somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চুম্বন - পত্রিকার পাতা থেকে থেকে ঢাকার রাস্তায়

২৪ শে জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯১-৯২ এর দিকে সাপ্তাহিক 'খবরের কাগজ' বেরুতো। 'খবরের কাগজ'-এ দুই বাংলার তাবৎ বুদ্ধিজীবী কলাম লিখতেন। আমি তখন ক্লাস থ্রি-ফোরের ছাত্র। আমার বাবা নিয়মিত 'খবরের কাগজ' রাখতেন। অকালপক্ক্ব আমি সে কলামগুলো গলাধঃকরণ করতাম। অনেক কিছুই অবশ্য হজম হতো না।
তো, এদেশের কোনো এক ইন্টেলেচুয়াল 'খবরের কাগজ'-এ একবার একটা কলাম লিখেছিলেন। সেটার কথা আমার এখনো মনে আছে। কলামটা ছিল একটি কাপল'কে নিয়ে। লেখক সাহেব একদিন ঢাকার রাস্তায় বেবিট্যাক্সি করে যাচ্ছিলেন। তার সামনের আরেকটি ট্যাক্সিতে সেই কাপল বসে ছিল। ভীষণ জ্যাম। হঠাৎ করে জ্যাম ছাড়ল। কাপলদের ট্যক্সির পেছন পেছন লেখকের ট্যাক্সি। কাপলরা হঠাৎ ঘনিষ্ঠ হওয়া শুরু করল। এক পর্যায়ে শুরু করল চুমু খাওয়া। লেখকের মতো আশপাশের সব যাত্রীই নাকি ভীষণ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন। কোনো এক দৈব কারণে পুরো রাস্তা লেখকের ট্যাক্সিটি সেই কাপলদের ট্যাক্সির পেছন পেছনই গেছিল এবং লেখককে এই 'বিব্রতকর' দৃশ্যটি হজম করতে হয়েছিল। এরপর কলামের শেষদিকে লেখক সামাজিক মুল্যবোধ এবং তার অবক্ষয় সংক্রান্ত বুদ্ধিজীবীয় খোলোশে ঢুকে গিয়েছিলেন। সেটুকু আমার আর পড়া হয়নি।
এই কলাম পড়ে আমি হাজারো প্রশ্নের উত্তর খুঁযে পাচ্ছিলাম না। পরে, ৯৪-৯৫ এর দিকে, বাংলাদেশ টেলিভিশন দিনে দুই দুই চার ঘণ্টা করে সিএন
এন আর বিবিসির প্রোগ্রাম দেখাতো। সেসব প্রোগ্রাম নিয়ে মা-খালাদের ফিসফাস শুনেছি। সিএনএন-এ হঠাৎ হঠাৎ ইউরোপ আমেরিকার রাস্তাঘাট দেখায়, সেখানে ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একজন আরেকজনকে চুমু খায়। এ নিয়েই এত ফিসফাস। চুমু খাওয়ার ব্যাপারটা আমি চাক্ষুষ প্রথম ওখানেই দেখি। তবে এ নিয়ে এত ফিসফাসের কী আছে বুঝে উঠতে পারিনি।
আমদের মফস্বল শহর রংপুরে ছেলে আর মেয়ে হাত ধরাধরি করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে - এ দৃশ্য সম্ভব ছিল না। অমুক মেয়েকে আজ কারমাইকেল কলেজের সামনে অমুক ছেলের সঙ্গে এক রিকশায় দেখা গেছে - এ নিয়ে খালাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করতে শুনেছি। চুম্বন নিশ্চয়ই সে মফস্বলে মহাবিপর্যয় ঘটাতো।
এর পরে, অনেক পরে, মৈত্রয়ী দেবীর 'ন হন্যতে' ততদিনে আমার পড়া, সে সুত্রে 'ফ্রেঞ্চ কিস' নিয়েও যথেষ্ট শিক্ষিত হয়ে গেছি, শুনেছিলাম যে রংপুরের উদ্যানগুলোয় 'লাভার'-রা কিস করে। কোনোদিন নিজে গিয়ে 'যাচাই' করার সৌভাগ্য অবশ্য হয় নি!
সময় এগোচ্ছিল। প্রেমিকরাও এগোচ্ছিলো প্রেমিকাদের দিকে। এর মধ্যে ঢাকায় চলে এসেছি। এখানে এসে দেখি রিকশায় ঘন হয়ে বসা কাপলদের। ফার্স্ট কি সেকেন্ড ইয়ার তখন। সন্ধ্যায় বুয়েটের সামনের রাস্তায় বন্ধুদের সঙ্গে উদ্দেশ্যহীন হাঁটাচলা করি। হুডতোলা রিকশা দেখলেই তা অনুসরণ করে আমাদের কৌতুহলী চোখ। হঠাৎ হঠাৎ কোনো বন্ধু বলে ওঠে, দেখ দেখ কী করে...!
আস্তে আস্তে আমার মফস্বলে চোখ শহুরে হয়ে ওঠে। টিএসসির সামনে দিয়ে রিকশা করে যাবার সময় দুপাশের ফুটপাথে আর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি না। হুডতোলা রিকশার কৌতুহলও কমে আসতে থাকে। কিন্তু প্রেমিকরা প্রেমিকাদের চুম্বন করেই যয়। রিকশায়, উদ্যানের ছায়ায়, সোডিয়াম আলোর নিচে, হঠাৎ অন্ধকারে।
আমাদের সবার চোখই কি আসলে সয়ে যায়? দুজন ফ্রেঞ্চ তরুণ-তরুণীকে প্যারিসের রাস্তায় চুম্বনরত দেখলে আমরা খুব সহজেই পাশ কাটিয়ে যেতে পারি। কিন্তু ঢাকার রাস্তায় হুডতোলা ছেলেমেয়েদের দিকে আমরা দ্বিতীয়বার তাকাই কেন? ভালোবাসার মধ্যে শরীর থাকবেই। কিন্তু রাস্তায়, গলিতে মেয়েটার মুখ টেনে ধরে ছেলেটা যখন চুমু খায় - ব্যাপারটা শিল্পিত লাগে না কেন? বাধাটা কি ঐতিহ্যে? আমাদের সংস্কৃতিতে? আমাদের রক্তে?
একটা সময় রাস্তায় কেউ চুমু খেলে তা নিয়ে পত্রিকায় কলাম লেখা হয়ে যেতো। খুব বেশিদিন মনে হয় লাগবে না, কাপলদের যখন আর কষ্ট করে রিকশার হুড তুলতে হবে না!






১৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×