somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীন মুখে গাইবো স্বাধীন গান...

১৪ ই জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালে প্রায় নয়মাস যুদ্ধ করে পাওয়া গেল-একটি স্বাধীন দেশ,একটি স্বাধীন ভাষা,একটি স্বাধীন
সংস্কৃতি এবং একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বীকৃতি।আজ স্বাধীনতার প্রায় ৩৭ বছর পর চিত্র অন্যরকম।এখন আমাদের দেশ অন্য রাষ্ট্রের অধীনে না থাকলেও নিজ দেশের কতিপয় সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি।স্বাধীন ভাষা এখন হিন্দি ও বাংলিশ ভাষায় মিশ্রিত হয়ে কলুষিত ও জর্জরিত।স্বাধীন সংস্কৃতি এখন বলিউডি ও হলিউডি (আগে বলিউড,তারপর হলিউড) স্টাইলে বিকৃত।আর স্বাধীন জাতি হিসেবে যতটা না খ্যাতি,তারচেয়ে বেশি “তলাবিহীন ঝুড়ি” হিসেবে অন্য দেশের মানুষের কাছে আমাদের পরিচিতি।দয়া করে একটু ভাববেন কি যে,আমরা কি আসলেই স্বাধীন?বা,আমাদের কি খুব দ্রুত আরেকটি বড় ধরনের মুক্তিযুদ্ধে নামার প্রয়োজন নেই?

দেশে এখন রব উঠেছে-“যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই”।এই যুদ্ধাপরাধীদের সনাক্ত করে উপযুক্ত সাজা দেয়া হয়তো সম্ভব,কিন্তু সামনে যাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে নামতে হবে তাদের কিভাবে সনাক্ত করবেন?যারা আমাদের ভাষা,সংস্কৃতিকে গলা টিপে হত্যা করে নিজেদের আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের কি শাস্তি দেবেন?দেশের যারা রব তুলেছেন “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই” তারা কেন বলছেন না যে “যারা আমাদের মাঝে নিজেদের ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের আমরা পরিত্যাগ করতে চাই”?

~*~স্বাধীন ভাষা~*~

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের ইংরেজি জানা প্রয়োজন,এ কথা নতুন নয়।কিন্তু পরিস্থিতি এখন এমন,যেন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের ইংরেজির চেয়ে হিন্দি টা জানাই বেশি জরুরী।অন্যান্য দেশে যেখানে নিজের মাতৃভাষার পর পরই প্রাধান্য পায় ইংরেজি ভাষা,সেখানে আমাদের দেশে অবচেতন ভাবে নিজের ভাষার পর পরই (কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার আগেই) হিন্দির প্রাধান্য চলে আসে।এ কথা বলতে খুব কষ্ট হলে ও আমাদের দেশের চিত্র এখন এরকম করুণ।একটা পাঁচ বছরের বাচ্চা যে কি না নিজের মাতৃভাষার বহু শব্দের সাথেই এখনো পরিচিত হয়নি,দেখা যায় হিন্দি চ্যানেলগুলোর বদৌলতে সে হিন্দি ভাষা খুব ভালো বুঝতে পারে এবং খুব ভালো বলতে না পারলে ও কাজ চলার মত বলতে পারে।ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর চিত্র ও যে খুব ভালো তা কিন্তু নয়।ছোটবেলা থেকেই তারা ইংরেজি শুনতে শুনতে এবং বলতে বলতে অভ্যাস্ত হয়ে যায়।যার ফলে নিজের দেশের ভাষাটা রয়ে যায় অধরা।আর অন্যান্য স্কুল-কলেজে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ত্র“টির কারণে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি মুখস্ত ছাড়া জানার-শেখার চেষ্টা করে না।তারা ইংরেজি না জানলে ও হিন্দি ভাষায় আবার খুবই পারদর্শি।হয়তো সেই দিন খুব বেশি দূরে নেই,যখন দ্বিতীয় আর্ন্তজাতিক ভাষা হিসেবে (কে জানে,হয়তো প্রথম আর্ন্তজাতিক ভাষা হিসেবেই) হিন্দিকে স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং আমাদের ত্র“টিযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন “হিন্দি শিক্ষা” বিষয় অর্ন্তভুক্ত করা হবে!আমাদের শিক্ষার্থী ভাই-বোনেরা চোখ বন্ধ করে তাতে এ+ পাবে।আমেরিকা-ব্রিটেনের সাহেবেরা তখন মুখ কালো করে মনে-প্রাণে হিন্দি ভাষা শিখতে নেমে পড়বে এবং কপাল চাপড়াবে এই ভেবে যে-”ইশ,যদি বাঙ্গালিদের মতো ছোটকাল থেকেই হিন্দি সিরিয়াল আর বলিউডের ছবিগুলো দেখতাম!“!!

