somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভৌতিক

১৭ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাল ১৯৬৭.....
কুমিল্লা জেলা সদর থেকে আনুমানিক ৪৫ কি মি ভিতরে , জায়গাটা আসলে দাউদকান্দি থানার অন্তর্গত একটা প্রত্যন্ত গ্রাম। ঐ গ্রামেরই সুলতান চৌধুরীর বড় ছেলে সোলায়মান চৌধুরী, তার বয়স ১৮ বছর, সে স্হানীয় হাই স্কুলে পড়ে। তবে কিনা তার বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব অনেক বেশী হওয়ায় সে বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে তার এক চাচার বাড়ীতে থেকে পড়াশুনা করতো। যা স্কুল থেকে কাছে ছিল। প্রসংগত উল্লেখ্য যে এই বাড়িটি ছিল নদীর পাড়ে। তখনকার দিনে গ্রামে বড় বাড়িগুলা বেশ খানিকটা বিশাল আয়তন নিয়েই । মানে ভিতর বাড়ি আর বাহির বাড়ির মধ্যে ছিল অনেকটা পথের ব্যবধান। আমাদের আলোচ্য গল্পের মূল চরিত্র সোলায়মান থাকতো বাহির বাড়ির একটি ঘরে। যে সময়কার কথা বলছি সে সময়ে ঢাকা শহরে ও ঠিকমত বিদ্দুৎ ছিলনা। আর অজ পাড়াগাঁয়ের কি অবস্হা তা আর নাই বা বললাম। এবার মূল ঘটনায় আসি।

তখন শীতকাল। নদীর তীরবর্তী ঐ অঞ্চলে ভালই শীত পড়েছে
সেইবার। সোলায়মান এবং তার সমবয়সী চাচাত ভাই রহমান ঐ বাহির বাড়ীতে বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেবার বাড়ির কি একটা কাজে -
রহমান কে ঢাকা যেতে হল। মাঝেমধ্যেই যেতে হ্য়।তবে একটা ব্যাপার পরিস্কার যে তখন কেউ ঢাকা যেতে চাইলে শুধু যেতেই ২ দিন লাগতো । পথ ঘাট / যান বাহন এর তেমন সুবিধা ছিলনা তাই।
সেদিন ছিল বুধবার। ঐ দিন সকালে অন্য মাসের মত এই বারও বাড়ির কাজে ঢাকা রওনা হতে হল।তো সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ল রহমান। সেদিন বিকাল থেকেই আকাশ অনেক মেঘলা । এই শীত কালে ঝড়ের পূর্ভাবাস। খুব দূর্যোগপূর্ণ রাত সন্দেহ নেই। অন্য দিনের মতই সোলায়মান রাতের বেলা বাহির বাড়িতে পড়ছে তবে আজ সে একা। রাত তখন বারোটা। হঠাৎ বাইরে থেকে ডাক পড়ল, "কই হে সোলায়মান দরজা খোল।" এর মধ্যে বলে রাখা ভাল যে বাহির বাড়ীর চারপাশে ঘন বাঁশবাগান। তাই রাতের বেলা একটু ভয় সবাই পেত। নিতান্ত নিরূপায় না হলে কেউ অত রাতে ঘর থেকে বের হতনা। যাই হোক সোলায়মান কিছুটা বিস্মিত হঠাৎ রহমান এর এই আকস্মিক আগমনে । কারণ আজকে সকালেই তো সে রওনা দিয়েছে । শিরশির করে আতংকের একটা স্রোত বয়ে যায় তার শরীরে হঠাৎ। অনেক কল্পকাহিনী তে শোনা গল্পই বুঝিবা মনে পরে যায় তার। কিন্তু পরক্ষণেই রহমানের ধৈর্য্যচূত্য কন্ঠ শোনা যায় ,"কি রে দরজাটা খোল না , শীতে তো জমে গেলাম।" দ্বিধা টা কেটে যায় হঠাৎ সোলায়মান এর। ভাবে আরে রহমানই তো। সে দরজা খুলে দেয়। সামনেই রহমান দাড়ানো। কিছুটা অন্যরকম কি লাগছেনা আজকে রহমান কে। যাই হোক সোলায়মান ইতঃস্তত করতে থাকা রহমানের দিকে তাকায়, "কিরে এত রাতে ....আজকেই ফিরে এলি?" সোলায়মানের বিহ্বল প্রশ্ন। রহমান বাইরে দাড়িয়েই বলে ,"আর বলিসনা , এদিকে বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে, তাড়াতাড়ি গাংপাড়ে (নদীর তীর) চল। " সোলায়মান বলে এত রাতে আবার গাংপাড়ে কেন? "সব বলছি , তুই তাড়াতাড়ি আয়" তাগাদা দেয়ার সুরে বলে রহমান। কিছুটা কৌতূহলী বা কিছুটা ঘটনার আকস্মিকতায় রহমানের পিছু নেয় সোলায়মান। ঘর থেকে বের হয়ে এগিয়ে যেতে থাকে নদীর পাড়ের দিকে । বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়ার পর ঘোর খানিকটা কেটে যায় বোধহয় সোলাময়মানের। সে এবার রহমানের দিকে ভাল করে তাকায়, ততক্ষণে নদীরও বেশ কাছাকাছি চলে এসেছে তার। পরক্ষণেই বাকরূদ্ধ হয়ে যাওয়ার যোগাড় হয় সোলায়মান । এতক্ষণ সে কার পিছু নিয়ে এতদূর এসেছে? বড় বড় চোখ, রক্তের মত লাল, দুইটি দাঁত বের হয়ে আছে, সারা গায়ে বড় বড় লোম এবং আঁশটে গন্ধ যুক্ত এই প্রানীটি কে? বিকট একটা চিৎকার দিয়ে উঠে সোলায়মান। প্রানীটি এইবার রক্তচক্ষু মেলে সোলায়মানের দিকে তাকায়।....... এরপর কি হয়েছিল তা সোলায়মানের ভাল মনে নেই। যতদূর মনে পড়ে সে আল্লাহ রাসূল এর নাম নিতে নিতে দৌড়ে এসে ঘরের ভিতর পর্যন্ত ঢুকে বেহুঁশ হয়ে পড়ে। সকালে সারা গ্রামের লোকজন আসে। ঘটনা শুনে সবাই বলে যে সোলায়মান ঘর থেকে বের হয়ে কাজটা ভাল করেনি। অনেক বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারত। যাই হোক নিশি রাতে ঘর থেকে কারো ডাকে বের হতে হলে যার সাথে বের হচ্ছেন তাকে অন্তত একবার ঘরের ভিতরে আসতে বলবেন। সে যদি কোনরকমেই ঘরে ঢুকতে না চায় তাহলে আপনার যা মনে করার আপনি মনে করে নিতে পারেন।

পরিশিষ্ট: এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র এবং ঘটনা সত্যি। জীবিত এবং মৃত অনেকের সাথেই এই ঘটনার মিল পাওয়া যেতে পারে।
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×