somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরন্তর – ১১ (বড় গল্প)

১৩ ই জুলাই, ২০০৮ ভোর ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১০ম পর্ব - Click This Link

মোবাইলে নুতন কেনা সিমকার্ডটা সেট করতে করতে আকাশ সারা দিনের পরিকল্পনাটা একবার ভেবে নিল। কাজ অনেক, তবে গুছিয়ে করতে পারলে সব একদিনেই করা সম্ভব।

গত দুদিন আকাশ ঘর থেকে বের হয়নি এক মুহুর্তের জন্যও। তিব্র অপমান আর গ্লানিতে নিজেকে রাস্তার কুকুর মনে হচ্ছিল। এত বড় অপমান আকাশকে কোন দিনও কেউ করতে পারেনি। অথচ কেবল চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়েছে। প্রতিবাদ করার সামান্য সুযোগও পায়নি। নাকি সাহস হয়নি? নিজেই নিজেকে প্রশ্নটা করেছে বারবার। যখনই করেছে তখনই ওর রক্তে ঝড় উঠেছে। ইয়াবার থেকেও ভয়াবহ এক নেশা, প্রতিশোধের নেশায় পাগল হয়ে ছিল সে।

অন্য মোবাইল সেট থেকে খুঁজেখুঁজে হায়দারের নম্বার বের করে কল করলো আকাশ। হায়দার হলো গুলশান এলাকার আদুভাই। গত চার বছর ধরে সে এ-লেভেল শেষ করার চেষ্টা করছে। তবে চেষ্টা এখনও চেষ্টার পর্যায়েই আছে, সফলাতার মুখ সেটা আজও দেখেনি। যদিও সেটা নিয়ে হায়দারের কোন আফসোস নাই। সে চরম আনন্দে প্রায় গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফেলা বন্ধুদের সাথে গাঁজার আসরে যাচ্ছে, টয়োটা গাড়ির থোবড়া বদলে স্পোর্টস-কার বানিয়ে র‌্যালি করছে আর বনানীর ধোয়াচ্ছন্ন রেস্তোরায় প্রতি সপ্তাহে নুতন নুতন বান্ধবীদের সাথে গো আউট করছে। যদিও হায়দার পাত্তা পাবার মত ছেলে নয়, তবুও বন্ধুরা ওকে পাত্তা দেয় বিশেষ কারনে। হায়দারদের আশুলিয়ার কাছে একটা ফার্ম হাউজ আছে, যেটা বন্ধুদের মূল আকর্ষন। হায়দারও কখনো কাউকে ফিরিয়ে দেয়নি। শর্ত একটাই - নিজ দায়িত্বে মালামাল এবং বান্ধবী নিয়ে যাও। কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সেটা মাল হোক অথবা বান্ধবী, হায়দারের কোন দায়দায়িত্ব নেই। হায়দার বেশ কয়েকবার আকাশকে ফার্ম হাউজের কথা বলেছিল। ‘কোন একদিন যাব’ বলে আকাশ এড়িয়ে গিয়েছে সব সময়।

“হ্যালো কে?” হায়দার ফোন ধরলো অন্যপ্রান্ত থেকে।
“কি খবর? আকাশ বলছি।”
“আরে আকাশ ভাই।” হায়দারের গলায় আবেগ যেন উথলে পড়লো। “নুতন নাম্বার নিলেন নাকি?”
আকাশ একটু হেসে বলল, “তুমিতো জানই, একই মেয়ে আর একই নাম্বার আমার সাথে বেশিদিন স্যুট করে না।”
হায়দার হাসতে হাসতে বলল, “আবার জিগস্! বস মানুষদের একই জিনিসে বেশি দিন মানায়ও না। তা বস, এই অধমকে হঠাৎ মনে পড়লো কেন? কোন বিশেষ কারন নাকি?” শেষের কথাটা একটু রহস্য করে বললো হায়দার।
আকাশ একটু চুপ করে থেকে তারপর বলল, “তোমার ফার্ম হাউজটা পাওয়া যাবে এ সপ্তাহে?”
“কঠিন অবস্থা মনে হচ্ছে? নাম্বারের সাথে কি আইটেমও বদলে ফেলেছেন নাকি?”
আকাশ একটু হাসলো, কিছু বললো না।
হায়দার আবার বলল, “আপনি কোন চিন্তা করবেন না। ফার্ম হাউজ খালিই পড়ে আছে। নিজের মনে করেই চলে যান। আমি রশীদ অর্থাৎ কেয়ারটেকারকে বলে দেব। আপনি যে কোন সময় যেতে পারবেন।”
“আমি আজই একবার একটু ঘুরে আসতে চাই।”
“কোন ব্যাপার না বস। রশীদ একটু বাহিরে আছে। বিকেলের দিকে গেলেই আপনি পেয়ে যাবেন। এর মধ্যে আমি ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।”

হায়দারকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রাখতে রাখতে আকাশ চিন্তা করলো একবার ফারিয়ার সাথে দেখা করে আসবে কিনা? গত দুদিন ইন্টারনেটে ফারজানার সাথে বার কয়েক চ্যাট করা ছাড়া বাকি সময় একমাত্র ফারিয়ার সাথেই কথা বলেছে সে। যদিও কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না তবুও মেয়েটা ওকে প্রায় জোর করিয়েই কথা বলাচ্ছিল। কথার এক পর্যায়ে ফারিয়া দেখা করতে চাইলো। আকাশ মুখে বলেছিল “হবে, কোন এক সময় হবে।” আর মনে মনে ভেবেছিল, পায়রা তুমি নিজ থেকেই ধরা দিতে চাইলে আমার আর কি করার আছে!

