somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাবধানে কথা বলেন, Big brother is hearing u....

২৮ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জর্জ অরওয়েলের উপন্যাস নাইনটিন এইটি ফোর আমি পড়ি নাই। এইটা নিয়া সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের একটা লেখা পড়ছিলাম। এখন ওয়েবে খুঁজে-পেতে কিছু ফ্ল্যাপ জাতীয় লেখলাম পড়লাম। আমাদের এক প্রথিতযশা লেখক কইছেন, ব্লগে যারা লেখে হেরা নাকি খালি ফ্ল্যাপ পড়া জ্ঞান ঝাড়ে। উনি আমার এই উল্লেখে খুশী হইতে পারেন। জীবনে মেলা আস্ত বই পড়ছি, কিন্তু ব্লগ করার অপরাধে বুদ্ধিজীবীরা আমাদের ফ্ল্যাপ পড়া লেখক কইতে চান। তাদের জন্য একটা রেফারেন্সের ব্যবস্থা করলাম। হ, ১৯৮৪ উপন্যাসের খালি ফ্ল্যাপই পড়ছি আমি। আর এখন এইটা নিয়া জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলবো? কোনো অসুবিধা আছে?
১৯৮৪ উপন্যাসের ফ্ল্যাপ খুঁজতে গিয়া আজকে একটা তথ্য পাইলাম, জর্জ অরওয়েলের আসল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। আর তার জন্ম হইছিল ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার বিহারে মতান্তরে বাংলায়। এনিমেল ফার্ম (Click This Link) পড়ার সময় মেলা কিছু খিয়াল করি নাই। তখন বেশ সমাজতান্ত্রিক আছিলাম। তাই রাগে গরগর কইরা পইড়া গেছি অরওয়েলের সমাজতান্ত্রিক সমালোচনা। মজা পাইছি, হাসছি আবার ব্যথাও পাইছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাইনা নিছি জিনিশটা ভাল। সমাজতন্ত্রের সমালোচনা ভালই হইছে তাতে। যাই হউক কথা হইতেছিল ১৯৮৪ (Click This Link) উপন্যাস নিয়া। এই উপন্যাসও সমালোচকদের মতে, যথারীতি স্টালিনীয় মডেলের সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে। যেইখানে বিগ ব্রাদার নামে এক ব্যক্তি এমন এক ব্যবস্থা কায়েম করছেন যে, তিনি যে কোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত চলাফেরা, কথাবার্তা ইত্যাদি দেখতে/শুনতে/পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। ফলে ওশেনিয়ার এয়ারস্ট্রিপ ওয়ান ঘটনাস্থল। এই রাষ্ট্র শাসিত হয় পার্টির দ্বারা। পার্টির নেতা রহস্যময় বিগব্রাদার। উনি সব কিছু দেখেন, শুনেন, জানেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ছাড়া ওনারে আর কেউ দেখতে পায় না। উপন্যাসের একটা লাইন বারবার রিপিট হয়েছে। বিগব্রাইজ ওয়াচিং ইউ। বড় ভাই আপনারে দেখতেছে। মানে সাবধান। বড়ভাইয়ের যন্ত্র আপনের সবকিছু রেকর্ড কইরা রাখতেছে। আপনের চলাফেরার সবকিছু তার নখদর্পনে। বলাবাহুল্য, বিগব্রাদারের অবাস্তব, ফালতু শাসন টিকায়ে রাখার অবলম্বন হইলো এই পর্যবেক্ষণ যন্ত্র। যা দিয়ে রাষ্ট্রের নাগরিকদের ভীতি-শঙ্কা ও অপরাধবোধের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। আর সেই ভীতির ফল হিসাবে বিগব্রাদাররা কোনো সমস্যা ছাড়াই শাসন অব্যাহত রাখতে পারেন। আপনাদের আরও মনে পড়বে, ক্রিস্টভ কিসলোস্কির রেড সিনেমার কথা। সেখানেও স্টালিনীয় শাসনের আভাস এসেছে। অরওয়েল-কিসলোস্কির আমলে সোভিয়েট বলতেই এমন বিগব্রাদারের শাসন বুঝাইতো। কিন্তু ওনারা যদি আরেকটু পরে জন্মগ্রহণ করতে তাইলে দেখতেন, পুঁজিবাদী মুক্তবিশ্ব কেমনে ওয়াচ করে। কেমনে বিগব্র্রাদারের ভূমিকা পালন করে। আর সর্বব্যাপ্ত নজরদারির জন্য তার সর্বশক্তি নিয়োগ করতে পারে।
টনি স্কটের দেজা ভু সিনেমাটা অনেকেই দেখছেন। সেইখানে অতীত কালে চইলা যাওয়ার একটা উপায় তৈরি হয়। নায়ক ঘটনার মধ্যে ঢুকে একটা খুন বন্ধ করার জন্য সেই উপায় ব্যবহার করে। সেইখানে দেখানো হয়, একজন নারীর খাসকামরার ব্যক্তিগত কাজকর্ম পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডারে রেকর্ড হয়া আছে। আপনাদের কি ধারণা? এইটা ফিকশন?
