somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সচলায়তন সংকট : হোয়াট ইজ টু বি ডান?

২০ শে জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৫:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ২০ জুলাই। ১৫ জুলাই থেকে সচলায়তন সমস্যার উদ্ভব ঘটেছে। ১৫ তারিখ থেকে বাংলাদেশের ইউজার ও ভিজিটররা সচলায়তন সাইটটিতে সরাসরি ঢুকতে পারছেন না। এই ঢুকতে না পারা বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে একটি অভূতপূর্ব পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। নানা জল্পনা-কল্পনা পল্লবিত হয়েছে। বোঝা যায়, বাংলা ব্লগ কমিউনিটি এখন বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে থাকার বড় একটি কমিউনিটি। এ ইস্যুতে ব্লগার মুখ্যত ত্রিধাবিভক্ত হয়ে গেছেন।
১. একভাগ বিশ্বাস করেন সচলায়তন অঘোষিত কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অষোষিত ব্যানের শিকার হয়েছে।
২. একভাগ মনে করেন, বিটিসিএল এন্ড বা সার্ভার (ব্লু হোস্ট ) এন্ডে কারিগরি সমস্যা দেখা দিয়েছে। (http://amarblog.com/sushantaa/2766)
৩. একভাগ মনে করেন সচলাতয়ন কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে পাবলিসিটি তৈরি করার জন্য এই ছদ্মব্যান পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
ব্লগাররা যাই মনে করুক, সত্য হলো, সচলায়তন ১৫ জুলাই থেকে বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বিচার করে, সচলায়তন কর্তৃপক্ষের ভীত-সন্ত্রস্ত প্রতিক্রিয়া থেকে যা বোঝা যায় তাতে তারা পাবলিসিটি তৈরি করার জন্য এ কাজটি করেছে বলে মনে করা যায় না। মনে করা কষ্টকর। এবং আমাদের সকলের চিন্তাকে অবাক করে দিয়ে যদি তা ঘটে তবে বাংলা ব্লগের ইতিহাসে তা সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি হিসেবে উদ্ধৃত হবে।
সচলায়তন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সার্ভার এন্ডে কোনো সমস্যা নেই। আমার জানামতে, একাধিক বার তারা বিষয়টি কনফার্ম করেছে।
যদি সার্ভার এন্ডে সমস্যা না থাকে তাহলে বিটিসিএল এন্ডে কোনো কারিগরি ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে। সুশান্তর পোস্টের যে লিঙ্ক ওপরে দিয়েছি তাতে সচলায়তনের মতো সমস্যায় পড়েছে এমন বহু সাইটের লিঙ্ক তিনি দিয়েছেন।
বিটিসিএল প্রান্তে কারিগরি সমস্যা এবং অঘোষিত ব্যান দুটি প্রসঙ্গের দিকে সকলের নজর এখন কেন্দ্রীভূত। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অসমর্থিত বা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক যেসব সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে স্পষ্ট হয় না যে সচলায়তন ব্যান হয়েছে। কারণ, কোনো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উৎস যদি বলে সচলায়তন ব্যান হয়েছে। তাহলে ধরে নিতে হবে ব্যানের খবর তিনি শুনেছেন বা জেনেছেন। পাশাপাশি স্বাভাবিক কৌতুহল থেকে সবার মনে যে প্রশ্নটি আসে, কেন? সেটি তার মনে আসবে না, এটা বিস্ময়কর। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলোর কেউই কারণ নির্দেশ করতে পারেননি। অন্তত একটি কারণও কেউ উল্লেখ করেননি। ফলে, খবরটির বর্তমান অবস্থা কী?
''নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, অজানা কারণে অজানা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সচলায়তন সহ জানা-অজানা একাধিক সাইট অঘোষিত ব্যানের শিকার হয়েছে।'' আর যাই হোক, খবর হিসেবে এটি কতটা আবেদন সৃষ্টিকারী তা যে কেউ বিবেচনা করতে পারবেন।
এছাড়া কিছু পরিস্থিতিগত কারণে ব্যানের বিষয়টি অনেকে বিশ্বাস করতে পারেননি। যেমন :
১. বাংলাদেশে বর্তমানে জরুরি অবস্থা জারি থাকলেও এবং জরুরি অবস্থার মধ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সহ কিছু মৌলিক মানবাধিকার স্থগিত থাকলেও কখনোই মিডিয়ার ওপর অল্প কিছু সময়ের জন্য ছাড়া সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয় নাই।
২. বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো আলাপ-আলোচনা ও আপোসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আপোস-আলোচনার পথটি অনেক প্রশস্ত। ফলে, মিডিয়া জরুরি অবস্থার প্রথম দিকের অবস্থার চেয়ে অধিকতর সাহসের সঙ্গে কথা বলছে।
৩. যেসব মিডিয়ার বেলায় বন্ধ করা হয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে আইনগত ঢালের আড়ালেই সরকার কাজ করেছে। বেআইনিভাবে কোনো মিডিয়াকে বন্ধ করা হয়নি। এক্ষেত্রে কৌশল করা হলেও আইনগত অজুহাত ছিল।
৪. বাংলা ব্লগ এখনও কমিউনিটি হিসেবে ছোট। সচলায়তন তার প্রায় ২০০ ইউজার ও এর ৩ থেকে ৫ গুন ভিজিটর নিয়ে ছোট পরিসরে কাজ করছিল। এই ছোট আকারের কমিউনিটির মতামতকে গ্রাহ্যের মধ্যে না নিয়ে আসাই সরকারের জন্য স্বাভাবিক।
৫. সচলায়তন যদি সরকার-বিরোধী কোনো কাজ করে থাকত তবে স্বাভাবিকভাবে তাদের সতর্ক করাকেই যথার্থ উদ্যোগ হিসেবে ধরা যেত।
৬. নিরুপায় হয়ে ব্যান করার মতো সিদ্ধান্তে উপনীত হলে, উপযুক্ত কারণ নির্দেশ করতে না পারার মতো দুর্বল অবস্থানে সরকার আছে বলে মনে হয় না।
৭. সরকার বা সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ সচলায়তনের ভয়ে অঘোষিত ব্যান আরোপ করেছে এটা অধিক চিন্তা বলে মনে হয়।

