somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশী অসুস্থতায় দেশী ওষুধ

২৭ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি বিদেশে আসার সময় বুদ্ধি করে ব্যাগে ভরে কয়েকখান ওষুধ নিয়া আসছিলাম। চিন্তা কর্ছিলাম, বিদেশে-বিভূইয়ে যাইতেছি। না জানি কি হয়। জ্বর, ঠাণ্ডা, মাথাব্যথা, পেটের অসুখের ওষুধ আর এক কোর্স এন্টিবায়োটিক।
প্রথম যে অসুস্থতার মধ্যে পর্ছি তা হইলো খেলতে গিয়া হাঁটুতে সামান্য একটু ব্যথা পাওয়া। আমার অভিজ্ঞতায় বলে এই সামান্য ব্যথারে পাত্তা দেওয়ার কিছু নাই। পাত্তা না দিলে এইসব জিনিস এমনিতেই ভালা হয়। মাগার আমার অভিজ্ঞতাকে ধূলিস্যাত কইরা দিন দিন হাঁটু ফুলতেই লাগলো। হাঁটুতে ছোট্ট একখান ফোঁড়ার মতো হইছিলো। সেইটা দিন দিন বাড়া শুর করলো।
কয়দিনের মধ্যেই জ্বরে অবস্থা খারাপ হইয়া গেল। হাঁটুর কাছটা ফুইলা এমন হইলো যে, বিদেশে আইস্যা সত্যিকার একখান বিপদে পর্ছি বইলা মনে হইতে লাগলো। ডাক্তার-ফাক্তার আমার দুচক্ষের বিষ (ব্লগের ডাক্তাররা আবার মাইন্ড খাইয়েন না)। বুঝতেছিলাম এইবার ডাক্তারের কাছে না গেলে আর রক্ষা নাই।
বৃটেনে আসার আগে আমার এইখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে কুনো ধারণা ছিল না। শুনছিলাম এখানকার চিকিৎসা ফ্রি। তয় তা কতোখানি ফ্রি সে সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ ছিল।
বন্ধুর পরামর্শে মেডিকেল সেন্টারে ফোন কর্লাম। তারা আমার অসুস্থতার কথা জিজ্ঞাসা করে। ঘটনা খুইলা জানানোর পর তাগো ওখানে যাওয়ার তারিখ আর সময় বইলা দিলো।
সময় মতো খোড়া পা নিয়া বহু কষ্টে মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে হাজির হইলাম। সেখানে গিয়া কাউন্টারের সামনে দাঁড়াইয়া ঘটনাটা বুঝার চেষ্টা করতেছি। দেখি পাশে একটা টাচ স্ক্রিন অলা কম্পিউটার আছে। লোকজন কেউ কাউন্টারে গিয়ে নিজের আসার খবর জানাইতেছে না। কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা না কইরাই আমি কম্পিউটারটা দেখতে লাগলাম। বুঝলাম এইখানেই আমার আসার খবরটা জানাইতে হইবে।
মনিটরে ৮-১০ টা ভাষায় কি কি যানি লেখা ছিল। আমি বাংলার উপরে ক্লিক মারলাম। বাংলায় লেখা আসলো.... আপনার জন্ম তারিখ সিলেক্ট করুন। ইংল্যান্ডে বাংলায় কম্পিউটার ব্যবহার করতে পেরে বেশ ভালাই লাগতেছি‍লো। মনিটরের নাম্বারগুলোর উপর টাচ করে করে আমার জন্মতারিখটা লিখ্যা দিলাম। এরপর দেখি বাংলায় লেখা আসলো.. অপেক্ষা করতে কয়। মাগার আমার নামটা জিগাইলো না। কম্পিউটারে আমার সুন্দর নামটা বাদ দিয়া জন্ম তারিখ নিয়া কেন ফালাফালি করলো এইটা আমার কাছে আজও এক রহস্য রইয়া গেল :-*
আমি পাশের সিটগুলোতে বইসা টিভিতে কিছুক্ষণ কার্টুন দেখলাম। এইখানকার টিভিতে ১৫ মিনিটের একটাই কার্টুন আছে। শেষ হইলে আবার একটাই নতুন কইরা শুরু হয়। তারা মনে হয় চিন্তা করছে রুগি মানুষ এতো কিছু বুঝবার পারবো না।
কিছুক্ষণ পর একজন অ্যাপ্রন পরা বৃটিশ ভদ্রলোক আমার নাম ধইরা ডাকাডাকি শুরু কর্লো। আমিও তাড়াতাড়ি তার সাথে রওনা দিলাম। বৃটিশ লোকটা ডাক্তার নাকি আমার সন্দেহ হইতেছিলো। কারণ আমার অভিজ্ঞতায় দেখছি বাংলাদেশে ডাক্তাররা রুগীর নাম ধইরা জীবনেও ডাকাডাকি করে না।
সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা তো পুরা ভিভিআইপি। চেয়ার থেইকা নাড়ানো কঠিন ব্যাপার...। মাগার চিন্তা কইরা বাইর কর্লাম, এইখানকার মেডিকেল সেন্টারে কোনো পিওন টিওন থাকার কথা না। পরে বুঝছিলাম দেশের ডাক্তারগো অমন ভাব দেইখাই রুগিরা অর্ধেক ভাল হয়ে যায়। এই কারনেই মনে হয় বৃটিশ ডাক্তারের ওষুধে অনেকদিন আমার কোনো উপকার হয় নাই :)
