somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বিধা-২ (ধারাবাহিক)

১৩ ই জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের ইন-চার্জ। ন'টার মধ্যে অফিসে পৌঁছুতে হয় কিন্তু কখন অফিস থেকে বেরুতে পারবো, তা কেউ বলতে পারেনা। আমার সাব-অর্ডিনেটদের সবাই আমার কাছে বলেই অফিস থেকে কেটে পড়তে পারে। কিন্তু আমাকে বেরুতে হলে চেয়াম্যান স্যার মানে আবতাব উ চৌধুরী অথবা ডিরেকটর ম্যাডাম মানে ফারহানা ম্যাডামকে বলতে হয়। আমাদের অফিস আওয়ার প্রায় শেষ হলে চেয়ারম্যান স্যারের অফিস আওয়ার শুরু হয়। ফারহানা ম্যাডাম ঠিকই সময় মতো অফিসে আসেন কিন্তু চেয়ারম্যান স্যারের কারণে ফিরতে হয় অনেক দেরী করে। চেয়ারম্যান স্যারের সারাদিন কাটে অন্যান্য ব্যবসায়িক অফিসগুলোতে। সুতরাং ডিরেকটর ম্যাডামকেই এই অফিসটি সামলাতে হয়। আর আমরা আটজন এইচওডি অর্থাৎ হেড অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট ফারহানা ম্যাডামকে আগলে রাখি। একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের অন্যান্য কলিগরা হলো বশির সাহেব, হাবিব সাহেব, ফিরোজ সাহেব, শাহানা সুলতানা, তাহমিনা শিল্পী এবং পুজা সাহা। সবাই যেন এক পরিবারের সদস্য। দিনের বেশিরভাগ সময় যেহেতু আমাদের একই সাথে কাটাতে হয়, সেজন্য একজন আরেকজনের প্রতি আপনজনের মতোই আচরণ করে। একজন আরেকজনের হাঁড়ির খবর পর্যন্ত জানে। মেধা এবং মেঘ এর ব্যাপারেও ওরা নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে একজন আরেকজনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওরা সবাই কাজের ব্যাপারেও খুউব হেল্পফুল। ওরা সবাই আমার পরামর্শ, নির্দেশনা মেনে চলে। আমাদের ডিপার্টমেন্টে একদম বসিজম চলেনা। ওরা আমাকে মেহেদিভাই অথবা ভাইয়া বলে ডাকে। ফারহানা ম্যাডাম শুধু আমাকে রহমান সাহেব বলে ডাকেন। মেহেদী বলতে নাকি উনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না। কারণ, ম্যাডামের বড় ভাইয়ের নাম নাকি মেহেদী। সুতরাং উনি আমার 'মেহেদী রহমান' নামের শেষাংশ রহমান সাহেব বলেই ডাকেন।

