somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের অসাধারন একজন আলমগীর এর গল্প - (লিঙ্ক সহ)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
















‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের গল্প’ পরিচ্ছেদে এবার সবাইকে এমন একজন অভিনেতা সম্পর্কে আপনাদের জানাবো যিনি আমাদের চলচ্চিত্রে তিন দশক ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র/ নায়ক চরিত্রে অভিনয় করে গেছেন এবং এখনও অভিনয়ের সাথেই আছেন। তিনি আর কেউ নন তাঁর নাম আলমগীর যাকে সবাই ‘নায়ক আলমগীর’ হিসেবেই চেনে। তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের তালিকায় ২য় অবস্থানে আছেন । অর্থাৎ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নায়করাজ রাজ্জাকের পরেই যিনি নিজের আসন পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন বহু আগেই তিনি হলেন জীবন্ত কিংবদন্তী আলমগীর ।

১৯৫০ সালের ৩রা এপ্রিল আলমগীর জন্মগ্রহন করেন । তাঁর পিতার নাম দুদু মিয়া যিনি সেই সময়ের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন । ১৯৫৬ সালে নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ এর প্রযোজক ছিলেন আলমগীরের পিতা দুদু মিয়া । সেই সুত্রেই সিনেমার সাথে ছোটবেলা থেকেই আলমগীরের পরিবারের জানাশোনা । ‘আমার জন্মভুমি’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে আলমগীর এর বাংলা চলচ্চিত্রে আগমন। এরপর ৭০ দশকের মাঝামাঝি থেকে ৯০ দশকের প্রথম পর্যন্ত একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায় । আলমগীর শুধু চলচ্চিত্রে একজন অভিনেতা হিসেবেই থেমে থাকেননি তিনি একাধারে একজন প্রযোজক, পরিচালক ছিলেন। সেই সময় সকল প্রযোজক ,পরিচালক এর কাছে আলমগীর ছিলেন সবচেয়ে আস্থাশীল ও নির্ভরশীল একজন অভিনেতা । সামাজিক অ্যাকশন , পারিবারিক টানাপোড়ন, রোমান্টিক অ্যাকশন। ফোক ফ্যান্টাসি সহ সব ধারাতেই আলমগীর ছিলেন সফল । যার ফলে সব ধরনের চরিত্রে আলমগীর ছিলেন মানানসই। বাংলাদেশের সর্বাধিক (৬৭টি) ছবির পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝনটু পরিচালিত ৪০ টি ছবিতেই আলমগীর অভিনয় করেন। এতেই বুঝা যায় যে আলমগীরের উপর নির্মাতারা কি পরিমান আস্থা রাখতেন। কলেজ পড়ুয়া তরুন ছাত্র, পুলিশ অফিসার, মাস্তান, গ্রাম্য যুবক, সহজ সরল বোকা যুবক, ব্যর্থ প্রেমিক, রাজকুমার, বড় ভাই, পিতা সহ সব ধরনের চরিত্রে আলমগীর ছিলেন সফল। চলচ্চিত্রে আলমগীর এমনই আস্থাশীল ছিলেন যে কিছু পরিচালক শুধু আলমগীর ছাড়া তাদের ছবিতে অন্য কাউকে চিন্তা করতে পারতেন না। এছাড়া স্বাধীন পরবর্তী বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এমন পরিচালক পাওয়া দুঃসাধ্য যার সাথে আলমগীর কাজ করেনি। আলমগীর এর উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো - আমার জন্মভুমি, দস্যুরানী, মণিহার, দেনা পাওনা, জিঞ্জির, নানটু ঘোটক, ওস্তাদ সাগরেদ, সবুজ সাথী, প্রতিজ্ঞা, ভাত দে, মা ও ছেলে, হালচাল, অস্বীকার, অপেক্ষা, ছেলেকার, বৌমা, মায়ের দোয়া , স্ত্রীর স্বপ্ন, অপরাধী, নিস্পাপ, অশান্তি, স্বামী স্ত্রী, সত্য মিথ্যা, বিশ্বাসঘাতক, দোলনা, চেতনা, অমর, ন্যায় অন্যায়, ক্ষতিপুরন , রাঙ্গা ভাবী , গরীবের বউ, সান্ত্বনা,মরনের পরে, অচেনা, অর্জন, গরীবের বন্ধু , অন্ধ বিশ্বাস , ক্ষমা, অবুঝ সন্তান, বাংলার বধূ, পিতা মাতা সন্তান, শাসন, দেশপ্রেমিক, স্নেহ, অজান্তে সংসারের সুখ দুঃখ, জজ ব্যারিস্টার, রাগ অনুরাগ, ঘাতক , বাপের টাকা সহ প্রায় ২ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন । ৭০ দশকের শেষ প্রান্তে দিলিপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘জিঞ্জির’ ছবিতে প্রথম একই ছবিতে নায়করাজ রাজ্জাক ও সোহেল রানা’র সাথে সমান তালে অভিনয় করে তিনি নিজের অভিনয়ের দক্ষতা দেখিয়ে সবার কাছে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন । এরপর ৯০ দশকের শুরুতে নায়করাজ রাজ্জাক ও অভিনেত্রী শাবানার সাথে মতিন রহমানের ‘অন্ধ বিশ্বাস’ ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন । ৭০ দশকের শেষ প্রান্তে গীতিকার খোশনূর আলমগীর এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। আলমগীর -খোশনূর দম্পতির কন্যা আঁখি আলমগীর (সঙ্গীত শিল্পী) ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। ১৯৮৬ সালে আলমগীর তাঁর প্রযোজিত ‘নিস্পাপ’ ছবি পরিচালনা করে পরিচালক হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন। উল্লেখ্য যে ‘নিস্পাপ’ ছবির একটি গানে আলমগীর কণ্ঠ দেন যা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল । সেই গানটিই ছিল অভিনেতা আলমগীর এর প্রথম কোন ছবির গানে কণ্ঠ দেয়া গান ।

