somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অগভীর ভাবনা ১৩ উলঙ্গ পাগল এবং একজন সৎ মানুষ

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে দেশে সততার কদর নেই সেই দেশ সততা গুরুতর অপরাধ, গতকাল রাত থেকেই এমনটা ভাবছিলাম। মানুষ সৎ থাকবে কেনো? সৎ থাকবার কোনো কারণ নেই এখানে, সহকর্মী যখন প্রাক্তন সহকর্মীর কাছে ঘুষ দাবী করেন পেনশন ফাইলে সাইন করবার জন্য তখন সরকারী আমলারাও অসহায়, তাদের দৈত্য তাদেরই গ্রাস করে ফেলে।

সরকারী নীতিমালায় নির্বাহী বিভাগের উপরে আরও ক্ষমতা অর্পিত হচ্ছে, অর্থ্যাৎ সরকার এমন কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করেছে যার ফলশ্রুতিতে সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নের নামে আদতে সরকারী কর্মচারীদের হাতে প্রভুত ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পূর্বে ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা, যেকোনো স্থানে আদালত বসিয়ে মামলা পরিচালনা করে অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করবার ক্ষমতা ছিলো ম্যাজিস্ট্রেটদের। তবে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ফলে সেই ক্ষমতা লোপ পেয়েছে। রোকনউদদৌল্লার বিপ্লবী ভাষণে এই ক্ষমতা আত্মস্যাতের বিষয়টাও প্রাধন্য পেয়েছিলো।

মূলত সরকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, সরকারী বিচারালয়ের বিচারকার্য পরিচালনায় সহযোগী হিসেবে নির্বাহী বিভাগের কতিপয় কর্মচারী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলো। হাইকোর্ট- সুপ্রীম কোর্ট বিচারবিভাগ স্বাধীন করবার চুড়ান্ত সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার পরে আর বাড়াবাড়ি করা সম্ভব হয় নি। আমার পরিচিত যেসব ম্যাজিস্ট্রেট ছিলো, তারা সবাই বিদ্রোহী সমাবেশে উপস্থিত ছিলো। রোকনউদদৌল্লা যেই বক্তব্য রেখেছিলো সেখানে সেটা স্পষ্টতই আদালত অবমাননা।

ম্যাজিস্ট্রেটদের সকল ক্ষমতা আত্মস্যাৎ হয় নি, কিছু পরিমাণ বিচারিক ক্ষমতা এখনও তারা ধারণ করে। জরিমানা করিবার অধিকার এখনও আছে তাদের, তবে যদি ২টা মামলার জরিমানা হয় তবে ৩য় মামলাটার জরিমানার টাকা আত্মস্যাৎ করে স্বয়ং বিচারক, এটাকে অবৈধ উপার্জন বলা যাবে না, এটা সহযোগিতামূলক মনোভাব।

নতুন করে ভোক্তা অধিকার আইন প্রণীত হয়েছে, সেখানেও নির্বাহী বিভাগের কিছু মানুষকে অপরিসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, এমন কি ভোক্তার অভিযোগ যদি ভ্রান্ত প্রমাণিত হয় তবে ভোক্তারও শাস্তির বিধান আছে এখানে। এবং এর কতৃত্ব নির্বাহী বিভাগের হাতে অনেকাংশে, তারাই বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দিবে আদৌ সেটা ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন করেছে কি না। জামিন দিয়ে আর অহেতুক মামলা নিষ্পত্তি করে বিচারের নামে প্রহসন এবং অবৈধ উপার্জনের সুযোগ কমে যাওয়ার পরে এই ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে কিছু উপার্জনের পথ খুললো সরকারী কর্মকর্তাদের। তাদের আয় উপার্জন ভালো হোক।

