somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপ এইমাত্র কায়া

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ বছরের শুরুর দিকের কথা কাজের আশায় ঘুরছিলাম এর কাছে তো ওর কাছে। মনে হচ্ছে কাজ নামের কোনো কিছুই নাই আমার জন্য। ওনেক কষ্টে মনকে বুঝিয়ে রেষ্টুরেন্ট এ কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। শাহীন ভাই ওনেক দিন এই দেশে বলতে গেলে বিদেশের সবটুকু সময়ই তিনি কাটিয়েছেন রেষ্টুরেন্ট এ কাজ করে। ওনাকে ফোন করতেই বললেন চলে আসো কিছু একটা হয়ে যাবে। রেষ্টুরেন্টে কাজ করার ইচ্ছে আমার কোনো কালেই ছিলো না, এইসব লোকদের মধ্য না থাকে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকে কোনো ভদ্রতা। যাই হোক কোনো কাজ যেহেতু নাই তাই এই কাজটাই সই। কাজে লেগে গেলাম কিচেন পটার। যে কাজ জীবনে কোনো দিন কল্পনা করি নাই তাই করতে হচ্ছে। শাহীন ভাই বললেন কিছু দিন চেপে যাও তার পর তোমাকে ওয়েটার বানিয়ে দেবো। কাজ করতে করতে সবার সাথে পরিচয় হলো, শেফ সাহেবের সাথে বিশেষ খাতির হলো তিনি আমাকে সুযোগ পেলেই নানা মজার আইটেম খাওয়াতেন। আমি হিন্দী বা উর্দু যাই বলেন এতে খুবই কাচা ছিলাম। তো শেফ সাহেব আমাকে সময় পেলে হিন্দী বা উর্দু শিখাতেন। যদিও তিনি নিজেও ছিলেন বাঙ্গালী। অনেক বছর এইদেশে বলে এই হিন্দী বা উর্দু ভাষা ও শিখে ফেলেছেন। আমার হিন্দী শিখা ভালোই চলছে। আপ ক্যাসে হো? ঠিক হে? তাবিয়াত(শরীর) ঠিক হে? আস্তে আস্তে বলতে গেলে সব ঠিক কিন্তু দ্রুত বলতে গেলে সব উল্টা পাল্টা হয়ে যায়।

একবার আমাদের শেফ সাহেব ছুটিতে গেলেন। তার জায়গায় রেষ্টুরেন্ট মালিক একজন ইন্ডিয়ান শেফ রাখলেন। আমি মনে মনে খুশি যে আমার হিন্দী শেখাটা এবার পুরাই পুরা হবে। ততদিনে আমি হাফ ওযেটার মানে টুকটাক অর্ডার নিতে পারি এমন ওয়েটার হয়েছি। যার কারনে আমি কিচেনে খুব কম যেতাম, কারন সব সময় সামনেই থাকতে হতো। তবে সময় পেলেই কিচেনে গিয়ে হিন্দী শিখতাম। এই শেফ সাহেব আবার পেটুক ছিলেন। যাই রান্না করতেন তার কিছু নাকিছূ চেখে দেখতেন। নিজ নিজ মর্জি মতো রান্না করে খেতেন। যাই হোক রেষ্টুরেন্ট মালিক যতক্ষন না জানছে ততক্ষন ঠিক আছে। একবার এক অর্ডারে শাক আলু(ইন্ডিয়ান কোনো খাবারের নাম) অর্ডার হলো। শেফ সাহেবের মনে হয় এই পদ অনেক প্রিয় ছিলো তিনি শাক আলু বানিয়ে তার অর্ধেকটাই খেয়ে গেলেন। আমি কিচেনে খাবার আনতে গিয়ে দেখি উনি মনের সুখে খাইতেছেন। আমি বললাম আপ কিয়ু খা রাহে হো? সে বলে মেরি মর্জি! আমি বললাম 'আগার কাস্টমার কো কম হো যায়ে তো কেয়া হোগা'? ও কয় 'ইয়ে লোগ জেদা নেহি খাতে!'। খাবার দেবার পর কাস্টমার আমাকে ডেকে পাঠালেন বললেন শাক আলু এতো কম কেনো? তুমি কি জানো না আমরা চার জন লোক, আর আমরা সবাই এটা খুব পঝন্দ করি। তোমার ম্যানেজার কে ডাকো! ম্যানেজার আইলো, ম্যানেজার সরি বললো, এবং দশ মিনিটের মধ্য ফ্রি শাক আলু দেবার ওয়াদা করলো। আমাকে জিগাস করলো কি হইছে আমি পুরা কাহিনী বললাম, ম্যানেজার আমাকে সহো কিচেনে গেলো শেফ কে সরিয়ে নিজেই শাক আলু পাকিয়ে কাস্টমার কে দিয়ে আসলো। কাস্টমার চলে যাবার সাথে সাথে শেফ কে জিগ্গাসাবাদ করা হলো শেফ কথা পাল্টাইলো, সে কয় ম্যায়নে ক্যায়া কিয়া ইসনে মুঝে বোলা দো আদমি ইসলিয়ে ম্যানে কম বানায়া!!! আমার মেজাজ খারাপ হইলো। আমি মালিক রে কইলাম হে মিছা কথা কয় আমি তারে এই মাত্র খাইতে দেকছি যকন জিগাইছি হে কয় কাস্টমার বেশি খাইবো না সো কোনো টেনশন নাই, শেফ কয় ইয়ে তুম ক্যায়া বলরাহে হো হিন্দী ম্যা বলো, আমি নিজেরে কন্টোল করতে না পাইরা কইলাম ম্যা দেকা আপ এইমাত্র কায়া শাক আলু, ম্যানে জিগায়া তো তুম বলতা ইয়ে লোখ কম খাতে!! ম্যা এই মাত্র দেখা আপ শাক আলু কায়া, মিছা কিয়ু্ বলতা হো! একপলক তাকিয়ে দেখি মালিক আর শেফ ছাড়া সবাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছে। কিছুই বুঝলাম না। পরে অবশ্য শাহীন ভাই বললেন আমি কি হিন্দী বলেছিলাম সবার সামনে। শাহীন ভাই মুখ থেকে শুনার পর থেকে নিজের হাসি আর চেপে রাখতে পারি নি। পরের দিন কাজে যেতেই সবাই আমাকে এইমাত্র কায়া, আর কথায় কথায় মিছা কিয়ু বলতা হে আরো কিছু বানিয়ে বানিয়ে আমাকে জ্বালাতোন করতে লাগলো। রেষ্টুরেন্ট কাজ ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু এখনো ওই ঘটনা মনে পড়লেই আমার ভীষন হাসি পায়। এর পর আমি আর কোনো দিন হিন্দী বা উর্দু শিখা বা বলার চর্চা করি নাই।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×