somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ প রা ধ বো ধ ........... ( ছোটগল্প ) .......... ...

০৫ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বুড়িটাকে আর সহ্য হয় না । প্রতিদিন এ ছুতো ও ছুতো নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসবে । এসে কোন কারন ছাড়াই আমার ঘরে হুটহাট ঢুকে পড়বে। প্রথম প্রথম ভদ্রতা করে কিছু বলতাম না। ভাবতাম একা একা একটা শূন্য বাড়িতে দুজন মানুষ থাকে । বুড়ো নাকি এই বয়সেও কী একটা চাকরি করে । সেই সকালে বাইরে বেরিয়ে যায় । খালি বাড়িতে বুড়ি আর কতোক্ষন একা একা থাকবে !! তাই হয়তো সময় কাটাতে আমাদের বাড়িতে আসে ।

কিন্তু কিছুদিন পার হতে না হতেই একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম । বুড়ি আসলে আমাদের বাড়িতে আসে আমার সাথে কথা বলতে । সেই কথারও কোন আগামাথা নেই ।.......... কী খেয়েছি ? ভার্সিটিতে কার কার সাথে কথা বলি ? গত সপ্তাহে আমার যে জ্বর হয়েছিলো তা এখনো আছে কীনা এইসব খাপছাড়া প্রশ্ন ....... . আমার প্রতি বুড়ির এতো আগ্রহ কেন তা অনেক মাথা ঘামিয়েও বের করতে পারলাম না । উপরন্তু প্রতিদিন হুটহাট করে আমার রুমে ঢুকে পড়ায় একদিন যারপরনাই বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললাম ... কী দরকার ? ??? ...... আমার গলাটা বোধ হয় একটু রুক্ষ হয়ে উঠেছিলো । বুড়ি চমকে উঠলো । একটা সন্ত্রস্ত ভাব নিয়ে যেন লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে চাইলো । কোনওরকমে বললো ............ ..'' না বাবা , কিছুনা । গতকাল একটু পায়েস রান্না করছিলাম তো । তোমার কাকার তো ডায়বেটিস তাই মিস্টি কোন কিছু খায়না । তাই ভাবলাম পায়েসটা নষ্ট না করে তোমাকে খাওয়াই ।....... '' একথা শুনে একটু লজ্জাই পেলাম । বল্লাম , ঠিক আছে চলুন ।

আমাদের বাসা থেকে বুড়ির বাসা খুব বেশি দূরে না । কিন্তু এটুকু হাঁটতে হাটতেই বুড়ি হাপিয়ে উঠলো । অবশেষে মলিন শাড়ির আচঁলটা দিয়ে কপালের ঘামটুকু মুছতে মুছতে যে বাড়ির সামনে এসে বুড়ি দাড়াল , সেটাকে বাড়ি না বলে ঘুপচি বলাই ভাল ।
একটামাত্র শোবার ঘর । স্টিলের দরজাটা মরচে পড়ে নিচের অংশটা খসে গেছে । রান্নাঘরের অবস্থা সবচেয়ে করুন । গতকাল শেষরাতে বোধহয় বৃষ্টি হয়েছিলো । তার পানি এক কোনায় জমে স্যাতঁসেতে হয়ে আছে ।শ্যাওলা আর উচ্ছিষ্ট খাবার জমে গ্যাসের চুলাটা ছোটখাট একটা আবর্জনার স্তুপ হয়ে আছে । দেয়ালের পলেস্তেরা খসে খসে বেরিয়ে পড়েছে লাল ইটের নগ্ন রুপ । সর্বত্র নিম্ন মধ্যবিত্তের নগ্ন ছাপ স্পষ্ট ..... .....

আমাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বুড়ি যেন হঠাৎ করেই শশব্যস্ত হয়ে উঠলো । .......... ''কোথায় বসতে দেবে .??? !!! .. ঘরে যে একটা চেয়ারও নেই ............. '' একথা বলতেই আমি বল্লাম .... .. ''আপনি এতো ব্যস্ত হবেন না । আমি খাটেই বসি , কোন সমস্যা নেই ....''
খাটে বসে বসে শোবার ঘরটাতে ভালো করে চোখ বুলালাম ।বুড়ি আমার জন্য পায়েস আনতে চলে গেল । ঘরে দেখি তেমন কিছুই নেই । মশারির একটা স্ট্যান্ডে সব কাপড় চোপড় গাদাগাদি করে রাখা । দুটো তেল চিটচিটে বালিশ । একটা বালিশের কোনা দিয়ে তুলো বেরিয়ে আছে ..................... অবশেষে জানালার দিকে চোখ ফেরাতেই চমকে উঠলাম ।
জানালার পাশেই দেয়ালে একটা কাঠের ফ্রেমে ২৭/২৮ বছরের তরুনের ছবি । ছেলেটার চেহারার সাথে আমার চেহারার অদ্ভুত মিল ।
মনে হলো যেন আমারই ছবি বাধিঁয়ে রাখা হয়েছে । অবাক হয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম ছবিটার দিকে। হঠাৎ বুড়ির কথায় চমকে উঠলাম । ... বাবা , এই নাও পায়েস । ... কিন্তু ততোক্ষনে আমার অবাক চোখের দৃষ্টি অনুসরন করে বুড়ির চোখ ছবিটার দিকে চলে গেছে । ............ বাষ্পরুদ্ধ গলায় বললো ... আমার ছেলে ....... শুনেছি অনেক বড় অফিসার । সেই আমেরিকাতে থাকে ।
..................... দেশে আসেনা ???
....................... না, .... ....... আজ সাত বছর হলো ........।
গতকাল আমার বাবার জন্মদিন ছিলো । জানো , ও খুব পায়েস খেতে পছন্দ করতো ........
...................কোন যোগাযোগ নেই ??
.................... না .........
একথা বলতে বলতেই বুড়ি ঝরঝর করে কেদেঁ ফেললো ।

তখন একদলা কষ্ট এসে হঠাৎ করেই যেন আমার গলায় দলা পাকিয়ে গেল । আমাদের বাড়িতে যেয়ে বুড়ির অকারনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার কারন আমার কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠলো । . ............. এতো দারিদ্র্যতার মাঝেও পায়েসটুকুকে মনে হলো অনেক বড় বিলাসিতা ........ ........

আমি বুড়িকে কিছুই বললাম না ।শুধু লঘু পায়ে বাম চোখটা মুছতে মুছতে বাইরে বেরিয়ে এলাম ..........


আকাশে তখন ঝিরঝিরে বৃষ্টি ........ ..........



সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১০:৫৬
৬১টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×