরা বেদনায় কেঁদে উঠি কিন্তু নিজেকে হারানোর বেদনা আমরা কেউ বুঝি না।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×