মানুষের জীবনে বন্ধু আসে।বন্ধু চলে যায়।এক জীবনে ক'জন বন্ধু আজীবন থেকে যায়?হৃদয়ের বন্ধু,সত্যিকারের বন্ধু,খাটি বন্ধু কার বা কপালেই জোটে?
আজকাল তো বন্ধু খুজতে হয়্না।হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়।সেই বন্ধু আবার ক্ষনিকের পরে হারিয়ে যায় চোখের পলক ফেলার আগেই।কখন মুখের বিবাদে,কখন অস্ত্রের আঘাতে।
ভাই বড় ধন রক্তের বাধনে,যদিও পৃথক হয় নারীর কারনে।বলা হয় ভাইদের মত বন্ধনের সুদৃঢ়তা ও পবিত্রতা জগতে আর নাই।যে কোন দেশের সাথে যদি সম্পর্ক শাপন করেতে চাও,তাহলে আগেই ভাতৃত্ব সম্পর্ক স্হাপন কর।এই ছট্ট জীবনে অনাএক মানুষকে দেখেছি ভাইদের প্রতি তাদের অগাঢ় টান।আবার দেখেছি সামান্য কারনে ভাতৃত্ব বন্ধনের সৌন্দর্ষ হয়েছে খান খান।কখনো নারীর কারনে,কখনো অর্থের প্রলোভনে।
আমার ছোট ভাই হুজাইফা আল আনাস।বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট।উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র।বয়সে দুজনের মাঝে বিস্তর ফারাগ হলেও মনের মধ্যে দুজনের মাঝে নেই একটুও তফাত।আমরা দুই ভাই যখন এক্সাথে বসি তখন অনেক অচেনা লোকেরা এসে বলে দাদা,আপনারা কি দুই ভাই নাকি দুই বন্ধু?লকদের এ কথা শুনে আমাদের দুই ভাইয়ের হাসি পায়।হাসির ঠাট্টার ছলে আমরা দুই ভাই বলি,না দাদা আমরা দুইজন কন ভাই না।আমরা হচ্ছি B&F।আমাদের মুখে B&F শুনে অনেকের চোখ-মুখ কুচকে যায়।কিছু এডভান্স পলাপানেরা এক ধাপ আগাইয়া জিগ্যেস করে,কি বয় ফ্রেন্ড?বয় ফ্রেন্ড শুনে দুই ভাই দুইজনের হাত হাতে তালি দিয়ে হোঃ! হোঃ! করে হাসতে থাকি।আমাদের দুই ভাইয়ের হাসির কান্ড দেখে প্রশ্নকর্তা কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খান।তারপর এদিক-অদিক তাকান।হাসির কারনটা কি বোঝার জন্য।কিছু ধরতে না পেরে প্রশ্নকর্তা অসহায়্র মত আবার জিগ্যেস করেন,B&F মানেটা কি?আমরা দুই ভাই তখন উত্তর দেই B&F মানে Brother & Freind..…
হ্যা আমরা শুধু দুই ভাইনা বন্ধুও বটে।সে শুধু আমার বন্ধু না খাটি বন্ধু।ইংরেজীতে যাকে বলে Best Freind.