দ্রুত ফারিয়াকে কল করলো আকাশ।
“হুস দিস?” ফারিয়া নুতন নাম্বারটা চিনতে পারেনি।
“ইটস্ মি, আকাশ।”
“ওহ…। হাই হানি। হঠাৎ নাম্বার বদল?”
“সে কাহিনী পরে শুনো। এখন খুব গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার ঘটেছে, সেটা নিয়ে কথা বলতে ফোন দিলাম।”
ফারিয়া একটু চমকে উঠলো। “কি হয়েছে? এনিথিং সিরিয়াস?”
“সিরিয়াস মানে, মহা সিরিয়াস। তোমার সাথে ধাবায় বসে আমার খুব দহিফুচকা খেতে ইচ্ছা করছে।”
“ইউ ইডিয়েট।” ফারিয়া হাসছে। “আমার দম প্রায় বন্ধ করে ফেলেছিলে।” তার পর হাসিটা একটু কমে আসলে বলল, “কখন আসতে চাচ্ছ?”
“এখন সম্ভব হলে এখনই।” আকাশ অনুভব করছিল আজকের ব্যাটিংটা আফ্রিদির মত হচ্ছে। চোখ বন্ধ করে ব্যাট চালালেও ছয় হয়ে যাচ্ছে। সে নিশ্চিৎ ফারিয়ার ক্লাস থাকলে, ক্লাস মিস দিয়ে হলেও আজকে সে দেখা করবে। আজকে দিনটাই যেন আকাশের।
“আচ্ছা ঠিক আছে। আমাকে ইউনিভার্সিটি থেকে পিক করো। তার পর এক সাথে ধাবায় যাবো।”
“আমি পনের মিনিটের মধ্যে তোমার ক্যাম্পাসে থাকবো।”
আকাশ যখন ফোন রাখতে যাচ্ছিল ফারিয়া তখন আবার বললো, “ইউ নো, আই সিম্পলি লাভ ইট।”
আকাশ একটু অবাক হয়ে বললো, “কি?”
“ইডিয়েট! দহি ফুচকা।”
আকাশ হেসে ফেললো। মুখে কিছু বললো না। মনেমনে বললো সেটা জানি বলেইতো তোমার উপর প্রয়োগ করলাম। শুধু আফসোস, আগামী আধঘন্টা এই অখাদ্যটা চাবাতে হবে।

আকাশ যখন ক্যাম্পাস থেকে বের হচ্ছিল পেছন থেকে সজীব ডাক দিয়েছিল। আকাশ হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিয়েছিল বন্ধুদের দেয়ার মত সময় এখন ওর কাছে নেই। সেদিন র‌্যাব অফিসের সেই অপমানের পর আকাশের রক্তে এখন অনেকগুলো নেশা এক সাথে কাজ করতে শুরু করেছে। সেগুলোর মধ্যে একটা হলো যেখানে যত মেয়ে পাবে, সবাইকে আকাশ ‘ট্রাই’ করবে।

***

ফারিয়ার সাথে ধাবায় ঘন্টাখানেক সময় কাটিয়ে আকাশ গিয়েছিল বসুন্ধরা সিটিতে। সেখানে কিছু কাজ শেষে যখন আশুলিয়ায় হায়দারদের ফার্ম হাউজে গিয়ে পৌছালো তখন প্রায় বিকেল। ফার্ম হাউজের কেয়ারটেকার রশীদ বেশ চটপটে লোক। হায়দার আগেই ফোন করে দিয়েছিল তাই আকাশকে আর খুব বেশি কিছু বলতে হয়নি। দেখেই চিনতে পেরেছিল।

রশীদের চোখের দিকে তাকিয়েই আকাশ বুঝতে পেরেছিল এই লোক চরম লোভী। তবে লোভী লোক আকাশের বেশ পছন্দ। আকাশ জানে এরা খুব কাজের হয়। যতক্ষন টাকার উপর থাকে, কুকুরের থেকেও বিশ্বস্ত এরা।

রশীদ আকাশকে ফার্ম হাউজটা ঘুরিয়ে দেখালো। বেশ চমৎকার। রুমগুলো বড় এবং আরামদায়ক। যেমনটা আকাশ আশা করেছিল তার থেকেও ভালো।

পুরো ফার্ম হাউজটা ঘুরে বারান্দায় এসে দাড়ালো আকাশ। তার পর একটা পাঁচশ টাকার নোট বের করে রশীদকে দিতে দিতে বললো, “যেভাবে বলবো, সব সেভাবে যদি করো এরকম আরো চারটা নোট পাবা। স্লো মেয়ে, স্লো কার এবং স্লো এসিসট্যান্ট আমার পছন্দ নয়। আশা করি আগামী এক সপ্তাহ এ কথাগুলো মনে থাকবে।”

রশীদ হাসলো। ওর চোখগুলো এখন আরো বেশি চকচক করছে। আকাশের সে চোখ দেখতে ইচ্ছে করছিল না। তাই অন্য দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “আমার গাড়িতে একটা বড় কালো ব্যাগ আছে, ওটা নিয়ে আসো।”

বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ। আকাশ বুঝতে পারে একটু পরেই বৃষ্টি নামবে। এলোমেলো বাতাসে সামনের গাছগুলো নুয়ে পড়ছে, আবার ঠিকই মাথা তুলে দাড়াচ্ছে। আকাশ এক মনে তাকিয়ে ছিল দিগন্তের দিকে। সেদিন কি আকাশ দিগন্তের শেষ প্রান্তে তার নিয়তীকে পড়ছে পারছিল? সম্ভবত পারেনি। নিয়তীর এই এক আজব খেলা। সবার চোখের সামনেই থাকে কিন্তু কেউ পড়তে পারে না। (চলবে)

১২ জুলাই ২০০৮
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০০৮ ভোর ৪:১৬
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×