somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকে বহিষ্কার এবং হরকিসেন সিং সুরজিতের অকালে চলে যাওয়া

০৫ ই আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতের লোকসভার স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে সিপিএম থেকে বহিষ্কার করার পর প্রচুর লেখালেখি হয়েছে কলকাতার সাময়িকীগুলোতে। অধিকাংশ লেখকই স্পিকারের অবস্থানকে সঠিক বলে চিহ্নিত করে বামপন্থীদের কর্মকৌশলের সমালোচনা করেছেন, সমালোচনা করেছেন তাঁদের মানসিকতার।

স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে বহিষ্কার করার পেছনে কারণ ছিলো দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদত্যাগ না করা। পরমাণু চুক্তিতে বিভক্ত ভারতের ক্ষমতাসীন জোটের একটি অংশের বিরোধিতার কারণে যে আস্থাভোটের আয়োজন করা হয়, সেখানে সোমনাথ দলের বাইরে অবস্থান করে স্পিকারের নিয়মানুযায়ী কর্মকাণ্ডগুলো সম্পাদন করেছেন। অথচ সিপিএমের দলীয় সিদ্ধান্ত ছিলো দলের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে সোমনাথকে এই সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধে অবস্থান করতে হবে। যেহেতু সিপিএম একটি ক্যাডারভিত্তিক সুশৃঙ্খল দল, সুতরাং তাদের নিজস্ব শৃঙ্খলার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই কারো। লোকসভায় স্পিকার পদে আসীন হওয়ার পর সোমনাথকে দলের এমপিত্ব ছাড়তে হয়েছে, কিন্তু তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদ পার্টিতে রয়ে গিয়েছিলো। লোকসভায় তিনি একজন দলনিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে কাজ করলেও পার্টির দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি পার্টিবিরোধী কাজ করেছেন।

একদিক দিয়ে বিচার করলে প্রত্যেকে তাঁর নিজস্ব অবস্থানে সঠিক। সিপিএম যা করেছে, তা তাদের দলীয় বিধি অনুসারেই করেছে। কোনো অন্যায় সিদ্ধান্ত দিয়ে তাঁরা সোমনাথকে বহিষ্কার করে নি। অন্যদিকে স্পিকার হিসেবে সোমনাথও তাঁর নিজস্ব অবস্থানে যা করার ছিলো তাই করেছেন। এছাড়া যারা বাইরে থেকে সোমনাথকে সমর্থন করেছেন এবং সিপিএমের এই কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছেন, তারাও সঠিক। ঠিক যেমন কৌতুকের মতো- বিচারক আসামির কথা শুনে বললেন, ‘ঠিক, তোমার কথাই ঠিক’। আবার বাদীর কথা শুনলেন এবং বললেন, ‘ঠিক, তোমার কথাই ঠিক’। দুজনের কথাই ঠিক হতে পারে না- উকিলের এই বক্তব্য শুনে বললেন, ‘ঠিক, তোমার কথাই ঠিক’।

যদিও এখানে প্রত্যেকের অবস্থানই ঠিক, কিন্তু মূল সমস্যা আসলে প্রত্যেকে অবস্থান করছে ভিন্ন ভিন্ন সিস্টেমে। নিজ সিস্টেমে তাঁরা প্রত্যেকে ঠিক হলেও অন্য সিস্টেমের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা ভুল কাজ করেছেন। আর সিস্টেমগুলোর মধ্যকার কোনো আন্তসম্পর্ক না থাকাতে এই পার্থক্যটুকু দেখা দিয়েছে প্রকট আকারে। উত্তরপন্থী ও দক্ষিণপন্থী কর্মকৌশল আলাদা- শুধু এ কারণেই একজন দোষী বা নির্দোষ সাব্যস্ত হতে পারেন।

যেহেতু সোমনাথ দলের প্রাথমিক সদস্য, তাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত ছিলো- এই সিদ্ধান্তে আসার পেছনে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে। আবার যেহেতু সোমনাথ স্পিকার, তাই তাঁকে স্পিকারের দায়িত্বটুকু পালন করাটা যথাযথ হয়েছে- এই সিদ্ধান্তে আসার পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রীয় আইন ও কানুন। রাষ্ট্র ও দলের আদর্শ বিপরীতমুখী হলে যা হওয়ার কথা, তাই হয়েছে এখানে।

নিজস্ব বয়সের বিচারে নয়, ভারতের সিপিএমের প্রবীণ নেতৃত্বের ভিড়ে প্রকাশ কারাত একজন তুলনামূলকভাবে তরুণ নেতা। দল ও রাষ্ট্র পরিচালনায় তরুণ নেতৃত্বকে উৎসাহিত করা হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে। কিন্তু সবক্ষেত্রেই তরুণ নেতৃত্ব বয়স্কদের তুলনায় ভালো করতে পারবে- এই ধারণা স্বতসিদ্ধ নাও হতে পারে। বিশেষ করে ভারতেই সিপিএম নেতৃত্বে এর আগে তরুণ নেতৃত্বের বিড়ম্বনা দেখা গিয়েছে ভালোভাবেই- রণদিভের আমলে। বলা হয়, রণদিভের বিভিন্ন হটকারী সিদ্ধান্তে সে সময় ভারতের সিপিএম মৌলিক অনেক জায়গা থেকেই চ্যুত হয়েছিলো। প্রকাশ কারাতের সিদ্ধান্তগুলোকে সেভাবে হটকারী বলা না হলেও কৌশলী সিদ্ধান্ত বলা যাচ্ছে না মোটেই। বিশেষ করে দলের গঠনতন্ত্র এবং নিয়মবিধি অপরিবর্তনীয় কিছু নয়; বিশেষ ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু নিয়মকানুন শিথিল বা পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে, এবং সেটা গঠনতান্ত্রিকভাবেই।

এই সময়ে আশা করছিলাম সিপিএমের অভিজ্ঞ নেতৃত্ব জ্যোতি বসু এবং হরকিসেন সিং সুরজিতের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হস্তক্ষেপ। যদিও সুরজিত প্রথমদিকে পার্টি লাইনে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন, কিন্তু আস্তে আস্তে এ ব্যাপারে তিনি একটি মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে চেয়েছিলেন বলেই মনে হলো। জ্যোতি বসুর প্রতিক্রিয়া এখনো স্পষ্ট নয়। প্রকৃতির নিয়মে হরকিসেন সিং সুরজিত মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯২ বছর; কিন্তু সিপিএমের রাজনীতির বিচারে এই সময়টি চলে যাওয়ার উপযুক্ত ছিলো না। তিনি থাকলে হয়তো স্পিকার বিষয়ে ভাবমূর্তি বাড়ানোর একটি পন্থা ভারতের সিপিএম পেয়ে যেতো।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×