দেজা ভু যারা মিস করছেন তারা হয়তো টুয়েনটিফোর (http://en.wikipedia.org/wiki/24_(TV_series)) দেখছেন। রাষ্ট্রীয় একটি বাহিনী আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কেমনে তার নাগরিকদের ওপর নিশ্ছিদ্র নজরদারি কায়েম করতে পারে তার সবচেয়ে ভাল উদাহরণ ২৪। এই সিরিয়ালটা বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায়। কিনে দেখতে পারেন চাইলে। এটা ফিকশন বটে। কিন্তু এতে ঘটে যাওয়া অনেক কিছুই সম্ভব। স্যাটেলাইট ইমেজ, রাস্তার ট্রাফিক ক্যামেরা, লাইটে পোস্টের ক্যামেরা এটা সেটা দিয়ে যে কাউকে তো লিভিং রুম পর্যন্ত অনুসরণ করা সম্ভব। গুগল ম্যাপ দেইখা প্রথম দিন এই কারণেই টাসকি খায়া গেছিলাম।
যাই হউক, ঘটনা হইলো। স্টালিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন নাই। তার পতনের আগে থেকেই আমেরিকা বা পাশ্চাত্যের দেশগুলাতে নাগরিকদের ওপর নজরদারি ছিল। নজরদারির ভিত্তিতে তারা কাজ চালাইতো। কিন্তু সেইখানে বিষয়টা সোভিয়েট ইউনিয়নের মতো নোংরামির পর্যায়ে যায় নাই। নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনে তারা নজর দিয়েছে কিন্তু হাত দেয় নাই। তেমন নজির কম। প্রায় পাওয়াই যায় না।
কিন্তু টুইনটাওয়ার হারানোর পর আমেরিকার মাথা গরম হয়া গেছে। শুধু আমেরিকা-ইউরোপ না সন্ত্রাস-বিরোধী যুদ্ধের হুংকার দিয়া তারা প্রায় সবার মাথা নষ্ট কইরা দিছে। সন্ত্রাস দমনের জন্য তারা বহু আইন পাশ করছে, নাগরিক অধিকারে হাত দিয়েছে। ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ, যোগাযোগ ব্যবস্থায় তারা হস্তক্ষেপ করার অধিকার নিয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যক্তি তথ্য ও যোগাযোগের তথ্য আদালতে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে বইলাও বিধান তৈরি করছে। ইন দ্য নেম অফ টেরর, আমেরিকা সারা পৃথিবীতেই তথাকথিত স্টালিন রাজ তৈরি করতে উদ্যত। এখন আপনাদের জিগাই, সমাজতন্ত্রের নামে শুধু সোভিয়েটে এইরকম শাসন তৈরি করার দায়ে স্টালিনকে গালি দিলাম কেন এতদিন তাইলে আমরা?