মানবাধিকার সনদ আইনে বাস্তবায়িত হয়েছে, অবসর প্রাপ্ত কিংবা কর্মরত বিচারকের নেতৃত্বে নির্বাহী বিভাগের ৫ কর্মকর্তা এবং ২ জন সুশীল প্রতিনিধি এই মানবাধিকার কমিশনের কাজ দেখাশোনা করবেন। তারাই অভিযোগ তদন্ত করবেন এবং আদৌ উত্থাপিত অভিযোগ আমল যোগ্য কি না এটা নির্ধারণ করবেন। পুরোনো দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মতো নখদন্তহীন একটি মানবাধিকার কমিশন আমরা পেয়েছি, হয়তো আবারও একটা রাজনৈতিক পট পরিবর্তিত হলে মানবাধিকার কমিশনটিকেও ঢেলে সাজানো হবে। কিন্তু বর্তমান সরকার এবং রাজনৈতিক সরকার এই মানবাধিকার কমিশনকে স্বাধীন করবে না এবং এর ক্ষমতাকে যতভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায় সেই চেষ্টাই করে যাবে।

দুর্নীতিগ্রস্থ হওয়ার নানাবিধ প্ররোচনা স্বত্তেও কিছু উজবুক কোনো এক মানসিক সমস্যার কারণে সততা প্রদর্শন করে, এইসব সৎ মানুষদের খাঁচায় ভর্তি করে সবাইকে দেখানোর ব্যবস্থা করা যায়। কেনো মানুষ অহেতুক সৎ থাকবে, সৎ থাকে শুধু বোকারা। কাস্টমস অফিসার চকলেট থেকে রঙ্গীন টিভি সব খায় , মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ফেন্সিডিল থেকে শুরু করে মদ সবই খায়। শুধু খায় না, খেয়ে খালি বোতলে পানি ভরে রাখে।

এমন একজন সৎ মানুষ ভীষণ কষ্টে সময় কাটাচ্ছে, শুধু এতটুকু আনন্দ নিয়ে যে সে জীবনে অন্তত দুই নাম্বারী করে নাই, অসত্য এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে সহায়সম্পদ হারিয়েছে।

আমি সেই উজবুক সৎ মানুষটার সাথে অনেক দিন কথা বলেছি। তার মানসিক গড়ন বুঝবার চেষ্টা করেছি। তবে বুঝতে পারি নি কেনো এই বিকার হলো তার। তার সাথে দেখা করবো বলেই বাসা থেকে বের হয়েছিলাম সকালে। অনেকটা পথ পেরিয়ে আসবার পরে মনে হলো একটু সিগারেট ধরানো প্রয়োজন। অনেকক্ষণ রাস্তায় আছি অথচ সিগারেট ধরাই নি, সিগারেটের দোকান খোঁজা শুরু করলাম। খুঁজে পাওয়া কঠিন তবে ১০ মিনিটের ভেতরে একটা খুঁজে পেলাম। সিগারেট ধরিয়ে সিএনজিতে উঠবার সময় দেখলাম চালকের মুখ গোমড়া। ভেতরের অসস্তিকে দমন করবার চেষ্টা করেও সিগারেট বিস্বাদ লাগে, ছুড়ে ফেলে দেওয়ার সময় দেখলাম দৃশ্যটা।
এয়ারপোর্ট রোডে নেভী বীভৎস, কুৎসিত একটা ভাস্কর্য করেছে, এতটা জঘন্য কোনো ভাস্কর্য শহরের রাস্তায় থাকা উচিত নয়, তবে উত্তরা শহরের বাইরে, শহরের চেয়ে কমদামী, উনশহর, সেখানে হাঁটুলরা কি ভাস্কর্য বানাবে এটা নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না। কূৎসিত সেই ভাস্কর্যের সামনে একটা উলঙ্গ পাগল দাঁড়িয়ে, তার পাশে টুপি মাথায় এক মানুষ রমজানের সাইনবোর্ড।

অসৎ হয়ে যাওয়ার যাবতীয় প্ররোচনা বিদ্যমান এমন বাস্তবতায় সেই মানুষটার সততা বিষয়ে আমার সংশয় নেই। সেই মানুষটাকে হঠাৎ করেই এই উলঙ্গ পাগলের তুল্য মনে হলো, ভেতরের সৎ মানুষটাকে নিরাবরন উন্মোচিত করতে যে পরিমান অকল্পনীয় সাহস এবং নির্বিকারত্ব প্রয়োজন, সৎ থাকবার কোনো প্রণোদনা না থাকলেও সেই মানুষটার এই নির্বিকার সাহস আছে, বিদ্যমান বাস্তবতাকে উপহাস করে নির্বিকার অনটন মেনে নেওয়ার পাগলামী আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৪২
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×