somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ভ্রমন ২০০৮ (২য় পর্ব)

২০ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব - Click This Link
৩য় পর্ব - Click This Link
৪র্থ পর্ব - Click This Link
৫ম পর্ব - Click This Link

আজ সকাল থেকে দিনটা ব্যস্ত যাচ্ছে। ভোরে ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়েই দৌড় দিলাম অলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের দিকে। সকালে একটা লেকচার ছিল, তার পর শুরু হলো পেপার প্রেজেন্টেশন। এক ফঁকে ব্রেকফাস্ট করে কফির কাপটা নিয়ে হুড়মুড় করে আবার ঢুকলাম লেকচার থিয়েটারে যেখানে প্রেজেন্টেশনগুলো হচ্ছিল। আমাদের মত নান্নি-মুন্নি বাচ্চারা তাদের পেপার প্রেজেন্ট করছিল আর বড় বড় চুলপেকে যাওয়া প্রফেসাররা সেটা দেখছিল আর হাসছিল। হাসার ধরনটা অনেকটা এমন - "এসব কি কাজ করেছো তোমরা? কিছুইতো হয়নি!"

কিছু প্রফেসার ছিল যাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল প্রত্যেককে ত্যাড়া টাইপের প্রশ্ন করা। আমি কিছুসময় লক্ষ্য করে তাদের প্রশ্নের একটা প্যাটার্ন বের করলাম। প্রধানত তারা কোন পেপারের সাথে সম্পর্কযুক্ত কোন বিশেষ তত্ত্বকে (যেটা সেই পেপারে আদৌ ব্যবহার করা হয়নি!) রেফারেন্স হিসেবে ধরে এবং সেটার উপর ভিত্তি করে প্রশ্নগুলো করছিল। ফলে দেখা যাচ্ছিল উত্তরদাতার জন্য সেটা বেশ কঠিন এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিব্রককর অবস্থার সৃষ্টি করছিল। এটা ঠিক যে তারা অনেক দক্ষ এবং অভিজ্ঞ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সকে তারা ইতিমধ্যে গুলে খেয়ে এসেছে। কিন্তু যে ছাত্ররা পেপার প্রেজেন্ট করছিল, তারাতো নিতান্তই নুতন। অনেকেই পি.এইচ.ডির প্রথম বর্ষের ছাত্র। অতএব তাদের জন্য সব তত্ত্ব না জানাটাই স্বাভাবিক। তবুও প্রফেসারদের ভাব এমন যেন - "এটাও জান না?" বলাইবাহুল্য, যে যত আটকাতে পারছিল তার কৃতিত্ব তত বেশি মনে করছিল।

একজন ছিল যে প্রতিটা প্রশ্ন শুরু করতো "আই থিং..." দিয়ে; তারপর চলতো দুইমিনিটের একটা লেকচার। উত্তরদাতাকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে হতো এবং সব শেষে প্রশ্নটা আসতো অনেকটা অবজেকটিভ টাইপ - ডু ইউ এগরী উইথ মী? যথারীতি তাকে থামানোই তখন সবার মূখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাড়াতো এবং সাথে সাথে এক বাক্যে এগরী করতে কেউ কার্পন্য করতো না। শেষের দিকে এসে দেখা গেলো কেউ আর তার প্রশ্ন শোনে না। কারন দুই মিনিটের লেকচারের পর মূল প্রশ্নটা কি হবে সেটা সবার জানা। অতএব শোনার দরকার কি!

তবে কখনএ কখনও বিষয়টা প্রফেসারদের মধ্যেও তর্ক সৃষ্টি করছিল। যেমন এক জাপানী ছেলেকে এক পর্তুগিজ প্রফেসার একটা ত্যাড়া প্রশ্ন করেছিল। প্রশ্নটা এরকম ছিল যে একটা বিশেষ থিউরীর রেফারেন্স দিয়ে (যথারীতি!) সে বলেছিল - আই ডোন্ট থিংক ইটস গোনা ওয়ার্ক এ্যাট অল। সেই থিউরীটা ছেলেটার পুরোই মাথার উপর দিয়ে গিয়েছিল এবং পাক্কা প্রায় দশ সেকেন্ড সে হা করে তাকিয়ে ছিল। একসময় দর্শকসারী থেকে তার সুপারভাইজার উত্তর দেয়া শুরু করলো। চুল-দাড়ি-গোফ পাকা জাপানী প্রফেসার আর তুলনামূলক মধ্যবয়সী পর্তুগিজ প্রফেসারের চরম বিতর্ক আমাদের মনে বেশ আনন্দের সঞ্চার করেছিল। মনেমনে যেন সবাই বলছিল - "এবার দ্যাখ কেমন লাগে!" :)

দুপুরে লাঞ্চে গিয়ে বললাম চিকেন দিতে। হায় খোদা, চিকেন বলতে যে চিকেনই বোঝাবে সেটা কে জানতো! প্রায় আস্ত একটা চিকেন ধরিয়ে দিল। ছোট বাচ্চা মুরগী, তার উপর রান্না করেছে অমৃতের মত। মুখে দিলে গলে যাচ্ছিল। সাথে আমার মোস্ট ফেভারিট স্ম্যাশ পটাটো আর ফুলকপির একটা স্পেশাল আইরিশ কারি আছে, সে দুটো নিয়ে লাঞ্চে বসলাম। এক সময় দেখলাম আমি যুগযুগ ধরে খেয়েই যাচ্ছি, কিন্তু খাওয়া আর শেষ হয় না!