আমার জীবনে এক্টাই Best Freind।সে আমার ছট ভাই।সে আমার Best Freind।সে আমার খাটি বন্ধু।সে আমার হৃদয়ের বন্ধু।নিগাঢ় সুহুদ।
মাঝে মাঝে খুব ভয় হয়।মুখের বিবাদে ব্যবহারের আঘাতে বন্ধুটি না আবার কখনো হারিয়ে যায়।ভাইটির সাথে সম্পর্কটা না আবার সাপে-নেউলের মত হয়ে যায়।খোদা হে,সহায় হও তুমি।
আজ ২৯শে এপ্রিল।দুই হাজার তের সাল।আজ থেকে প্রায় আঠার বছর আগে ধরার বুকে এই ভাইটির শুভাগমন ঘটেছিলো।আজ তার শুভ জন্মদিন।
বৃষ রাশির জাতক সে।আমি তুলার রাশির।জ্যোতিষিগণ বলেন,তুলা রাশির জাতক সাথে বৃষ রাশির কখনো বনিবনা হয়্না।আজ আঠার বছর বয়স পর্যন্ত ভাইটির সাথে আমার ব্যাপক মিল।আমাদের সম্পর্কের অট্টুতা দেখে জ্বলে পিড়ে মরে হিংসুকদের দিল।
ইচ্ছে ছিল এবারে অষ্টাশে পা দেঅয়া ভাইয়ের জন্মদিনটা অন্যরকমভাবে উদযাপন কর্বো।গিফট হিসাবে তাকে এবার দেবো এক্টা বাই সাইকেল।সেভাবে প্রস্তুদি নিয়ে রেখেছিলাম।দিল দিল করে মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রেখেছিলাম ৯,৫০০/=
ভাইয়ের জন্মদিনে ভাইকে আর উইশ করা হলোনা।তাকে দিতে পারলামনা তার কাংখিত বাই সাইকেলটি।গত পরশু সকালেই ভেংগেই ফেলেছিলাম মাটির ব্যাংকটি।সব টাকা তুলে দিয়েছিলাম রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপে উদ্ধারের কাজে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে।গত পরশুর দুপুরেই তারা আমার টাকা দিয়ে কেনা অক্সিজেন্টগুলো কিনে আমাকে দেখিয়েছিল মনের সান্তনার জন্যে।গতকাল রাত্রে বিতরনের সুসংবাদটা যখন জানিয়েছিল তখনো কেন যেন আনন্দিত হতে পারিনি।কারন তখন চোখে ছিলো জল।অনেক কাদতেছিলাম।শাহানা মৃত্যুটা প্রচন্ড নাড়া দিয়েছিল।বার বার তার কথাটা কানে বাজছিলো,''ভাই আমার বুকটা কেটে ফেললে আমার বাচ্চারে কি খাওয়ামু?আমার বাসায় একটু খবর দিতে পারবেন?''গতকালকে আমি শুধু একাই কাদি নাই।আমার সাথে কেদেছিল অভিযানে অংশ নেওয়া কমান্ডো সেনা অফিসারও।কেদেছিল সিভিল ডিফেন্সেরসহ সমগ্র দেশবাসী।তার মৃত্যুটা যার হৃদয়েতে ছুতে পারেনি।আমি বলবো,সে মানুষ না।সে একটা নরপিশাচ।
ছোট ভাইয়া,
আমার এ লেখাটি পড়ে তোর হয়্তো মন খারাপ হয়ে যাবে।তুই কষ্ট পেতে পারিছ।কারন যে তোর জন্মদিনের উতসব আর শখের সাইকেলটি।তুই রাগ করিছনা ভাই।আগামী জন্মদিনে তোকে এরচেয়ে চরমভাবে উইশ করমু।আমার আয়োজন দেইখা তুই টাশকি খাইয়া যাইবি।খালি চাইয়া থাকবি।কথা দিলাম ভাই।এই দেখ মাথা ছুইয়া কইছি।রাগ করিছনা আমার লক্ষী ভাইয়া…
তুই বল!
আমাদের প্রতিবেশীরে কষ্টে রাইখা আমরা কি কখনো ফুর্তি করবার পারমু?তুইওকি পারতি বল?!
তোর এবারের জন্মদিনটা মাটি হয় নাই।বরংত আর অনেক সুন্দর হয়েছে।মানবতার কাজে লেগেছে তোর জন্মদিনের উপহারগুল।তোর একটা টাকায় যদি এরা শান্তি পায়।কোন উপকৃত হয় তাহলে তুই কি লোকসানে পড়্বি?কক্ষনো না।বরং একজনকে শান্তি দেওয়ার উসিলায় তুই সারাটা জীবনে শান্তিতে থাকবার পারবি।এই দেখ তর জন্মদিনে সমস্ত ব্লগার,সাধারণ মানুষ,ডিফেন্সের লোক,আর্মী,সাংবাদিক,খেটে খাওয়া মানুষেরা সবাই উইশ করত্ছে।সবাই তর সুন্দর জীবনের কামনা কর্তেছে।সম্মিলিত মানুষের দয়া দয়াল কখনো ফেলবোনা।দেখবি তুই ১দিন অনেক বড় হয়ে গেসিছ।