somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেডলাইন ২০২৫

২৪ শে আগস্ট, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন ২০২৮, আজ হতে প্রায় ২০ বছর পর।গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মুহম্মমদ ইউনুস দুই মহারথীকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন জাদুঘর পরিদর্শনে। উনার একপাশে সাবেক ফার্স্ট লেডী হিলারী ক্লিনটন অপর পাশে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী (কুচক্রী) কন্ডোলিনা রাইস। এতো দিনে হিলারীর সৌন্দর্য অনেকাংশে ম্লান হয়ে গেছে। অধিকাংশ চুলে পাক ধরেছে। চোখে মোটা কাচের চশমা। কন্ডোলীনার মুখের চামড়া টামড়া কুচকে বিচ্ছিরি অবস্থা হয়েছে। তবে দুই চোখের ধূর্ততা বিন্দু মাত্র কমেনি। ড. ইউনুসের চুল সব সাদা হয়ে গেছে। মুখে বয়সের বলিরেখা ফুটে উঠেছে। তবে উনার মুখের হাসি এখনো অমলিন রয়েছে। হিলারী আর রাইস যাই দেখছেন তাতেই বিস্ময় প্রকাশ করছেন।

এবার ড. ইউনুস তাদের নিয়ে আসলেন যাদুঘরের একেবারে শেষ প্রান্তে। এখান এক কোনায় খলি গায়ে কিছু হাড় জিরজিরে লোক মাথা নিচু করে বসে আছে। হিলারী আর রাইস দু’জনেই বিস্মিত হয়ে ড. ইউনুসের দিকে তাকালেন। ড. ইউনুস মুখে সেই বিখ্যাত হাসি ফুটিয়ে বিজয়ীর ভংগিতে বললেন, আমাদের গ্রামীণ ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ ছিল ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের দারিদ্রতা জাদুঘরে এসে ঠাই নেবে। দেশে কোন দরিদ্র লোক থাকবে না। আর আপনারা এর নমুনাতো দেখতেই পাচ্ছেন। এ হচ্ছে আমাদের দেশের দারিদ্রতা। সবাই বর্তমানে আমাদের গ্রামীণ ব্যাংক থেকে মাইক্রো ক্রেডিট নিয়ে সুখে জীবন যাপন করছে।
এদের মধ্য থেকে সবচেয়ে দুর্বল লোকটি কাপতে কাপতে উঠে দাড়াল। লোকটার কোমরে শুধুমাত্র গ্রামীণ চেকের একটি গামছা জড়ানো। লোকটি কপালে হাত ঠেকিয়ে সালাম দেয়ার ভঙ্গি করল।
হিলারী, রাইস দু’জনেই বাঙ্গালীদের ভদ্রতা দেখে মুগ্ধ হলেন।

জাদুঘর পরিদর্শন শেষে ড. ইউনুস তাদেরকে গাড়ীতে উঠিয়ে দিতে গেলেন। পেছন থেকে কে যেন ‘ইউনুস ভাই’ বলে ডেকে উঠল। বিরক্ত হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন একটু আগে দেখা লোকটি ছুটে আসছে। সামনে এসেই লোকটি অভিযোগের ভঙ্গিতে বলতে আরম্ভ করল- ‘আমারে বলছে এক ঘন্টার জন্যে দুই হাজার টাকা দেয়া হইব, এখন কয় এক হাজার দিব। কতক্ষণ ধইরা এই কোনাতে বইসা রইছি। বলে এক ঘন্টা নাকি হয় নাই। আমি এফ.ডি.সি থাইকা ‘চাকরের কসম’ ছবির চাকরের পার্ট ফালাইয়া আইছি। এইডা কোন বিচার‌।‌’
ড. উইনুস দাত কিড়মিড় করতে লাগলেন, অপদার্থ সেক্রেটারিটা একটা কাজও ঠিক মতো করতে পারে না। তাকে বলা হয়েছিল কিছু বিদেশী মেহমান আসবেন জাদুঘর পরিদর্শনে, তাদের দেখানোর জন্যে কিছু লোক ভাড়া করে জাদুঘরে আনার জন্যে। এখন কি ঝামেলাতে পড়া গেল।

