somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~প্রসঙ্গ: গানের কলি~

৩০ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটা সময় শুধু অন্যদের শোনা গান শুনতাম। ছোটবেলায় খুব অবাক লাগত যখন দেখতাম শুধু গান শুনেই অন্যরা বলতে পারছে সেটা আশার গান নাকি লতার, রফির গান নাকি কিশোরের। আমি পার্থক্য বুঝতাম না স্বরের। একটু বড় হবার পরে খেয়াল করলাম গান শুনে আমি বলতে পারি গায়ক বা গায়িকা কে। তারপর অনেকদিন ধরেই বুঝতাম কিছু মানুষ গানের গলা নিয়ে জন্ম হয় এবং তারাই গান গাইতে পারে। নিজেকে কোন বিশেষ গানের জন্য যে রেওয়াজ করে অনেক অনেক দিন ধরে তৈরি করতে হয় তা ভাবতে পারতাম না। ভাবতাম যারা গান গায় তারা নিজেদের ভাল লাগে বলে প্রতিদিন রেওয়াজ করেন।


কিছু কিছু গানকে খুব সহজ মনে করতাম। জানতাম সেগুলো যে কেউ গাইতে পারে। যেমন আমাদের অতি পরিচিত “সাধের লাউ” গানটি। গানের মাঝে শব্দের উচ্চারন, টান ইত্যাদির ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝলাম আজকালের টিভিতে দেখানো গানের প্রতিযোগিতার (বাংলাদেশের ক্লোজাপ, ইন্ডিয়ার ভয়েস অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান আইডল) অনুষ্ঠান গুলোতে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশি একটা মেয়ে কলকাতার এরকম একটা টিভি অনুষ্ঠানে গাইছিল। গানটা ছিল “সাধের লাউ বানাইল আমায় বৈরাগী”। বিচারক ছিলেন কুমার শানু, রুনা লায়লা। গানটা মেয়েটা ভালই গাইল কিন্তু কিছু একটা নাই বলে মনে হচ্ছিল। কুমার শানু বললেন, গানটার সব ঠিক আছে শুধু গানের শক্তিটাই নাই। তিনি রূনা লায়লাকে অনুরোধ করলেন গাইবার জন্য কয়েকটা লাইন। রুনা লায়লার কন্ঠে শুনবার পরেই বুঝলাম “ওস্তাদের গান” কাকে বলে। এই রকমই এক অনুষ্ঠানে এক বিচারক বলেছিলেন গানের কোন ভাষা নাই। শ্রোতা শুনবে এবং তার ভাল লাগতে হবে। গানের কথা বোঝা যাক আর না যাক। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার একটা সাক্ষ্যাতকার দেখেছিলাম এনটিভির এক অনুষ্ঠানে। তিনি বলেছিলেন, আমেরিকাতে এক অনুষ্ঠানের উনি গান গাইছিলেন। গানটি ছিল “সহে না যতনা” রবীন্দ্রসংগীতটি। তা গান শেষ করবার পরে একজন বিদেশী মহিলা বন্যাকে শুধালেন, “তুমি কি কোন দুঃখের গান গাইছিলে, আমার চোখে পানি চলে আসল”। আসলে একেই বলে হয়ত গানের ভাষা এবং আসল শিল্পীর গান।


ইদানিং রিমিক্সের যুগ চলছে। ভারতের মত আমাদের দেশেও এর হাওয়া বইছে। এই রিমিক্স গুলোতে শুধু মিউজিকের আধুনিকতাই থাকে, গানের মিস্টি ভাবটা পাওয়া যায় না। আসলে গানের মূল শক্তি তার গায়ক/গায়িকার মাঝে। প্রতিটি শব্দের উচ্চারণ, টান দেওয়া। কারো উচ্চ টানে গাওয়া অংশ হৃদয় নাঁড়িয়ে দেয় তো কারোটা চিৎকার বলে মনে হয়। জেমসের গান গুলো কিন্তু চিৎকার মনে হয় না, বোঝা যায় গায়কের বুকের গভীর হতে প্রতিটা শব্দ বেরিয়ে আসছে। ইন্ডিয়ার ঐ গানের অনুষ্ঠান গুলোতে অনেকেই জেমসের গান গাইবার চেষ্টা করে কিন্তু তার মাঝে সেই অনুভব থাকে না।

একই গানের দুইটা ভার্সন দিলাম, শুনে দেখুন। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি টার্ন খেয়াল করুন। আকাশ পাতাল পার্থক্য, অন্তত আমার কাছে। গানটা নজরুলের “শুকনো পাতার নূপুর পায়ে গানটি”। ফাতেমাতুজ্জোহরার গাওয়া গানটিতে অন্য ভাষায় (খুব সম্ভব আরবী বা ফার্সি) কিছু অংশ আছে। বুঝি নাই কিন্তু ভাল লাগল।



ফাতেমতুজ্জোহরার কন্ঠে


মিলার গাওয়া রিমিক্স


সাথে গানের কথাও দিলাম


শুকনো পাতার নূঁপুর পায়ে
নাচিছে ঘূর্ণিবায়
জলতরঙ্গে ঝিলিমিলি ঝিলিমিলি
ঢেউ তুলে সে যায়।।

দীঘির বুকে শতদল দোলে
ঝরায়ে বকুল চাপার কলি
চঞ্চল ঝরণার জলছল ছলি
মাঠের পথে যে ধায়।।

জলতরঙ্গে ঝিলিমিলি ঝিলিমিলি
ঢেউ তুলে সে যায়।।


বনফুল আভরণ খুলিয়া ফেলিয়া
আলু থালু এলোকেশ গগনে মেলিয়া
পাগলিনী নেচে যায় হেলিয়া দুলিয়া
ধুলি ধূসর পায়।।

জলতরঙ্গে ঝিলিমিলি ঝিলিমিলি
ঢেউ তুলে সে যায়।।

ইরাণী বালিকা যেন মোর চারিণী
পল্লির প্রান্তর বন মন হারিণি
হাসে ধেঁয়ে সহশা গৈরিক বরণে
বালুকার উর্ণি গায়।

জলতরঙ্গে ঝিলি মিলিঝিলিমিলি
ঢেউ তুলে সে যায়।।

শুকনো পাতার নূঁপুর পায়ে
নাচিছে ঘূর্ণিবায়
জলতরঙ্গে ঝিলিমিলি ঝিলিমিলি
ঢেউ তুলে সে যায়।।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৪:০১
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×