লাঞ্চ থেকে যখন বের হয়েছি তখন হাটাও রীতিমত কষ্টকর একটা কাজ হিসেবে অনুভুত হচ্ছিল। এদিকে রুমের ভাড়া এসেছে চার রাতের জন্য ১০০ পাউন্ড। কিন্তু এতটা আমার কাছে ক্যাশ নেই। অফিসের ভদ্রমহিলা যদিও বললো কোন সমস্যা নেই, যে কোন সময় আমি তাকে বিলটা দিলেই হলো; তবুও নিজের কাছে খারাপ লাগছিল। সবাই রেজিস্ট্রেশনের সময়ই পে করেছে, আর আমিতো উল্টা একদিন দেরী করে ফেলেছি কারন কাল যখন এসে পৌছাই ততক্ষনে অফিস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই বের হয়ে পড়লাম এটিএম থেকে পাউন্ড তোলার জন্য। সাথে টুকটাক কেনাকাটাও হলো। মিনারেল ওয়াটার, বিস্কিট এবং কিটক্যাট কিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার ঢু দিয়ে সোজা স্টুডেন্ট ভিলেজে চলে এলাম।

এবার একটা বিব্রতকর ঘটনা শেয়ার করছি। আমি সাধারনত আমার রুমে থাকাকালিন গরমের কারনে কাপড় খুব একটা পরি না! তার উপর এই রুমটায় প্রচন্ড গরম। তাই স্বল্পতা যেন আরেকটু কমেছে। এখানে কেউ নক না করে ঢুকে না। অতএব, দরজা লক করারও তেমন কোন প্রয়োজন পড়েনা। কেনাকাটা করে এসে আমি মাত্র বিছানায় বসেছি। হঠাৎ এক জাপানীজ/চাইনিজ তরুনী সোজা দরজা খুলে আমর রুমে এসে ঢুকলো। কোন নক করা নেই, বা কোন রকম জড়তা ছাড়াই সে এসে ঢুকলো। আমি অবাক হবার পরিবর্তে একটু ভয়ই পেলাম। আমি নিজের রুমে আছিতো? সাথে সাথে দেখলাম টেবিলে আমার ল্যাপটপটা আছে। মনে সাহস আসলো, নাহ! এটা আমারই রুম। মেয়েটা কিছু সময় আমাকে দেখলো, তারপর চিৎকার এবং আর্তনাদের মিলিত একটা সুরে 'সরি' বলে লাফ দিয়ে বের হয়ে গেলো। আমিও এক লাফে গিয়ে দরজা লক করলাম। থ্যাঙ্ক গড....!

যাইহোক লেখার শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। ঘোরাঘুরি যেহেতু তেমন হচ্ছে না, তাই ভ্রমনের বর্ননাও আসছে না। কালও সারা দিন ব্যস্ত থাকবো ক্যাম্পাসে। প্ল্যান করা হয়েছে পরশু আমাদের পুরো নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ঘুরিয়ে দেখানো হবে। ছোট্ট দেশ এই নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। মাত্র ছয়টা কাউন্টি। অনেকটা ছয়টা জেলার একটা বিভাগ! কিন্তু সেই ছয়টা কাউন্টি আবার আয়ারল্যান্ড দ্বীপের বৈচিত্রময় কাউন্টিগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেখাযাক কেমন হয় সেই ঘোরাঘুরি।

এদিকে কি সব যেন সোসালস ইভেন্ট আছে আজ। একটু আগে দেখলাম সবাই দল বেধে ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছে। আমি আবার সার্বজনীন অসামাজিক! সবাই যখন ক্যাম্পাসে মজা করছে, আমি তখন ব্লগ লিখছি! সত্যকথা বলতে কি, আমার এসব সো কল্ড পার্টি একদমই ভালো লাগে না। ঠিক আন্তরিকতার ছোঁয়াটা যেন পাই না ওখানে। যতটুকু সময় কাজ, আমি ঠিক ততটুকু সময় এদের সাথে থাকি। যখনই ড্রিংক করা এবং পার্টি শুরু হয়, আমি শামুকের মত আমার খোলসটার মাঝে ঢুকে পড়ি। আমার এই ছোট্ট খোলসের মাঝে যে পৃথিবীটা আছে, সেটা ওদের সোসালস-এর থেকে কোন অংশে কম আনন্দের নয়। আর সেজন্যই নিঃসঙ্গ থেকেও জীবনের প্রতিটা মূহুর্তকে আমি উপভোগ করছি প্রানভরে!

১৯ অগাস্ট ২০০৮
ডেরী, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৩৩
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×