হিলারী, রাইস বাংলা না জানার জন্যে এদের কথাবার্তা কিছুই বুঝতে পারছেন না। হিরারী জিঙ্গেস করলেন, ‘এনিথিং রং ড. ইউনুস?’
ড. ইউনুস দ্রুত সামলে উঠলেন- ‘নো, নো ইটস নাথিং।’ পকেটে হাত ঢুকিয়ে লোকটির হাতে দু’টা পাচশত টাকার নোট গুজে দিলেন।
রাইস এত সহজে ছাড়ার পাত্রী নন। ভ্রূ কোচকে জানতে চান -‘আপনি লোকটাকে কিসের টাকা দিচ্ছেন?’
ড. ইউনুস হা হা করে হেসে উঠলেন। বুঝলেন না লোকটা আমাদের মাইক্রো ক্রেডিট পলিসি গ্রহন না করে এখন পস্তাচ্ছে। গ্রামীন ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার জন্যে আমার পেছনে পেছনে আসছে।
‘সো?’- রাইস নির্লিপ্ত ভাবে জানতে চান?
‘ভেরী পুওর ম্যান, লোনের ফরম কেনার মতো টাকাও তার কাছে নেই। তাই আমি লোকটাকে ফরম কেনার টাকা দিয়ে আমাদের গ্রামীণ ব্যাংকের অফিসে যোগাযোগ করতে বলেছি।’
এবার রাইস সন্তষ্ট হলেন- ‘আই সি। আপনার গ্রামীণ ব্যাংক এর মধ্যে অনেক ডেভেলপ করে ফেলেছে। বর্তমান যুগ হচ্ছে মোবাইল সিস্টেমের যুগ। আর আপনি পকেটেই লোনের টাকা নিয়ে ঘুরছেন। ভেরি ইন্টারেস্টিং। দেখি আমাদের দেশেও এই সিস্টেম চালু করা যায় কিনা। তাহলে আমরাও আপনাদের মতো শীঘ্রই ধনী দেশে রুপান্তরিত হতে পারব।
হিলারী, রাইস দু’জনেই এবার বিদায় নিলেন। ড. ইউনুস পেছনে দাড়িয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বিজয়ীর ভঙ্গিতে হাত নাড়তে লাগলেন।


( নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস এই একটি মাত্র পরিচয়ই উনার জন্যে যথেষ্ট, এর বেশী আর কোন পরিচয়ের দরকার নেই। এর মাধ্যমে তিনি বিদেশের মাটিতে আমাদের দেশকে পরিচিত করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংক আমাদের দেশে প্রচুর কাজ করছে । কিন্ত এই ব্যাংক দরিদ্র মানুষকে চড়া সুদে লোন দিচ্ছে, আবার লোনের টাকা পরিশোধ না করতে পারলে তাদের কর্মীরা কৃষকের গোলার ধান, হাস মুরগি, ঘরের টিনের চাল খুলে নিয়ে আসছে। এমনকি কৃষকের বউ এর কানের দুল, মেয়ের পায়ের নূপুর পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে। এতে করে অনেক দরিদ্র মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে, ঘটেছে আত্নহত্যার মতো ঘটনা।
হয়ত এর পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে তারা বলবেন, বড় কিছু করতে গেলে ছোট খাট কিছু সমস্যা দেখা দেবেই। একশ ভাগ ঠিক কাজতো আর কার সম্ভব নয়।
ঠিক আছে মানলাম, কিন্ত তা যদি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গিয়ে পৌছে তাহলে তা আবশ্যই বর্জনীয়। কারণ লোন দেয়ার আগে দেখা উচিত যাকে লোন দেয়া হচ্ছে তার চড়া সুদে ঐ লোন নেয়ার মতো সার্মখ্য আছে কিনা। এবং ঐ টাকা যদি সে পরিশোধ না করতে পারে তবে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ড. ইউনুস এর ছেলে মেয়েরা সম্ভবত দেশের বাইরে পড়াশুনা করে, উনি নিশ্চয়ই প্রতিদিন বাজারে যান না। যার জন্যে উনার পক্ষেই বলা সম্ভব ২০২৫ সাল নাগাদ আমাদের দেশে দারিদ্রতা জাদুঘরে ঠাই পাবে।
বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে শুধু নিম্ন আয়ের মানুষ নয়, মধ্যবিত্তদেরও নাভিশ্বাস অবস্থা। সেখানে এ ধরনের মন্তব্য করে মানুষের কষ্টকেই শুধু বাড়ানো হচ্ছে।
তবে হ্যা উনার এই স্বপ্ন অবশ্য এক দিক দিয়ে সত্যি হবার সম্ভবনা আছে।
কারণ এই ভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ ব্যয়বহুল খরচের চাপে পড়ে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠি এমনিতেই মরে সাফ হয়ে যাবে। বেচে থাকবে শুধু কিছু সংখ্যক ধনী জনগোষ্ঠি। যে কয়জন দরিদ্র লোকজন তখন পর্যন্তও কই মাছের প্রানের মতো বেচে থাকবে তাদেরকে ধরে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিলেই হবে।)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:১৩
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×