উচা একখান চেয়ারে আমাকে বসাইয়া সেই লোক আরো যন্ত্রপাতি বাইর কইরা পরীক্ষা শুরু কর্লো। এরপর এই লোককে অল্প অল্প ডাক্তার বইলা মনে হইতেছিলো। সে আমার হাঁটুর অবস্থা দেইখা ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ কর্লো। আরো আগে কেন তার সাথে যোগাযোগ করিনাই এ বিষয়েও কিছু কথা শুনা লাগলো।
এরপর সে আমারে আরেক রুমে পাঠায় দিলো। কইলো তোমার ড্রেসিং হবে। আমি একটু চিন্তায় ছিলাম। বৃটিশগো কুনো বিশ্বাস নাই। আবার না পা টা কাইটাই ফালায়।
গিয়া দেখি, যা ভাবছিলাম তাই। অনেক ছুরি কাঁচি সাজাইয়া এক মহিলা বইসা আছে। দেইখাই আমার বুকটা ধক ধক করতে লাগ্লো :-/
তাই তাকে প্রথমেই জানাইয়া দিলাম যে, আমি কিন্তু ছুরি কাঁচিকে ব্যাপক ভয় পাই। সে কি বুঝল জানি না। গম্ভীর মুখে বড় একটা স্টিকারের মতো জিনিস আইনা আমার হাঁটুর উপরে লাগাইয়া গিলো। এইবার আমি এগো অদক্ষতার বিষয়ে নিশ্চিত হইলাম। আরে বাবা আগে জীবাণু মুক্ত করবি না? মুখে তাও কিছু কইলাম না। ক্ষমতা এখন তাগো হাতে... :((
আরেকটা স্টিকার হাতে ধরাইয়া দিলো। কয়, কালকে এইটা খুইলা আরেকটা লাগাইতে হবে।
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়া দোকানে গেছি। দেখি এন্টিবায়োটিক ওষুধের দাম সাত পাউন্ড। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় হাজার খানেক। ফার্মেসি থেকে জিগায় তুমি কি এই ওষুধের জন্য টাকা দিতে চাও?
মনে মনে কই, তাইলে তোমরা কি মাগনা ওষুধ দিবা? এই দেশে ব্রিটিশগো ফ্রি ওষুধ দেয়। আমগো জন্য ফ্রি ওষুধ নাই। বহুত কষ্টে পাউন্ড বের করে ওষুধ কিনলাম। মনে মনে হিসাব করা শেষ। এই টাকা দিয়া বাংলাদেশে ভালো ডাক্তারের ফি আর ওষুধ কিনার পরও বড়জোর হাফ টাকা খরচ হইতো। হায়রে বৃটিশের ফ্রি চিকিৎসা...
বাংলাদেশে এন্টিবায়োটিক খাইতে হয় খাওয়ার পরে ভরা পেটে। এইখানকার ডাক্তাররা কয় খাওয়ার আগে খালি পেটে ওষুধ খাইতে। ডাক্তারের কথা মতো বেলায় বেলায় বৃটিশ ওষুধ খাইলাম। অবস্থা কিছুটা উন্নত হইলেও পুরোপুরি সারলো না।
তাই কয়দিন পর আবার ডাক্তারের কাছে যাইতে হইলো। ডাক্তার সব দেইখা আবার এন্টিবায়োটিক দিলো। আবারও হাজার খানেক টাকা কুরবানি হইয়া গেল... :((
এরপর দেখা যাইতেছিলো সারছে। জ্বর নাই। মাগার কয়দিন পর আবার হাঁটু ফুলা শুরু করলো। এইবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইতে একটু দেরী হইয়া গেল। এর মধ্যে পায়ের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হইয়া গেল। ব্যথায় পা-টা কাইটাই ফেলতে হয় কিনা এই সন্দেহটা জোরালো হইতে লাগলো...। আবার ডাক্তারের কাছে গেলাম। এইবার ডাক্তার ওষুধ ডাবল কইরা দিলো। ডাবল দাম দিয়া ডাবল ওষুধ খাইতে খাইতে বৃটিশ ওষুধ আর ডাক্তারের উপর থেইকা আমার বিশ্বাস পুরাপুরি নাই হইয়া গেল। এইসব বৃটিশরা কোনো কামেরই না, এই বিষয়ে কুনো সন্দেহ রইলো না। চিকিৎসার জন্য দেশেই যাইতে হবে বইলা চিন্তা করতেছিলাম....
ডাবল ওষুধের পুরা কোর্স শেষ কর্লাম। দেখা যাইতেছিলো সারছে। দুইদিন যাবার পর দেখি আবার হাঁটুতে ব্যথা। এইবার ব্যাগ গুছাইতে গিয়া দেশ থেকে আনা অ্যান্টিবায়োটিকটা চোখে পড়লো। ভাবলাম এইটাই দিনে চারবার কইরা খাই। হাজার হোক দেশি মাল। বৃটিশগো মতো আকাইম্যা নাও হইতে পারে....
এন্টিবায়োটিকটার নাম মনে নাই। দিনে চারখান কইরা মোট ১৪টা শেষ কর্লাম। পায়ের ব্যথাও সাইরা গেল। হাঁটুর ক্ষতও জাদুমন্ত্রের মতো পুরোপুরি সাইরা গেল। এই না হইলে দেশী ওষুধ।
বিলেতে আইসা আমার আরেকবার অসুখ হইছিল। চিকেন পক্সের সেই কাহিনী পরে লিখুমনে।
(নোট: ঘটনা পুরাপুরি সত্য। তয় পোস্ট পইরা অন্য কেউ আবার নিজে নিজে এন্টিবায়োটিক খাইয়েন না)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১১:১৫
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×