তারপরও অনেকে মনে করেন, সচলায়তন অঘোষিত ব্যানের শিকার হয়েছে। তাদের কাছে প্রশ্ন সচলায়তন কেন ব্যান হবে? নানা পোস্টে ও আলোচনায় যেসব কারণ উঠে এসেছে সেগুলোকে এক সাথে দেখা যেতে পারে।
১. সচলায়তনের ব্যানারে হায়েনার ছবি ব্যবহার করে বলা হয়েছিল বাংলাদেশে আমরা ভাল আছি। নানা সময়ে ব্যানারে এ ধরনের কনটেন্ট ইউজ করা হয়েছিল।
২. টাকা তুলে রাজাকার মারার খুনি জোগাড় করার মতো উদ্যোগ নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে।
৩. সচলায়তন একটি ক্লোজড ফোরাম। খুব বিচার-বিবেচনা করে সেখানে ব্লগার নেয়া হয়। লেখার মানের চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনা এক্ষেত্রে বেশি কাজ করে। ফলে, সরকারি কর্তৃপক্ষের ধারণা হতে পারে যে, এটি একটি ক্লোজড ও রেজিমেন্টেড গ্রুপ।
৪. কাকতালীয়ভাবে সচলায়তনের মডারেটর, উদ্যোক্তা ও কর্তাব্যক্তিরা সবাই দেশের বাইরে থাকেন। সরকারি কর্তৃপক্ষ মনে করতে পারে নোটিশ দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।
৫. সেখানে জামাত ও রাজাকার বিরোধী লেখা প্রকাশ করা হয় নিয়মিত, ফলে কর্তৃপক্ষের জামাত-পছন্দ কেউ এটি প্রভাব খাটিয়ে বন্ধ করাতে পারেন।
৬. একই মতাদর্শের লোকজন একত্রিত হয়েছে বলে সেখানে সরকার-বিরোধী লেখা বেশি প্রকাশিত হয়। এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের লেখা ছাপা হয় না। বা, কোনো কর্তৃপক্ষ, ব্যক্তি সেখানে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ পান না। ফলে, একতরফা এই মিডিয়া নিয়ে সরকারের মধ্যে সংশয় তৈরি হতে পারে।

কিন্তু আমার মতো ব্লগারদের অনেকেই বিশ্বাস করেন, সচলাতনের মধ্যে ছেলেমানুষী আছে, ছেলেমানুষী আবেগ আছে, ম্যাচুরিটির অভাব আছে কিন্তু তারা কোনো রেজিমেন্টেড গ্রুপ না। কাকতালীয়ভাবে তারা সবাই বিদেশে অবস্থান করলেও দেশে তাদের শেকড় আছে। ফলে, দেশের আইন কর্তৃপক্ষের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতাও আছে। এ কয়দিনে তাদের প্রতিক্রিয়া থেকে সেটি স্পষ্টভাবে বোঝা গেছে।
সচলায়তনের প্রতি ব্লগার হিসেবে আমাদের অভিযোগ অনেক। তাদের নীতি-পদ্ধতি আমাদের পছন্দ নয়। সেখানে যে মতপ্রকাশের পরিস্থিতি বিদ্যামান তাকে আমরা মতপ্রকাশ মনে করি না। তারপরও আমাদের মত হলো, সমাজে ভিন্নমতের অবস্থান আমরা চাই। সচলায়তন ভুলভাবে যে চর্চা করছে সেটা চালিয়ে যাওয়ার অধিকার তাদের আছে।
সরকার যদি সচলায়তনের কোনো ব্যাপারে আপত্তি করে, তবে সরকারের উচিত ফোরামটির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া। অথবা এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তাদের কাছে প্রকাশ করার জন্য পাঠানো।
যদি গুরুতর আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়ায় সেটি নিষ্পন্ন করা।
কোনো ব্যানের ঘটনা বাস্তবায়ন করা হলে সেটি ঘোষণা দিয়ে করা। যথাযথ কারণটি উল্লেখ করা।
কিন্তু কোনো অবস্থাতেই অঘোষিত ব্যান কাম্য নয়।
আমরা বিশ্বাস করতে চাই, মতপ্রকাশের অধিকার, ইন্টারনেট মাধ্যমে প্রসার ও সমাজে বহুমতের লালন-পালনের ব্যাপারে এই সরকার মনোযোগি এবং বর্তমান গ্লোবাল পরিস্থিতিতে তারা সংবাদ ও গণমাধ্যমের ওপর এমন কোনো সেন্সরশিপ আরোপ করতে চান না, যা আমাদের দেশকে একটি বদ্ধমতের দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।
ফলে, সরকারি কর্তৃপক্ষ অঘোষিত ব্যান উঠিয়ে নেবে বলেই আমাদের আবেদন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা বিশ্বাস করতে চাই, এটি কোনো অঘোষিত ব্যানের ঘটনা নয়। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কোনো অঘোষিত ব্যানের পরিস্থিতি নয়। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, এটা একটা কারিগরি ত্রুটিমাত্র। শীঘ্রই এই ত্রুটি সারিয়ে ফেলা হোক। সচলায়তন নিয়ে যে অভূতপূর্ব ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে তা পল্লবিত হওয়ার আগেই মিটিয়ে ফেলা হোক।
৩৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×