গোলাম আজম একদা কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। তখন বেসরকারী কলেজগুলোতে কোনো পদক্রম ছিলো না। সরকারী কলেজগুলোতে প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদ থাকলেও বেসরকারী কলেজে এই ধারা ছিলো না, তাই বেসরকারী কলেজের সকল শিক্ষকই অধ্যাপক হিসেবে পরিচিত হতো।
এই কারণেই প্রভাষক হওয়া সত্ত্বেও তার নামের সাথে লেজুর হিসেবে জুড়ে যায় অধ্যাপক তকমাটি।
ভাষা আন্দোলনে গোলাম আজমের মহান ভুমিকা হলো তিনি জিন্নাহকে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃতির দাবিনামা প্রদান করেন। তবে এই সম্পূর্ণ উদ্যোগটি ছিলো সাম্প্রদায়িক একটা উদ্যোগ। যদিও জিন্নাহ সাহেব বলেছিলেন পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই এখন এই দেশে সবাই পাকিস্তানী হিন্দু কিংবা মুসলিম নয় সবাই পাকিস্তানী পরিচয়ে পরিচিত হবে। তবে তার সামনেই একজন হিন্দু নেতা এই দাবি উত্থাপন করলে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হবে এই বিবেচনায় গোলাম আজমকে দিয়ে এই দাবিনামা পেশ করাটা অনেক বেশী দুর্বল এবং সাম্প্রদায়িক একটা আচরণ ছিলো।
২রা ডিসেম্বর ১৯৭১ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এক সংবাদের ভাষ্য অনুসারে
অধ্যাপক গোলাম আজম নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের কাছে সত্যিকার অর্থেই ক্ষমতা হস্তান্তরের আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য পররাষ্ট্র এবং অর্থ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পূর্ব পাকিস্তানীদের হাতে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন এই মুহূর্তে দেশের জনগণের প্রধান দায়িত্ব আঞ্চিলিক অখন্ডতা এবং দেশের প্রতিরক্ষা এবং আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষার জন্য একত্রিত থাকা। তথাকথিত মুক্তিবাহিনীকে শত্রু বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন- এদের মোকাবেলা করবার জন্য রাজাকাররাই যথেষ্ট। তবে তিনি প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেন রাজাকার বাহিনীর সদস্য বাড়ানোর জন্য।
গোলাম আজম ইয়াহিয়ার সাথে ৭০ মিনিট বৈঠক করে এসে সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথাগুলো জানান।
এবং এর পরবর্তীতে এই পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধারের জন্য তিনি টানা ৫ বছর বিভিন্ন দেশে সফর করেন। তবে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা করবার উদ্যোগটা সফল হয় নি মোটেও।
তবে আমাদের প্রশাসণ এবং আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র এবং আমলাতন্ত্রের মানুষদের ভেতরের মুসলমান সত্ত্বাটিকে ধন্যবাদ। আমাদের দেশের নামটা বাংলাদেশ হলেও কার্যত এখানের প্রশাসনের কাঁধে ভর করে আছে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।