১৯৮৫ সালে ‘মা ও ছেলে’ ছবির জন্য আলমগীর প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন । এরপর অপেক্ষা , ক্ষতিপূরণ, সত্য মিথ্যা, অন্ধ বিশ্বাস , পিতা মাতা সন্তান ও দেশপ্রেমিক ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন যা ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কোন অভিনেতার সর্বাধিকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পাওয়ার বিরল ও একমাত্র ঘটনা। এছাড়া আলমগীর ১৯৮৯ - ৯২ সাল পর্যন্ত একটানা ৪ বার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার ( ক্ষতিপূরণ , মরনের পরে , পিতা মাতা সন্তান ও অন্ধ বিশ্বাস) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে এক অনন্য রেকর্ড করেন যা এখনও কেউ ভাঙতে পারেনি । শুধু ১৯৯৩ সাল বাদ দিয়ে ১৯৯৪ সালে কাজী হায়াত এর ‘দেশপ্রেমিক’ ছবির জন্য আবারও শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন । সর্বাধিক ৭ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার সহ ২০১০ সালে ‘জীবন মরনের সাথী’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা হিসেবে পুরস্কার নিয়ে সর্বমোট ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ।
লেখক - ফজলে এলাহী (পাপ্পু) ( কবি ও কাব্য)
একটি http://www.radiobg24.com এর নিবেদন ।

*** ফজলে এলাহী পাপ্পুর রচিত ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস (১৯৫৬-২০০০)’ এর পাণ্ডুলিপি থেকে আংশিক ও সংক্ষিপ্তকারে প্রকাশিত। কারো চোখে তথ্যগত কোন ভুল ধরা পড়লে দয়া করে সঠিক তথ্যটা জানাবেন । কারন এই লিখাটা আগামীতে একটি বই আকারে প্রকাশিত হবে । ****
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×