somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ... (২)

০৮ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বকথন: নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ... (১)

আমার সৌভাগ্য যে আমার ছোটবেলার স্মৃতিতে একটা পুকুর আছে। বর্গাকৃতির সুন্দর একটি পুকুর । ঐ পুকুরটার চারপাশে ছিলো আবার কাজী পেয়ারার গাছ । বলা যায়,পুকুর বেষ্টিত সুমিষ্ট পেয়ারার বাগান । পুকুরে মাছের পোনা ছাড়া হলো । তখন পেয়ারার ডালে ছোট্ট মাছরাঙাকে বসে থাকতে দেখতাম । সেই প্রথম আমার মাছরাঙা দেখা । লম্বা ঠোঁটের সুন্দর কারুকার্যময় মাছরাঙা!

খুব ভোরে কিংবা নির্জন দুপুরে আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি মেলে ধরতাম - পুকুর ছাড়িয়ে বড় পেয়ারা গাছটার ডালে । মাছরাঙা’টা এক লাফে পুকুরের পানি ছুঁয়ে ফিরে যেত ডালে। ভোরে মাছগুলোর খাবি খাওয়া...ছিলো আর একটি দেখার মত দৃশ্য । সবুজ পানিতে ভেসে উঠা অসংখ্য মাছের হা করা মুখ!

ভয়ের বিষয়ও ছিলো । পুকুর আর বাগান ছাড়িয়ে পাঁচতলা বিল্ডিং । তারই গেট থেকে ছোট্ট সাদা কুকুরটির তড়িৎ ছুটে আসা ।
একবার এক শুনশান দুপুড় । জাভেদ দেয়াল গলে ধপ করে নামলো পুকুর পারে। আমি দেয়ালের উপর বসা । তখনো নামিনি । নামবো নামবো করছি। তারপর, সে এক দৃশ্য! মুহূর্তেই কোথা থেকে যেন সেই সাদা অ্যালসেশিয়ানটি এসে হাজির! জাভেদের তখন আর দেয়ালে উঠার সময় নেই । তখন, একহাতে লুঙ্গি ধরে;পুকুরের চারপাশ দিয়ে, জাভেদের সে কি ভোঁ দৌড় আর চিৎকার । হা হা হা ।

তখন বর্ষা আসতো ‌ভিন্ন ঢংয়ে । স্কুলের পাশেই কোথাও একটা কদম ফুলের গাছ ছিলো । হঠাৎ করে স্কুলের গেট ভরে যেত কদম ফুলে। সবার হাতে থাকত ছোট্ট ছোট্ট রেণুর একটা করে কদম ফুল । যাদের হাতে নেই তাদের একটা কদম ফুল পাবার কত আকুতি! কদম ফুল এভাবেই জানান দিতো বর্ষা মঙ্গলের ।


ছোটবেলায় বাসার সবাই দলবেঁধে বেড়াতে যেতাম । সিলেটে । আঁকাবাঁকা সর্পিল একটা ট্রেন । ছুটে চলেছে.... কু... ঝিক্ ঝিক্, ঝিক্ ঝিক্ । কুয়াশা ঘেরা পাহাড় । চা বাগান। ট্রেনের জানালার একপাশে দাবায় মগ্ন দুই কিশোর কিশোরী; আর আরেক পাশে চলন্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি।

বিকেলে নেমেই সবাই পাহাড় আর চা বাগান দেখতে বের হতাম । সাথে থাকতো ছোট মামা। প্রকৃতির সান্নিধ্যে প্রাণচঞ্চল একদল বালক বালিকা । পাহাড়ি রাস্তায় পাহাড়ি ফুল কুড়ানো । চোরা কাটার হাত থেকে বাঁচার জন্য এঁকে বেঁকে চলা । কখনও বা পাহাড়ের খাদে ছায়া বৃক্ষের ডালে জড়িয়ে থাকা ঘুড়ির জন্য বায়না ধরা । সন্ধ্যার আগেই চা বাগানের গায়ে গায়ে ছবি তোলা । রাত বাড়লে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দও বাড়তে থাকে । তখন জড়ো সড়ো হয়ে গল্প শোনার আসর জমে । নানা রকম গল্প। বাঁদর, শেয়াল, বাঘ আর ভূত -পেত্নীর । খুব ভোরে, পায় শিশির ছোঁয়ানো আর বেলী ফুলের ঝাড় বা গোলাপ থেকে ঝরে পড়া ফুল তোলা । এইরকম আরো কত কি আজও স্বর্ণালী স্মৃতি হয়ে আছে!


সেই পোনা পুকুরটি আজ নেই । নেই পেয়ারা আর পেঁপে বাগানও । আর একটা কদম গাছ খুঁজে বের করার সাধ্য এখন আর আমার নেই । কংক্রীটের নগরীতে চাঁদই হরহামেশা দেখা যায় না আর কদম গাছ! জাভেদ? প্রায় ১২/১৫ বছর হলো, তার কোন খবর নেই।
আজ আর দলবেঁধে সিলেট যাওয়া হয় না। গেলেও সাথে থাকেনা কোন দাবার বোর্ড । কারও হাতে সময় থাকে না, পাহাড়, চা-বাগান ঘুরিয়ে দেখার। থাকে না সময় ছায়াবৃক্ষের ডাল থেকে ঘুড়ি পেরে দেবার ।
আর থাকলেই বা কি ? সুর যে কেটে গেছে...স্বপ্নও হারিয়ে গেছে... ।

মনের রাজ্যে যে নির্ঝর অরণ্য, যে প্রকৃতি প্রেমীর বাস... সেও আজ অবসরে কোন এক বিপন্ন অভিমানে।।





***কি আর হবে অতীত স্মৃতি রোমান্থনে!!! তার চেয়ে আসুন একটা প্রিয় গান শুনি । দুঃখ গান ।
“বসুন্ধরার বুকে বরষারি ধারা...তারাভরা হাহাকার...” ।





এস্নিপস থেকে শুনতে হলে


সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:১৭
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×