somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহ পরিচিতি-১২

২৯ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমালোচনা ও ত্রুটি নিদের্শঃ
ইন্দ্রিয় ও অভিজ্ঞতালব্ধ পরিচিতি বস্তুগত ও প্রাকৃতিক বিষয়বস্তুর সীমানায় কার্যকর। ফলে স্পষ্টতঃই প্রতীয়মান হয় যে, শুধুমাত্র অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত বিষয়বস্তুর আলোকে বিশ্বদৃষ্টির মূলনীতিসমূহ ও তৎসংক্রান্ত বিষয়াদির শনাক্তকরণ সম্ভব নয়। কারণ, এধরনের বিষয়গুলো অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের সীমাবহির্ভূত এবং কোন অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানই এ বিষয়গুলোর সম্পর্কে ইতিবাচক বা নেতিবাচক মন্তব্য করতে পারে না। যেমনঃ খোদার অস্তিত্বকে পরীক্ষাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা বা বর্জন (আল্লাহ আমাদেরকে এ থেকে রক্ষা করুন) করা অসম্ভব। কারণ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতার হস্ত এত ক্ষুদ্র যে, অতিপ্রকৃতির আঁচলকে ষ্পর্শ করতে অপারগ এবং আপন বস্তুগত বিষয়ের সীমাবহির্ভূত কোন কিছুকে প্রতিষ্ঠা বা বর্জন করতে অক্ষম।
অতএব, অভিজ্ঞতালব্ধ ও বৈজ্ঞানিক বিশ্বদৃষ্টি (পারিভাষিক অর্থে বিশ্বদৃষ্টি, যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) মরীচিকা বৈ কিছুই নয়। সুতরাং প্রকৃত অর্থে একে বিশ্বদৃষ্টি নামকরণ করা যায় না।
তবে সর্বোপরি একে বস্তুজগত পরিচিতি বলা যেতে পারে। এছাড়া এধরনের পরিচিতি বিশ্বদৃষ্টির মৌলিক প্রশ্নসমূহের জবাবদানেও অক্ষম।
কিন্তু যে সকল পরিচিতি ধর্মবিশ্বাসের মাধ্যমে অর্জিত হয় (যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) সেগুলো দ্বি-স্তর বিশিষ্ট এবং পূর্বেই ঐগুলোর উৎস বা উৎসসমুহের উপর আস্থা স্থাপন করতে হয়। অর্থাৎ প্রথমে কারো নবুওয়াত প্রাপ্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে; অতঃপর তার বাণী বৈধ বলে পরিগণিত হবে। তবে সর্বাগ্রে বাণী প্রেরক অর্থাৎ মহান আল্লাহর অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে হবে । আর এটা সুস্পষ্ট যে, বাণী প্রেরকের মূল অস্তিত্ব এবং তদনুরূপ বাণী বাহকের নবুওয়াতকে বানী নির্ভর দলিলের মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় না। যেমনঃ বলা যাবে না যে, যেহেতু কোরআন বলে আল্লাহ আছেন সেহেতু তাঁর অস্তিত্ব প্রমাণিত হল। তবে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণিত হওয়ার পর এবং ইসলামের নবীর শনাক্তকরণ ও কোরআনের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার পর, অন্যান্য গৌণ বিশ্বাসসমূহকে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। অনুরূপভাবে কার্যকরী বিধি-নিষেধ সমূহও বিশ্বস্ত সংবাদদাতা ও বিশ্বস্তসূ্ত্রের মাধ্যমে গৃহীত হতে পারে। কিন্তু মৌলিক বিশ্বাসমূহকে তৎপূর্বে অন্য কোন উপায়ে সমাধান করতে হবে।
অতএব, ধর্মবিশ্বাসগত পরিচিতিও বিশ্বদৃষ্টির মৌলিক বিষয়সমূহের সমাধানে অক্ষম। তবে এরফানী ও এশরাক্বী পদ্ধতির ব্যাপারে অনেক বক্তব্য রয়েছেঃ
প্রথমতঃ বিশ্বদৃষ্টি হল এক প্রকার পরিচিতি, যা মস্তিষ্কপ্রসূত ভাবার্থসমূহ থেকে রূপ
পরিগ্রহ করে। কিন্তু অন্তর্জ্ঞানের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কপ্রসূত বোধদ্বয়ের কোন স্থান নেই। অতএব এধরনের ভাবার্থসমূহকে অন্তর্জ্ঞানের বরাত দেয়া উদাসীনতা ও এর নামান্তর বৈ কিছুই নয়।
দ্বিতীয়তঃ অন্তর্জ্ঞানের ব্যাখ্যা এবং ভাষা ও ভাবার্থের কলেবরে তাদের বর্ণনা বিশেষ মানস-দক্ষতার উপর নির্ভরশীল, যা সুদীর্ঘ সময়ের বুদ্ধিবৃত্তিক অভিজ্ঞতা এবং দার্শনিক বিশ্লেষণ ব্যতিরেকে অসম্ভব। যারা এধরনের অভিজ্ঞতার অধিকারী নন প্রকৃতপক্ষে তারা সদৃশ শব্দ ও ভাবার্থকে ব্যবহার করে থাকেন যা বিচ্যুতি ও বিপথগামিতার এক বৃহত্তর কারণ।
