somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশে ফেরা না ফেরা। আপনি কি ভাবছেন?

২১ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যারা পড়ালেখা বা অন্য কোন কারণে জন্য দেশ ছেড়েছি অথচ দেশে থাকলে দেশেরে কল্যাণে কিছু করার ক্ষমতা/যোগ্যতা ছিল, তাদের কি ফের দেশে ফেরাটা জরুরী? দেশে ফিরে কি সত্যি দেশের কল্যাণে কিছু করার সুযোগ পাওয়া যাবে?

অন্যের বেলার উত্তরটা কি হবে তা প্রত্যেকের ব্যাক্তিগত অবস্থান থেকেই সে বলতে পারবে। কিন্তু আমার কি করা উচিৎ, তার একটা ভাল উত্তর পাওয়ার আশায় এই ব্লগ লেখা।

একটু পেছনের কথা বলি। ২০০৪ সাল। মাষ্টার্সের থিউরি আর প্রেক্টিক্যাল শেষ করে থিসিসের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছি। পড়েছি বোটানিতে। তাই সহজলভ্য MR-এর চাকরি ছাড়া অন্য কোন প্রাইভেট চাকরি জোটবেনা, সেটা এক প্রকার গ্যারান্টেট। আমার বন্ধুদের অনেকেই তাই থিসিস না করে তখন MR-এর চাকরিতে ঢুকে পড়েছিল। পরিশ্রম করতে পারলে বেতন একেবারে কম না। কিন্ত আমি পড়ে রইলাম থিসিস নিয়ে। কিন্তু ভাইয়ের টাকায় আর কতদিন চলতে হবে, সেই চিন্তাটা মাথায় ঠিকই ছিল। তাই একমাত্র বিকল্প BCS-এর জন্য রাত দিন খাটতে থাকলাম। ২৪ তম BCS ছিল আমার জন্য প্রথম। প্রিলি দিলাম। বেশ ভাল হল। টিকব তাতে কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগে সেটা বাতিল না হলেও যারা ন্যুনতম ৪৯ পেয়েছে, তাদের সবাইকে সুযোগ দেয়া হল রিটেন পরীক্ষার জন্য। তাতে অনেকের কপাল খুল্লেও অনেকের জন্য কাল হল। কারণ, তাতে যারা কোনদিন প্রিলিতে পাশ করার যোগ্যতাও রাখেনা, তারা রিটেন দেয়ার সুযোগ পেল। রিটেনে কোন ভাবে পাশ করতে পারলে বাংলাদেশের অবারিত দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে চাকরী পাওয়ার একটা পথ খুলে গেল তাদের জন্য।

সে যা-ই হউক, যথারিতী রিটেনও দিলাম। সত্যি বলতে কি, রিটেন দেয়ার পর আমার আত্মবিশ্বাস এতটাই বেড়ে গেল যে বন্ধুদের বল্লাম, আমাকে যদি ভাইবা তে ন্যুনতম নাম্বারও দেয়, তাতেই আমার চাকরী কনফার্ম। এত সুন্দর আর পরিচ্ছন্ন পরীক্ষা আমি আমার একাডেমিক কোর্স গুলোতেও দেইনি।

যথারীতি ভাইবা ও হয়ে গেল। এবার ফাইনাল রেজাল্ট ঘোষণার পালা। প্রতিক্ষার দিন যেন আর শেষ হয়না। একদিন সেই প্রতিক্ষার অবসান হল ঠিকই। সেই সাথে আমার আত্মবিশ্বাসের দূঢ়তাও শেষ হয়ে গেল। অনেকবারই ভেবেছি, কোথাও কি কোন ভুল হয়েছে ফলাফলে?

আসলে ভুল ফলাফলে হয়নি, হয়েছে অন্যখানে। যখন খবর পেলাম আমাদের ক্লাশের সব ছাত্রছাত্রীদের মাঝে চাকরি হয়েছে মাত্র দুই জনের, একজনের "মহিলা" কোটায় আর অন্যজনের "দূর্নীতি" কোটায়, তখন আর বুঝতে বাকি থাকল না যে ভূলটা আসলে কোথায় হয়েছে।

আমাদের ক্লাসের সব ছাত্রের মধ্যে পেছনের দিক থেকে যে ৩য় হয়েছিল (অনার্স/মাষ্টার্স দুটোতেই) তার চাকরি হল পুলিশে। তবু তার যোগ্যতায় সে চাকরি পেলে আমার কোন আপত্তি থাকার কথা ছিলনা। শুনেছিলাম, ড. মাহফুজ (PSC-এর তদানীন্তন মেম্বার, দূর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত, আমর বন্ধুর এলাকার মানুষ) ৪ লাখ টাকা বখশিসের বিনিময়ে আমার বন্ধুকে পুলিশের চাকরিটা দিয়েছিলেন। এটা আমার বন্ধু আমাদের কাছে তখন খোলামেলাই বলত।

তারপরও আরো দুটো BCS (২৫ এবং ২৬ তম) দিয়েছিলাম জাপানে আসার আগ পর্যন্ত। কিন্তু প্রথমবারের মত অতটা কনফিডেন্ট হতে পারিনি। তবু যদি একটা সুযোগ পেতাম (শুধু মেধা কোটায়, কারণ ঘুষ দেয়ার মত অত টাকা বা মানসিকতা কোনটাই আমার ছিলনা), তা হলে হয়তো এখন যেভাবে বাইরে থেকে যাওয়ার চিন্তা করছি তেমন করতাম না। ডিগ্রী শেষে দেশে ফিরে যেতাম চোখ বুঝে। আমাদের গুনীজনেরা "Brain Drainage" কথাটা প্রবাদের মত প্রায়ই বলেন। যারা মেধা বিক্রি করে নিজের ভাগ্যের উন্নয়নে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে বা থেকে যাচ্ছে, তাদের গোষ্ঠী উদ্ধার করছেন। কিন্তু কেন তারা সেটা করছে তা কি সেই গুনীজনেরা একবারও ভাবেন?

আমার মত হাজারো প্রবাসী মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে সফলতার সাথে প্রবাসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের অবস্থান সুসংহত করতে সক্ষম হয়েছে। সামাজিক মর্যাদা, নিরাপত্তা, সকল মৌলিক চাহিদার যথাযথ যোগান, কি পাচ্ছে না তারা প্রবাসে? যে দেশ এবং দেশের মানুষ তাদের যোগ্য সন্তানদের সেবা নিতে ব্যার্থ, সেখানে ফিরে যাওয়াটা টি একান্তই আবশ্যক? অফুরন্ত সম্ভাবনা আর নাগরিক সুযোগ সুবিধা পেয়েও আমরা প্রবাসীরা যেটার জন্য আকুল হয়ে থাকি, যার জন্য ব্যাকুল হয় অস্থির মন, সেটা হল আমার দেশের মাটির গন্ধ, বাতাসের উম্মাতাল ভালবাসা। যে পরিচিত মাটি ও বাতাসে আশৈশব কাটিয়েছি, তার জন্য যে শুন্যতা মনের মাঝে তৈরী হয়ে আছে, পার্থিব এই সুখ সেটাকে কোন ভাবেই মুছে দিতে পারেনা। তাই এখনো অপেক্ষায় আছে হাজারো প্রবাসী দেশে ফিরে যেতে, তাদের মনন আর পরিশ্রম তাদের দেশ ও জাতির জন্য বিলিয়ে দিতে। কিন্তু কোন ভরসায় ফিরে যাবে তারা? প্রশ্ন একটা থেকেই যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১০:২৯
১৬টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×