~*~স্বাধীন সংস্কৃতি~*~

আমার জানা মতে,ভারতে বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল দেখানো হয় না।দেখাতে হলে তাদেরকে আমাদের আলাদা পয়সা গুণে দিতে হবে।কিন্তু ”ফ্রি পেলে আমরা চিকা মারার বিষ ও খাই“।এই এখন যেমন অল্প কিছু চ্যানেল বাদে বাকিগুলো স্বল্পমূল্যে পেয়ে আমরা পরসংস্কৃতি চর্চায় মেতে উঠেছি।আবার ক্ষেত্রবিশেষে আমরা নিজের পয়সা দিয়ে চিকা মারা বিষ কিনে খাচ্ছি (অর্থাৎ গাটেঁর পয়সা খরচ করে পরসংস্কৃতি চর্চা করছি)।ওপার বাংলার মানুষরা পর্যন্ত এপার বাংলার কোনো চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখতে পায় না।কিন্তু আমরা ওদের প্রায় সব চ্যানেলই দেখতে পাচ্ছি।যতক্ষন পর্যন্ত ভারতের সব চ্যানেল বাংলাদেশের জন্য হারাম করা না হবে,ততক্ষন পর্যন্ত দেশের সংস্কৃতিকে পূর্ণতা দান করার কোনো উপায় নেই বলে আমার বিশ¡াস।কোনো ভাষা শেখার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে -শব্দ শোনা,তা বুঝতে পারা,তারপর বলতে পারা।দেশি চ্যানেলে অনেক ভালো অনুষ্ঠান হলে ও রাতে-দিনে চ্যানেল ঘুরে চলে যায় স্টার প¬াস,সনি,জিটিভি‘র দিকে।সেসব চ্যানেলের হিন্দি সিরিয়ালগুলোর অধিকাংশই আবার বিরতিহীন ভাবে কয়েক বছর চলে যা আমরা খুব ধৈর্য্য নিয়ে মনযোগ সহকারে দেখি (পুনঃপ্রচার হলে তা ও দেখি)।খুব ছোটকাল থেকেই তাই আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে আমরা নামে বাঙ্গালি,ভাষায় হিন্দুস্তানি আদমি এবং কর্মে ওয়েষ্টার্ন সাহেব হয়ে উঠি।ভারতীয়রা তাদের বলিউডের ছবিগুলোর শুধু গান শুনিয়েই আমাদের দেশের মানুষকে অর্ধেক ইন্ডিয়ান বানিয়ে দিয়েছে।আজ যে ছেলে বা মেয়ের গানের গলা খুব সুন্দর,দেখা যাবে সে যতগুলো না দেশের গান জানে তারচেয়ে বেশি জানে হিন্দি ছবির গান!স¤প্রতি আবার দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশের শিল্পীরা ও ”নিজের খেয়ে পরের গীত“ গাইছে।দেশে তাদের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না,তাই বলিউডে গান গেয়ে তারা আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে একটেলের মতো আরো “একধাপ এগিয়ে” নিয়ে গেছে!তার দেখাদেখি আরো দু-পাচঁ জন ও প্রথমে বলিউড তারপর হলিউডে গান গেয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে এবং একসময় এটাকে একটা ফ্যাশানে পরিনত করবে।