সেদিন ছিলো রোববার। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম। ধানমন্ডির বাসা থেকে বনানী অফিসে পৌঁছুতে প্রায় দেড়ঘন্টা লেইট। হন্ত-দন্ত হয়ে অফিসে গিয়ে শুনি ফারহানা ম্যাডাম ৩/৪ বার আমার খোঁজ করেছেন। ম্যাডামের রুমে ঢুকে দেখি ম্যাডাম বিরক্তমুখে কম্পিউটারে কি যেন করছেন। আমাকে দেখে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন।
ওহ্ রহমান সাহেব, আসেন, বসেন। খবর কিছু রাখেন?
কিসের খবর ম্যাডাম?
আশ্চর্য! আপনি এইচওডি, আর খবর রাখতে হচ্ছে আমাকে?
ঠিক বুঝলামনা। একটু খুলে বলতেন যদি ম্যাডাম।
মি. রহমান, ফিপটিন চেকস আর অলরেডী বাউন্সড। হোয়াট হ্যাপেনড?
ফারহানা ম্যাডাম রেগে গেলে ইংরেজীতে বলতে থাকেন।
হুইচ চেকস? আওয়ার ইস্যুড চেকস অর সাপ্লায়ার্স চেকস ম্যাডাম?
সাপ্লায়ার্স চেকস। বাট হোয়াই ইউ আর নট ইনফর্মড অ্যাবাউট দ্যাট?
ম্যাডাম চেকগুলো আমার দিকে মেলে ধরলেন। অবাক ব্যাপার যে, চেকগুলো আমার কাছে ফেরত না এসে ম্যাডামের কাছে এলো কি করে? ম্যাডামের কাছে আসার আগে আমি এগুলোর খোঁজ খবর নিতাম। সাপ্লায়ার্সদের সাথে কথা বলে কারণগুলো উদঘাটন করতাম। সাপ্লায়ার্সদের পরামর্শ সাপেক্ষে প্রয়োজনে কিছু চেক আবার ব্যাংকে প্লেস করতাম। সবশেষে ম্যাডামকে পরিস্থিতি বুঝে জানাতাম। কিন্তু কার কাজ এটা? কে আমাকে ডিঙিয়ে ম্যাডামের কাছে নিয়ে এলো ডিজ-অনারড চেকগুলো? ব্যাংকের সাইট তো বশির সাহেব দেখে। তাহলে কি ম্যাডামের কাছে আমাকে দ্বায়িত্বহীন বোঝানোর জন্য বশির সাহেব এই কাজটা করলো?
ওকে ম্যাডাম। লেট মি চেক অল দ্যা ম্যাটার। ডোন্ট বি ওরিড। আই উইল ইনফরম ইউ লেটার।
ওকে। চেক এন্ড ইনফর্ম মি।
চেকগুলো নিয়ে এসে আমার ডেস্কে এসে অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকলাম। ভাবলাম, বশির সাহেব গতকাল একটা লিভ ফর্ম নিয়ে এসেছিলো তিন দিনের ছুটি চেয়ে। আমি তাৎক্ষনিক এ্যাপ্রোভ না করে বলেছিলাম, ম্যাডামের সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে কি বশির সাহেব সেই শোধ এভাবে নিলো? কাউকে কিছু বুঝতে দিলামনা। কিন্তু আমাকে চুপচাপ থাকতে দেখে অন্যরাও বুঝে ফেললো, সামথিং রং। অনেকদিন ধরে একসাথে কাজ করতে গিয়ে আমার আচরণ ওদের মুখস্থ। কখন মন খারাপ হয়, কখন মুডঅফ করি, কখন প্রফুল্ল চিত্তে থাকি। প্রথমে পুজা এগিয়ে এলো।
দাদা, মন খারাপ কেন? কোনো সমস্যা? কি হয়েছে?
নাহ, ঠিক আছি।
পুজার পেছনে যথাক্রমে হাবিব সাহেব, ফিরোজ সাহেব, শাহানা, শিল্পী এবং সবশেষে বশির সাহেব। সবাই আমাকে ঘিরে নিরীহ এবং অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। বশির সাহেবের চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে, সে-ই অপরাধী। সবাইকে বসতে বলি। বিষয়টা নিয়ে সবার সাথে আলোচনা করি। বশির সাহেবকে জিজ্ঞেস করি, 'আপনি এই কাজটা করতে গেলেন কেন'?
আমাকে ভুল বুঝবেন না, মেহেদিভাই। আপনার আসতে দেরী দেখে ম্যাডাম ফোন করে সবক'টা ব্যাংকের অবস্থা জানতে চাইলেন। ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং লেজার বুক নিয়ে ওনার রুমে যেতে বললেন। লেজার বুকের ব্যালেন্স এর সাথে ব্যাংক স্টেটমেন্টের ব্যালেন্স এর গড়মিল দেখে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকলেন। অনেকবার আপনার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু আপনি কোনো রেসপন্স করেননি।
'আমাকে ম্যাডাম কল করেছেন? কই আমিতো কোনো কল পাইনি'?
বলেই মোবাইলটা হাতে নিলাম। ওমা, এ দেখি ৯টা মিসড কল এবং ১টি মেসেজ এসেছে। বাসে ছিলাম বলে টের পাইনি। সার্চ করে দেখি ম্যাডামের ৪টি, রুপোন্তির ২টি এবং আন-নোউন কল ৩টি। মেসেজটি এসেছে রুপোন্তির ফোন থেকে। বশির সাহেব আবার শুরু করলো।
'ম্যাডাম অবশেষে ডিপোজিটেড চেক এবং কালেকশান চেকগুলোর অবস্থা জানতে চাইলেন। বাধ্য হয়ে বাউন্সড চেকগুলো দেখতে চাইলেন।
ঠিক আছে, আপনি সাপ্লায়ার্সদের লিস্ট এবং স্টেটমেন্টগুলো আমাকে দেন। দেখছি কি করা যায়। আর আপনারা যার যার কাজে যান।
পুজাঃ এ ব্যাপারে আমরা কি কোনো সহযোগিতা করতে পারি, দাদা?
হাবিবঃ হ্যা, ভাইয়া। আমাদের কোন কাজ দিতে পারেন। যেকোন কাজ।
শাহানাঃ আগে আপনি একটু ফ্রেস হয়ে চা-টা কিছু একটা খেয়ে নিন। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই আছিনা?
শিল্পীঃ শাহানাপু ঠিকই বলেছে ভাইয়া। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।
'ঠিক আছে। আপনারা যে যার ডেস্কে যান। প্রয়োজনে আপনাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে।'
ফিরোজ সাহেব পরিস্থিতি হালকা করতে চাইলো। প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞেস করলো।
'মেহেদিভাই, মেধা-মেঘ কেমন আছে? আর ভাবী? অনেকদিন হলো ওদের সাথে কথা হয়না। মেধা কি এখনো পাকা পাকা কথা বলে?'
সবাই ভালো আছে ফিরোজ সাহেব। ওদের ব্যাপারে পরে আলাপ করা যাবে।
ওদের সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে মোবাইলের মেসেজটি ওপেন করি। রুপোন্তির ফোন থেকে মেসেজটি এলেও মেসেজের বক্তব্য মেধার। মেসেজটা শুরু হলো এই ভাবে, 'ফ্রম মেধা টু ডিয়ার সুইট বাবা: বাবা, হ্যাভ ইউ ফরগোট আস? মা ইজ রিবিউকিং আস এজ উই আর নট টেকিং ব্রেকফাস্ট। বাবা প্লিজ কাম এন্ড সেভ আস। ডোন্ট ফরগেইট এবাউট টেন ডেইজ লিভ, আই লাভ ইউ টু মাচ, মাই সুইট বাবা'।
মেসেজটি পড়ে আবার মন খারাপ হয়ে গেলো। অফিসের এই পরিস্থিতিতে দশ দিনের ছুটি চাইবো কি করে? অফিসের এই ভারী পরিবেশটা আগে হালকা করতে হবে। তারপর পরিস্থিতি বুঝে, ম্যাডামের মুড বুঝে ছুটি চাইতে হবে। ফারহানা ম্যাডামও মেধা আর মেঘকে খুউব আদর করেন। সেদিক থেকে অ্যাডভান্স অবস্থায় আছি।

(চলবে)
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×