somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরাজিত হওয়া ঈশ্বরের শোভা পায় না (জারিফ আপডেট)

২০ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জারিফের অসুখটি হওয়ার আগে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া নামটি আমি শুনেছি বলে মনে পড়ে না। এ রোগটি হলে দেহের রক্ত কণিকা তৈরি বন্ধ হয়ে যায়।

এর ফলটি কি হয়?

খুব সহজ ভাষায় বলা যায়, মানুষের রক্তে যে তিন ধরনের কণিকা আছে যেমন লোহিত কণিকা, শ্বেত কনিকা আর অনুচক্রিকা; এদের কাজ হলো রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন দেহের বিভিন্ন স্থানে পৌছে দেয়া, রোগ জীবাণুর সঙ্গে যুদ্ধ করা আর দেহের কোনো স্থান কেটে গেলে দ্রুত রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করা।

যার দেহের রক্তে এ জিনিসগুলি কমে যায়, তার কি কি সমস্যা হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। দেহের বিভিন্ন স্থানে অক্সিজেন পৌছে না, কেটে গেলে রক্ত সহজে জমাট বাধে না আর সবচেয়ে আশঙ্কার কখা হলো দেহের কোনো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না। এর ফলে সামান্য সর্দি জ্বরেও মারা যেতে পারে রোগি।

রক্তের এই কণিকাগুলি আসলে তৈরি হয় হাড়ের ভেতরের মজ্জায়। জারিফের শরীরের মজ্জায় আর কণিকা তৈরি হচ্ছিল না। এর একটিই চিকিৎসা, তা হলো কণিকা তৈরি করতে পারে এমন মজ্জা নতুন করে জারিফের হাড়ের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া।

ঈশ্বরের অশেষ কৃপা, দেশে, দেশের বাইরে, অফলাইন, অনলাইনের বন্ধুদের অসম্ভব ভালোবাসায় জারিফের সেই অপরেশনটি, যাকে বলে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন, সেটি সম্পন্ন হয়েছে।

খবরটি স্বস্তির, কিন্তু এতে উল্লসিত হবার এখনি কিছু নেই।

ভিন্ন একটি শরীর (জারিফের ছোট বোন) থেকে মজ্জা এসেছে জারিফের শরীরে। নতুন ঘরে তার মানিয়ে নেয়ার একটি ব্যাপার আছে। খাপ খাওয়ানোর ব্যাপার আছে। জারিফ এখন সেই পর্যায় পার হচ্ছে। এ সময়ে নানা রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে তার শরীরে এবং দেখা দিচ্ছেও। কখনো জ্বর বেড়ে যাচ্ছে, কখনো প্লাটিলেট কাউন্ট (রক্তে কণিকার সংখ্যা) কমে যাচ্ছে, বমি হচ্ছে, শরীর দূর্বল হয়ে যাচ্ছে... নানা রকম বিষয়।

এ সময়েই আরো একটি ঘটনা ঘটছে জারিফের শরীরে। নতুন মজ্জা জারিফের শরীরে এসে আর তার আগের গ্রুপের রক্ত তৈরি করবে না। এখন জারিফের শরীরে নতুন গ্রুপের রক্ত তৈরি হবে। তার ছোট বোনের যে গ্রুপ, সেই গ্রুপের রক্ত ক্রমশ তৈরি হবে তার শরীরে। অ্যাডজাস্টমেন্টের ব্যপার আছে এখানেও। কাজেই বলা যায় আট আনা কাজ হয়েছে, আরো আট আনা বাকী।

জারিফের বাবা, লতিফ ভাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আরো দুই মাস তিনি জারিফকে ডাক্তারদের নজরে রাখবেন। ইনডিয়ার ডাক্তাররাও তেমনই সাজেশন দিয়েছেন। তবে, সাধারণত বাংলাদেশী রোগীরা এ পর্যায়ে রোগীকে দেশে নিয়ে আসেন। কারণ ওখানে রেখে চিকিৎসা করানো খরচান্ত ব্যপার। আরো দুই মাস চিকিৎসা ব্যায়, একটি পরিবারের বিদেশে থাকার ব্যয় কিভাবে আসবে, তা এখনো অজানা। তবুও লতিফ ভাই বলছেন, এটুকু পার করে নিয়ে এসেছেন যিনি, তিনি কি আরো একটু দয়া করবেন না?

কেবল জারিফ নয়, লতিফ ভাই বলছেন ওখানে নতুন করে তার আরো ছয়টি সন্তান হয়েছে। হ্যা, জারিফ সহ আরো ছয় জনের একই চিকিৎসার জন্য দৌড়ঝাপ করছেন তিনি। চেষ্টা করছেন নিজের সন্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশী আরো ছয়জন একই রোগের রোগীর চিকিৎসা ব্যয় ম্যানেজ করার জন্য। এ টাকা আসতে পারে বড় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ডোনার এজেন্সি ও বড় মনের লোকজনের দানের মাধ্যমে। কয়েকদিন আগে যখন ফোনে কথা হয়, লতিফ ভাই বললেন, বিপুল, একটা নিয়মিত ফান্ড থাকা উচিৎ, যেখান থেকে গরীব বা মধ্যবিত্বের এমন কঠিন চিকিৎসা ব্যায় মেটানো সম্ভব।

হয়তো এ অনুভূতি থেকেই লতিফ ভাই চেষ্টা করছেন আরো ছয় জারিফের জন্য, যাদের এমন সাহায্য খুব প্রয়োজন। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

এ সময়ে কেবল আমরা প্রার্থনা করতে পারি, একটিই দাবী করতে পারি ঈশ্বরের কাছে। পৃথিবীর মানব সন্তানেরা যতোখানি ভালোবাসা দেখানোর সেটি দেখিয়েছে, প্রয়োজনে দেখাবে আরো।

ঈশ্বর, বল এখন তোমার কোর্টে। নানা উসিলায় তোমার পক্ষেই সম্ভব ভালোবাসার হাতগুলোকে একত্র করে দেয়ার ঘটনাটি ঘটাতে। আর যাই হোক, পরাজিত হওয়া তোমার শোভা পায় না।
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালি নারীর কাছে

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০২ রা জুন, ২০২৪ রাত ১২:৪৬

পরনে আজানুলম্বিত চিকন সুতোর শাড়ি, সবুজ জমিনের পরতে পরতে কবিতারা জড়িয়ে আছে বিশুদ্ধ মাদকতা নিয়ে, গোধূলির আলোয় হেঁটে যায় নিজ্‌ঝুম শস্যক্ষেতের ঘাসপাঁপড়ির আল ধরে, অতিধীর সুরের লয়ে, সুনিপুণ ছন্দে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসেন ইক্টু ঘুরাঘুরি করি.... :-B

লিখেছেন সোহানী, ০২ রা জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২৩

এক কসাইয়ের লাশ আরেক কসাই কিভাবে কিমা বানাইলো কিংবা কত বিলিয়ন ট্যাকা টুকা লইয়া সাবেক আইজি সাব ভাগছে ওইগুলা নিয়া মাথা গরম কইরা কুনু লাভ নাইরে... আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×