somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

২৯ শে জুলাই, ২০০৮ ভোর ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানবতাবাদী একজন ক্ষণজন্মা মানুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বিধবা বিয়ের প্রচলন ও বহু বিয়ের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির জন্য তিনি বিখ্যাত। তিনি ছিলেন শিল্পগুণ সমৃদ্ধ বাংলা গদ্যের স্রষ্টা। ভারতের মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের পাঠশালায়। আট বছর বয়সে তিনি বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলকাতায় যান। কলকাতায় এক বছর পাঠশালায় পড়ার পর তিনি ১৮২৯ সালে সরকারি সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজে একটানা ১২ বছর পড়ার পর তিনি ব্যাকরণ, কাব্য, অলঙ্কার, বেদান্ত, স্মৃতি, ন্যায় ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ১৮৩৯ সালে এসব বিষয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। ১৮৪১ সালে তিনি এ কলেজের পাঠ শেষ করেন।
১৮৪১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের হেড পণ্ডিত হিসেবে নিযুক্ত হন। পাচ বছর পর তিনি সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। পরের বছর সংস্কৃত শিক্ষার ক্ষেত্রে তার সংস্কারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হলে তিনি এ কলেজ ছেড়ে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে যোগ দেন। ১৮৫০ সালের ডিসেম্বরে তার শর্ত মেনে নেয়ায় তিনি আবার সংস্কৃত কলেজে যোগ দেন। ১৮৫১ সালের ২২ জানুয়ারি তিনি এ কলেজের প্রিন্সিপাল হন।
জনশিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগরের উৎসাহের কারণে সে সময়ের ছোট লাট ফেডারিক হ্যালিডে তাকে স্কুলের পরিদর্শক হিসেবে নিযুক্ত করেন। দায়িত্ব নিয়ে তিনি ছুটির সময় বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়ান এবং ২০টি মডেল স্কুল ও ৩৫টি গার্লস স্কুল স্থাপন করেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয়ায় তিনি ১৮৫৮ সালে সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
১৮৫৬ সালে তিনি কলকাতা ইউনিভার্সিটির ফেলো ও ১৮৫৮-তে তত্ত্ববোধিনী সভার সভ্য নিযুক্ত হন। ১৮৫৯-এ তিনি কলকাতা ট্রেনিং স্কুল (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) স্থাপনে ভূমিকা পালন করেন।
তিনি বিধবা বিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। বিধবা বিয়ের পক্ষে তিনি শাস্ত্রীয় প্রমাণ উপস্থাপন করেন এবং এ বিষয়ে বই প্রকাশ করেন। রক্ষণশীল হিন্দুরা তার এ উদ্যোগের ব্যাপক প্রতিবাদ করেন। প্রতিবাদীদের উত্তর দেয়ার জন্য বিদ্যাসাগর আরো একটি বই লেখেন। বিধবা বিয়ে আইন পাসের জন্য তিনি ১৮৫৫ সালের ৪ অক্টোবর তৎকালীন বৃটিশ সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে তিনি এ আইনের একটি খসড়াও যোগ করেছিলেন। ১৮৫৫ সালের ১৭ নভেম্বর এ খসড়াটি গভর্নমেন্ট অফ ইনডিয়া কাউন্সিলে উপস্থাপিত হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই বিধবা বিয়ে আইন পাস হয়। এরপর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে অনেক বিধবা বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বহু বিয়ে বিরোধী আইন পাসের জন্যও চেষ্টা করেন এবং এ বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরি করেন।
বিদ্যাসাগরের কয়েকটি বিখ্যাত গদ্যগ্রন্থ হচ্ছে বেতালপঞ্চবিংশতি, শকুন্তলা, সীতার বনবাস, ভ্রান্তিবিলাস ইত্যাদি। জনশিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি লেখেন বোধোদয়, বর্ণ পরিচয়, কথামালা, জীবনচরিত, আখ্যানমঞ্জরী ইত্যাদি বই।
১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই তিনি কলকাতায় মারা যান। আজকে তাঁর মৃতু্বার্ষিকী উপলক্ষে বিশিষ্ট এ সমাজ সংস্কারককে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০০৮ সকাল ৯:৪২
২৬টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×