আমেরিকায় যখন এই পরিস্থিতি তখন বাংলাদেশে কী হবে? সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের আমরাও বিশাল অংশীদার, সহমর্মী ও সহভাগী? আমরা না আমাদের শাসকরা? যাই হোক, পাকিস্তান যখন নাকি আফগানিস্তানের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে জড়ায় তখন কোনো এক কামেল ব্যক্তি কইছিলেন, পাকিস্তান আফগানিস্তানের যুদ্ধরে নিজের দিকে টানতেছে। এখন তো দেখা গেল তাই। আফগানিস্তানের যুদ্ধ পাকিস্তানে ছড়ায়ে পড়ছে।
সো, আমেরিকার সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ মানে অন্যের যুদ্ধ নিজে করা। নিজের যুদ্ধ নিজেকে নিজের পদ্ধতিতেই করতে হবে। অন্যের যুদ্ধ কইরা লাভ নাই।
আমেরিকার যখন এই অবস্থা তখন বাংলাদেশে নাগরিকদের ওপর নজরদারির কী হাল?
পাকিস্তান আমল থিকাই নাকি গোপনে টেলিফোন কল রেকর্ড হয়, সেই রেকর্ডের ভিত্তিতে অপারেশন হয়। কিন্তু মামলা হবে কেমনে? কারণ টেলিফোন কল রেকর্ড করাই তো অবৈধ। অসাংবিধানিক। ফলে, এক কারণে অন্য মামলা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই কলরেকর্ড নজরদারি কমে নাই। বেড়েছে। শাসকরা নিজেদের দরকারে নজরদারির প্রয়োজনে ব্যাপারটা বাড়াইছে। সামরিক শাসন আমলে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, যোগাযোগ ও প্র্রাইভেসি রক্ষার স্বাধীনতার কথা শোনা যাইতো। এখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আইসা ঠেকছে কর্পোরেট মতপ্রকাশের স্বাধীনতায়। যোগাযোগ ও প্রাইভেসি রক্ষার স্বাধীনতার কথা শুনা যায় না। বিদেশীরা এখন এইসবরে চাইতে কপিরাইটের অধিকার নিয়া বেশি চিন্তিত। কারণ, সমাজতন্ত্র-বিরোধীতার বিজনেস শেষ। এখন বিজনেস ঘুইরা গেছে গা।
ঘটনা এইখানে আইসা দাঁড়াইলো যে, ছয়মাসের জন্য নাকি মোবাইল ফোনের কথাবার্তা মেসেজ রেকর্ড কইরা রাখা হবে। মোবাইল ব্যবহারকারীদের তথ্য সংরক্ষণ করবেন, ভাল কথা। অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের শনাক্ত করবেন, সেটাও ভাল কথা। কিন্তু তাই বলে, সবাইরে সন্দেহের মধ্যে ফেইলা রেকর্ড করা? আজিব ব্যাপার? বাংলাদেশে কি এই আইন হইছে নিকি যে, এই তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা যাবে? ফোনের কথাবার্তা, ইমেইল চ্যাট বৈধ আলামত হিসাবে ব্যবহার করা যাবে?
না এই সরকারকে দোষ দেয়ার কিছু নাই। এনারা এইসব ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমল থেকেই উদ্যোগগুলা আগাইতেছে। বিএনপি এইগুলারে আরো পাকাপোক্ত করছে। কিছু আইন করছে। এই সরকার কিছু করছে।
ধীরে ধীরে ব্যাপারগুলা রূপ পাইতেছে।
কিন্তু এর মধ্যে সমস্যা অন্যখানে। এই বিষয়গুলা নিয়া না দেখি কোনো কভারেজ। না দেখি কোনো কথাবার্তা। না দেখি কোনো বিচার-বিশ্লেষণ। তাইলে তো ঠিকই আছে, কী বলেন?
যে দেশে নাগরিকদের মধ্যে এইগুলা নিয়া মাথাব্যথা নেই। সে দেশে নজরদারিতে কোনো অসুবিধা তো থাকার কথা না।
কিন্তু এই কথাটা মনে রাইখেন,
সাবধানে, সমঝে কথা কইয়েন। বড়ভাই কিন্তু সব শুনতেছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ৮:২১
২৩টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×