তৃতীয়তঃ প্রকৃতপক্ষে যা অন্তর্জ্ঞানের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়, তা মস্তিষ্কে অংকিত তার কল্পিত চিত্র ও বর্ণনা এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা এমনকি স্বয়ং অন্তর্জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তির জন্যেও ত্রুটিযুক্ত হয়ে থাকে।
চতুর্থতঃ ঐ সকল বাস্তবতা, যাদের মস্তিষ্কপ্রসূত ব্যাখ্যা বিশ্বদৃষ্টি বলে পরিচিত; তাতে উপনীত হওয়ার জন্যে বর্ষপরমপরায় এরফানী সাধনার প্রয়োজন। আর গভীর সাধনালব্ধ এ প্রক্রিয়ার (যা বাস্তব পরিচিতিসমূহের অন্তর্ভূক্ত) অনুমোদন, তাত্তিক ভিত্তি ও বিশ্বদৃষ্টির মৌলিক বিষয়সমূহের উপর নির্ভরশীল। অতএব, সাধনার প্রারম্ভেই এ বিষয়গুলোর সমাধান অনিবার্য। আর এ প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে অন্তর্জ্ঞানগত পরিচিতি অর্জিত হয়ে থাকে। মূলতঃ প্রকৃত এরফান তার জন্যেই প্রযোজ্য, যিনি মহান সৃষ্টিকর্তার দাসত্বের পথে বিনীতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারেন। আর এধরনের প্রচেষ্টা প্রভুর পরিচিতি, তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্যের উপর নির্ভরশীল ।
সিদ্ধান্তঃ
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি যে, বিশ্বদৃষ্টির মৌলিক
বিষয়সমূহের সমাধান যারা খুঁজে থাকেন তাদের জন্যে একমাত্র উন্মুক্ত পথ হল বুদ্ধিবৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপলব্ধির পথ। ফলে এর আলোকে বলতে হয়, দার্শনিক বিশ্বদৃষ্টিই হল প্রকৃত বিশ্বদৃষ্টি।
তবে মনে রাখা উচিৎ যে, উল্লিখিত বিষয়সমূহের সমাধানকে বুদ্ধিবৃত্তিক পথে সীমাবদ্ধকরণ ও দার্শনিক বিশ্বদৃষ্টিকেই একমাত্র বিশ্বদৃষ্টিরূপে পরিগণনের অর্থ এ নয় যে, সঠিক বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি লাভের জন্যে সকল দার্শনিক বিষয়েরই সমাধান করতে হবে। বরং কয়েকটি সরল দার্শনিক বিষয় যেগুলো প্রায় স্বতঃসিদ্ধ সেগুলোর সমাধানই আল্লাহর অস্তিত্ব (যা বিশ্বদৃষ্টির মৌলিকতম বিষয় বলে পরিগণিত) প্রমাণের জন্যে যথেষ্ট। তবে এ ধরনের বিষয়সমূহের উপর পারদর্শিতা এবং সকল প্রকার সমস্যা ও দ্বিধার উত্তরদানের ক্ষমতা অর্জনের জন্যে অধিকতর দার্শনিক পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আবার মৌলিক সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্যে অর্থপূর্ণ পরিচিতিকে বুদ্ধিবৃত্তিক পরিচিতিতে সীমাবদ্ধকরণের অর্থ এ নয় যে, অন্যান্য জ্ঞাত বিষয়সমূহ, এ বিষয়গুলোর সমাধানের ব্যাপারে ব্যবহৃত হবে না। বরং অধিকাংশ বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ জ্ঞান, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে প্রতিজ্ঞারূপে প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেমনঃ দ্বিতীয় পর্যায়ের বিষয়সমূহ ও গৌণ বিশ্বাসগত বিষয়সমূহের সমাধানের ক্ষেত্রে ধর্মবিশ্বাসগত পরিচিতিকে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এগুলোকে কিতাব ও সুন্নতের (দ্বীনের বিশ্বস্ত উৎস) বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে প্রমাণ করা যেতে পারে ।
পরিশেষে, সঠিক বিশ্বদৃষ্টি ও মতাদর্শে উপনীত হওয়ার পর গভীর আধ্যাত্মিক সাধনার
পর্যায়সমূহ অতিক্রম করতঃ উদঘাটন ও পর্যবেক্ষণের (অন্তর্চক্ষু) স্তরে পৌঁছা যায় এবং বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত এমন অধিকাংশ বিষয় সম্পর্কে, মস্তিষ্কগত ভাবার্থসমূহের সাহায্য ব্যতীতই অবগত হওয়া সম্ভব। সংগৃহিত
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×