somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল জামাতের রাজনীতি করার অধিকার নেই!

১৩ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্তিরতা, প্রলম্বিত সামরিক শাসন আর রাজনীতিবিদদের সীমাহীন ক্ষমতার লিপ্সা স্বাধীনতা বিরোধী জামাত ধীরে ধীরে এগিয়ে গেছে। এরা কৌশলে এগিয়ে ক্ষমতার স্বাদও গ্রহন করেছে। রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশী নীতিহীনতার নিদর্শন হিসাবে একবার এই নেত্রী - পরের বার আরেক নেত্রীর আশ্রয়ে গিয়েছে - সামরিক শাসকদের সাথে আতাত করেছে। আজ যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতা স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ইতিহাসে অবস্থান নির্ধারন করে বক্তব্য দেওয়ার মতো ধৃষ্টতা দেখাতে দেখা যাচ্ছে।

দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় চার দশক - কিন্তু জামাত তাদের অবস্থা থেকে এক চুলও নড়েনি। তারা তাদের সামস্টিক বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থানের জন্যে কোন দু:খ প্রকাশ করেনি। এই অবস্থায় বিভিন্ন অবস্থান থেকে জামাতের রাজনৈতিক অধিকারে বৈধতা না দেবার জন্যে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছে। কাদের সিদ্দিকী থেকে শুরু হয়ে এখন আওয়ামীলীগও একই দাবী করছে।

বিষযটা একটু গভীর ভাবে বিবেচনার দাবী রাখে।

এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার আর জামাতের রাজনৈতিক অধিকার এক করে দেখা যৌক্তিক হবে না। যুদ্ধাপরাধী যে শুধু জামাতের মধ্যে আছে তা না - যুদ্ধাপরাধীরা ব্যক্তিগত ভাবে আইনের কাছে দায়বদ্ধ হবে। যখন বিচার হবে - তখন এরা ব্যক্তিগত ভাবে জবাবদীহি করবে।

কিন্তু জামাত হলো একটা সংগঠন - যে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে যুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। তাদের কর্মকান্ড পুরোপুরি বাংলাদেশ বিরোধী ছিল। এরা শুধু যে নীতিগত ভাবে বাংলাদেশের জন্মের বিরোধীতা করেছে তা নয় - সাংগঠনিক ভাবে সিস্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়েছে।

তারপর পদ্মা-মেঘনা দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে - কিন্তু জামাত তার বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসেনি। এদের কৌশলগত কর্মকান্ডের অংশ হিসাবে প্রচলিত রাজনীতিতে অংশ গ্রহন করলেও দেশের সংবিধান বা শাসনতন্ত্রকে এরা মানে না। ১৯৭১ এর অপকর্মের জন্যে এরা মোটেও লজ্জিত না - বরঞ্চ ক্ষমতাশীনদের দেউলিয়াত্বের সুযোগে তাদের বিরোধিতাকারীদের উপরে নেমে এসেছে জেল-নির্যাতন।

মূলত এরা প্রকাশ্যে এবং গোপন কর্মকান্ডের মূল লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে শক্তি আর্জন করে বাংলাদেশকে ১৯৭১ এর পূর্বাবস্থানে নিয়ে যাওয়া। এরা গনতান্ত্রিক অধিকার ব্যবহার করে দেশকে একটা স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিনত করার লক্ষ্যে এগুচ্ছে। যার উদাহরন দেখেছি তালেবান আফগানিস্থানে। এবং ফলাফল দেখছি এখনও।


সুতরাং দেখা যাচ্ছে - জামাত আসলে গনতন্ত্রের মুখোশ নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী একটা দল হিসাবে তাদের কর্মকান্ড চালাচ্ছে। জামাতের কৌশলগত খেলার অংশ হিসাবে তাদের নীতিগত দ্বিচারিতার প্রচুর উদাহরন দেখা যাবে। তার কিছু নমুনা দেখুন -

১) নারী নেতৃত্ব ইসলামে হারার বিশ্বাসে জামাতের নেতৃত্বে কোন নারীকে দেখা যাবে না - কিস্তু ক্ষমতায় যাওয়া বা আন্দোলন আন্দোলন খেলার ক্ষেত্রে নারী নেতৃত্বে যেতে আপত্তি নেই।

২) ব্যাংক সুদ হারাম - কিন্তু তাদের আর্থিক প্রতিষ্টানগুলি নাম পরিবর্তন করে সুদের ব্যবসা করা ঠিক আছে।

৩) আমেরিকা ইসলামের শত্রু - ক্ষমতায় থাকলে ইরাকে আমেরিকান হামলা এবং দখলদারী কোন সমস্যা নয়।

৪) ভারত বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র - কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে ভারতের সাথে রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী চুক্তি করা ঠিক আছে।

৫) নেশা দ্রব্য হারাম - কিন্তু খাদ্য রপ্তানীর নামে হেরোইন চোরাকারবারী ঠিক আছে।

৬) ইসলামের প্রাথমিক যুগের কথা বলা আর নেতারা কোন কাজ না করে পাজেরো, ভলবো গাড়ী আর রাষ্ট্রীয় জমিতে গোপনে বাড়ী বানায় আর কর্মিদের বেহেস্তের লোভ দেখিয়ে রাষ্তায় নামিয়ে মার খাওয়ায়। আবার সেটা রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করে।

৭) সতলোকের শাসনের কথা বলে দূর্নীতিবাজদের সহায়তায় ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের অধিকাংশ এমপি দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত।
......

এবার দেখা যাক - জামাতকে নিবন্ধ না করা দাবীর প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন কি বলেন - তা দেখি :


“তাদের এ দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত ছিল মন্তব্য করে বলেন, স্বাধীনতার এক বছর পর বঙ্গবন্ধু রাজাকারদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। আবার পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে আপনারাই যুদ্ধাপরাধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন। বিগত সরকার তাদেরকে মন্ত্রী করে। আমাদের পূর্বসূরি নির্বাচন কমিশন স্বাধীনতাবিরোধীদের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছিল। এখন আপনারাই বলুন এ বিষয়ে আমরা কিভাবে এগুবো"।


আলোচনায় সিইসি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার ঘোষণা দিয়েছিল যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই সেইসব যুদ্ধাপরাধী সাধারণ ক্ষমার আওতায় আসবে। আমার মনে হয়, তদানিন্তন সরকার এখানে একটি ফাঁক রেখেছিল। আসলে তখনই ঐ লোকগুলোর বিচার হওয়া উচিত ছিল”। (সূত্র - দৈনিক ইত্তেফাক)

আমাদেরও কথা একই - আগের সরকারে ভুলগুলো শুদ্ধ করার জন্যেই যখন দেশে সংষ্কারের তোড়জোড় চলছে - তখন অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি করে নির্বাচন কমিশনের উচিত সঠিক কাজটি করা। জামাতের মতো একটা বাংলাদেশ বিরোধী দলকে নিবন্ধ না করা। জেএমবির মাতৃসংগঠন এই জামাতকে রাজনীতি করতে দিয়ে দেশে জঙ্গীবাদকে নির্মূলের লক্ষ্যে কোটি কোটি টাকা নষ্ট না করে - জামাতকে রাজনৈতিক ভাবে নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে দেশে একটা সুষ্ঠ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরীর পদক্ষেপ নিয়ে নির্বাচন কমিশন অতীতের ভুল থেকে বেড়িয়ে আসবে - এটা আমাদের আশা - আমাদের দাবী।

(রিপোস্ট)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:২১
১৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×