দেশের চ্যানেলগুলোর নাটকে এখন প্রায়ই দেখা যায় নাটকের চরিত্রগুলো হিন্দিতে ন্যাকা ন্যাকা কথা বলছে।আমরা অনুকরণপ্রিয় বাঙ্গালিরা “একান্নবর্তী”,“ব্যাচেলর” দেখে ধরেই নিয়েছি এরচেয়ে ভালো ডায়ালগের স্টাইল বুঝি আর হয় না।তাই এখন নাটকে “খাচ্ছি-যাচ্ছি” না শুনে বেশির ভাগ সময়ই শুনতে পাই “খাইতাছি-যাইতাছি”।এটা একটা স্টাইল হয়ে গেছে যা পরিত্যাগ করা কষ্টকর।তেমনি ঐ একটা-দু‘টো হিন্দিতে ন্যাকা ন্যাকা কথা বলা চরিত্র নতুন “হিন্দি বলার স্টাইল” তৈরিতে অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।কয়েক বছর পর হয়তো দেখা যাবে “পাবলিক হিন্দি বেশি খায়” এবং বুঝে বলে বাংলাদেশের সব চ্যানেলের নাটকগুলো হিন্দি ভাষায় হচ্ছে!চরিত্র ফুটিয়ে তোলার স্বার্থে “খাইতাছি-যাইতাছি” বলানো যায়,কিন্তু শিক্ষক-ডাক্তারদের মত শিক্ষিত চরিত্র ও যদি বলে “খাইতাছি-যাইতাছি”,তবে একে একটি স্টাইলের মধ্যেই ফেলতে হয়।

যুগে যুগে ভাষার পরিবর্তন হবেই।প্রথমে কবিগুরু লিখতেন দাঁতভাঙ্গা সাধু ভাষায়,তারপর লিখলেন চলিত ভাষায়।এই শতাব্দির শেষের দিকে ভাষার কিছু পরিবর্তন হয়ে ”ঘরোয়া খাইতাছি-যাইতাছি” ভাষা হয়ে গেল “সর্বজনীন খাইতাছি-যাইতাছি” ভাষা।এরপর সামনের দিনগুলোতে আর কেউ হয়তো বলবে না “খাইতাছি-যাইতাছি”,বলবে ”খা রাহা হু-যা রাহা হু“।

এই লেখাটা লিখতে গিয়ে ”আহা!“ ছবির একটা গান মনে পড়ে গেল ঃ

”আমরা এখন স্বাধীন চাষা,স্বাধীন মোদের জমি চাষা,
স্বাধীন মোদের লাঙ্গল-জোয়াল মোষ,
ওরে স্বাধীন দেশের টাকা-কড়ি,স্বাধীন মোদের বাস্তু-বাড়ি,
স্বাধীন মোরা পিয়াঁজ-পান্তা খাই...

ওরে স্বাধীন হাড়ির পান্তা ভাতে,বাড়বে রে বল হাড়ির চাইতে,
স্বাধীন দেশের হিন্দু-মুসলমান,
ওরে স্বাধীন মেঘের হবে বৃষ্টি,হবে না আকালের সৃষ্টি,
স্বাধীন মাঠে ফলবে সোনার ধান...

ওরে স্বাধীন বৌয়ের দাঁতের হাসি,স্বাধীন চোখে দেখবো বসি,
স্বাধীন মুখে তুলিয়া দিবে পান,
ওরে স্বাধীন তালের পাংখা দিয়া,ঠান্ডা করে দিবে হিয়া,
স্বাধীন মুখে গাইবো স্বাধীন গান...।।“


গানের কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলতে চাই -”আজ থেকে আমরা স্বাধীন মুখে স্বাধীন গান গাইতে চাই“।


[email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×