somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জল-বনদস্যু রাজু বনাম সরকার

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম্প্রতিক খবরে প্রকাশ, সুন্দরবনের কুখ্যাত বন- জলদস্যু রাজু বাহিনীর হাতে ১৩ দিন বন্দি থাকার পর মুক্তিপণ দিয়ে ৪০ জেলে ফিরে এসেছেন, আর দস্যু রাজুর বন্দিশালায় মুক্তিপণ আদায়ে অপারগতায় এখনও ৬৩ জেলে বন্দী রয়েছেন।এর আগেও রাজুবাহিনী সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে। সরকার পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে রাজুবাহিনীকে কব্জা করার যাবতীয় সম্ভাব্য তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু রাজুবাহিনীর মত একটি দস্যুদলকে দমন করতে সরকারবাহিনীর কতো সময় প্রয়োজন যদি সরকারের দায়িত্বশীল কর্তাদের সদিচ্ছা সত্যিই থেকে থাকে !

একটি দস্যুদল সুন্দরবনএলাকা জুড়ে ত্রাস চালাবে আর নিরীহ গরীব জেলে ও গ্রামবাসীদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে নিঃশেষ করে দেবে আর সরকারী কর্তারা শুধু লোক-দেখানো তথাকথিত ‘তৎপরতা’ এর আত্মসন্তুষ্টি নিয়েই মনে করবেন তাঁদের কর্তব্য সম্পন্ন হলো, তাহলে এই বিশাল সেনাবাহিনী নামক শ্বেতহস্তী পোষার কোন দরকার !
রাজু বাহিনীর মতো একটি বন- জলদস্যুদলকে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দেবার ক্ষমতাই যদি আমাদের সেনাবাহিনীর না থাকবে তাহলে এই বাহিনী কোন যুদ্ধ করারই তো যোগ্যতা রাখে না। পুলিশবাহিনীর কথা উল্লেখ করে লাভ নেই কারণ, দল ও মত নির্বিশেষে দেশের সবাই স্বীকার করবেন যে, একমাত্র ক্ষমতায় অধিষ্ট সরকারী দলের হয়ে পেটোয়াবাহিনীর কাজ করা আর নিরীহ জনগণের জীবনে চূড়ান্ত অভিশাপ হওয়া ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীর আর অন্য কোন উল্লেখযোগ্য ভুমিকা বিগত ২৫ বছরে জনগণ মূলতঃ দেখেনি, সেকথা যে কোন পক্ষপাতহীন মানুষই স্বীকার করবেন একবাক্যে । রাজুবাহিনী যদি জল ও বনপদে ত্রাসকারী দস্যু হয়, তবে বাংলাদেশ পুলিশবাহিনী সরকারী তকমাধারী জনপদের দস্যু হওয়া ব্যতীত আর কোন যোগ্যতা কোনভাবেই প্রমাণ করতে পারেনি ।
সত্যিকার অর্থেই যদি কোন সরকার আজ অবধি শুধুমাত্র পুলিশবাহিনীর সকল কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের নিয়োগ কালীন জমা টাকা ও সম্পত্তির সাথে তাদের নিয়োগ পরবর্তীকালীন জমা টাকা ও সম্পদের হিসাব নিতেন প্রকৃত সততা ও সদিচ্ছার অনুবর্তী হয়ে, তাহলে বাংলাদেশ পুলিশবাহিনী সরকারী তকমাধারী জনপদের দস্যু ব্যতীত আর কিছুই নয়, একথা ১০০% প্রমাণিত হয়ে যেতো । কিন্তু চোর বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? তেমন সৎসাহসী সরকারও তো বাংলাদেশের দূর্ভাগা জনগণ আজ অবধি দেখেইনি । মাঝখানে থেকে সবসময়েই ভূক্তভোগী সেই নিরীহ জনগণই । ওরা রাজুবাহিনীর ত্রাসের যেমন শিকার, তেমনিই বাংলাদেশ পুলিশবাহিনী ও সরকারী বিভিন্ন দফতরের লোভী ঘুষখোর দূর্নীতিবাজ কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সরকারী ত্রাসেরও শিকার । কোথায় যাবে এই দূর্ভাগা দেশের মানুষগুলো ! কোথায় মিলবে এই অভাগাদের আশ্রয়, কে শোনাবে তাদের অমিয় আশার ভবিষ্যতবাণী ?
যথার্থ ও উপযুক্ত ট্রেনিং প্রাপ্ত সেনাবাহিনীর একটি দলকে যদি পর্যাপ্ত রসদ ও অস্ত্র দিয়ে রাজুবাহিনীকে দমনের দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে একথা নিশ্চিত যে বড়জোর একসপ্তাহের মধ্যেই রাজুবাহিনী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে আর এলাকার গরীব জনগণও হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে, আর সেই সাথে ভবিষ্যতে ‘রাজু’ হবার আকাঙ্খা পোষণকারী পাতি দস্যুগুলোও পাততাড়ি গোটাবে । কিন্তু সেই জরুরী উদ্যোগ সরকার নেয় না কেনো ! কি রহস্য এই উদ্যোগ না নেয়ার পেছনে !
সুন্দরবন এলাকার এই অতি দরিদ্র জনপদে বসবাসকারী এই অভাগা মানুষগুলোর মুখে নেই নিত্য আহার, পরনেও নেই লজ্জা নিবারণের প্রকৃত বস্ত্র, বাসের নেই একটি নিরাপদ ঘর, আর এদেরই ওপর যখন রাজু বাহিনীর মতো দস্যুদের ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীর মতো সরকারী উর্দিধারীদের মনুষ্য আত্মাবিহীন নির্ম্মমতার খড়্গ আসে নেমে, তখন ওদের খবর বিশ্ববাসীকে জানাবার সৎসাহস নিয়ে এগিয়ে আসেন যদি কোন মমতাবান সাংবাদিক নিজের জীবনেরও তোয়াক্কা না করে, তখনও ওই অভাগাগুলো জীবনের ভয়ে কাতর হয়ে না না করে দিগন্তবিদারী কান্নায় নিজের পরিচয় ও মুখ লুকায়, কারণ ওদের রক্ষা করতে কোন দল বা নেতা, কোন সরকার বা দয়াবান মন্ত্রী তো এগিয়ে আসবেন না ।
আমাদের দেশের মন্ত্রীরা, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি কি সংবাদপত্রগুলো পড়েন বা সেই মহার্ঘ সময় কি তাঁদের হয় কখনো ? যে জনগণের ভোটে তাঁরা আজ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি সেই জনগণের জীবনের অঘোর দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো যে তাঁদের নিত্য কর্তব্যের অন্তর্ভূক্ত তা কি ওঁরা একবারের জন্যেও ভেবে দেখেছেন কখনো ?
সর্ব্ব-মাননীয় মন্ত্রী,প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি মহোদয়গণ কি একবার দয়া করে আপন আপন কর্তব্যের প্রতি সজাগ হবেন !! দোহাই লাগে আপনাদের মন্ত্রীত্বের, নাহলে সুন্দরবন এলাকার এই অতি অভাগা মানুষগুলোর আত্মার অভিশাপে আপনারাও একদিন অন্যকিসিমের ‘রাজু’ বাহিনীর হাতে মার খেয়ে যাবেন কিন্তু, সেদিনও বড় দূরে নয় !!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×