শাশ্বত সত্য হলো
মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা
সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই ঢাকা থেকে এই সংবাদ-সম্মলন উপলক্ষ্য করে আগত বন্ধুদেরকে- মেজবাহ য়াজাদ, টুটুল, বিপ্লব, ব্লগার কালপুরুষ, রঞ্জু, এফ আই দীপু এবং অন্যরা। ধন্যবাদ জানাই এ বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সিসিডি’র নির্বাহী পরিচালক গোলাম মুর্তজা, এ বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র জেনটেক এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর রুহুল কিউ. সুমন, স্টারনেট কম্পিউটার্স এর আমাদের বন্ধু ও সহমর্মী আব্দুল মালেক তুহিন, এবং আমার সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদেরকে।
‘শাশ্বত সত্য হলো মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা’- চিরন্তন এই মূল্যবোধকেই স্লোগান হিসেবে নিয়েছি আমরা। মানুষের স্বভাবের মধ্যেই আছে সংঘবদ্ধ হওয়া ও অপরের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা। ভালোবাসার অফুরান শক্তির কারণেই টিকে আছে মানব-সভ্যতা। কাকতালীয়ভাবে হলেও বাবা-মা ওর নাম ‘শাশ্বত সত্য’ রেখে আজ আমাদের উপর সেই সহজাত ভালোবাসা প্রকাশের দায় চাপিয়ে দিয়েছেন।
এবং, আমরা ভালোবেসে পাশে না-দাঁড়ালে শাশ্বত আর কখনোই উঠে দাঁড়াতে পারবে না। ইতোমধ্যেই ওর দুটো হিপ-জয়েন্ট নষ্ট হয়েছে। দুই হাঁটুর জয়েন্ট আক্রান্ত। চোখের রেটিনা আক্রান্ত। শরীরের সবগুলো হাড় ক্ষয়িষ্ণু, ভীষণ দুর্বল হয়ে গেছে। রক্তচাপ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। যথাদ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না-করলে অকালেই অনিবার্য মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।
২০০৬ সালে ভারতের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা ওর শরীরে বাসা-বাঁধা বিরল এই রোগের নাম বলেছিলেন এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (Ankylosing Spondylitis) যা এখন আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এখন তারা এর নাম বলেছেন সিরোনেগেটিভ স্পন্ডিলোঅর্থপ্যাথি উইথ এডভান্সড আর্থারাইটিস (Seronegative pondyloarthopathy with Advanced Arthritiy )। এ রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অন্তত ৩৫ লক্ষ টাকা।
আমরা ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যমে মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসার শাশ্বত বোধকে অটুট রাখতে চাই। আমরা ভালোবাসা প্রকাশে ব্যর্থ হলে কেবল এ বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ‘শাশ্বত সত্য’র জীবনপ্রদীপই নিভে যাবে নাÑ ভালোবাসার শাশ্বত সত্য বোধও অপমানিত হবে। আর আমাদের এই প্রচেষ্টা শাশ্বত’র বাবার দীর্ঘশ্বাস, মায়ের অশ্রজল এবং ঢাকা ও রাজশাহীতে ‘শাশ্বত সত্য চিকিৎসা-সহায়তা’ তহবিলের জন্য কর্মরত বন্ধুদের বিপন্নতা ও হতাশায় পর্যবসিত হবে।
ঝুর-ঝুর করে ধ্বসে পড়া শরীর নিয়ে দুঃসহ প্রতিটা দিন, আর দুর্বিসহ রাত কাটাতে হয় শাশ্বতকে। তবু স্রোতের উজান বেয়ে শাশ্বত এত দূর আসতে পেরেছে। অক্টোপাসের মতো কামড়ে-ধরা ব্যাথা সয়েও স্বপ্ন দেখেছে শিক্ষিত হওয়ার। কিন্তু আজ শুধু তার শিক্ষাজীবন নয়, গোটা জীবনটাই বিপন্ন।
তাই, দেশের সর্বস্তরের মানুষের দিকে আমরা হাত বাড়িয়েছি সহযোগিতা পাবার আশায়। এবং সাংবাদিক বন্ধুদেরকে আমাদের পাশে দাঁড়াতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।
দুই বছরের চিকিৎসা ও সেবা ব্যয়ের হিসাব
গত মে মাসের শেষ দিকে নষ্ট বাম হিপ-জয়েন্ট নিয়ে এক ক্র্যাচে ভর-করে-চলা শাশ্বত’র ডান হিপ-জয়েন্টও নষ্ট হয়ে যায়। অতপর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ‘শাশ্বত চিকিৎসা-সহায়তা কমিটি’ গত মাসে প্রচারণা ও অর্থ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে ভারতের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজে ২০০৬ সালের জুন মাসে শাশ্বত’র মেডিকেল চেক-আপ রিপোর্ট ও তার বাবা-মার বক্তব্যের ভিত্তিতে। এই প্রচার ও অর্থ-সংগ্রহে আমার ব্লগ ও সামহোয়ার ইন ব্লগ এর ঢাকাস্থ বন্ধুরাও সামিল হয়েছেন। আমাদের পরামর্শে ও আশ্বাসে আশান্বিত হয়ে বাবা অরুন সত্য শাশ্বতকে নিয়ে আবার ভেলোর রওনা হন গত জুনের ১২ তারিখে চেক-আপ করে শাশ্বত’র শরীরের বর্তমান পরিস্থিতি ও চিকিৎসা-ব্যয় সম্পর্কে জানতে। চেক-আপের মাঝামাঝি তিনি আমাদেরকে চিকিৎসা-ব্যয়ের প্রাথমিক একটা হিসাব জানান। প্রথম আলো ৫ই জুলাই ‘একজন শাশ্বতর বেঁচে থাকা’ শিরোনামে প্রকাশিত লেখায় আমরা সে-হিসাব পেশ করেছিলাম।
গত ৮ই জুলাই শাশ্বত ও তার বাবা দেশে ফিরেছেন। এ-রোগ সারা জীবনের, আজীবন সামান্য চিকিৎসা চলতেই থাকবে। তবে, ২ বছরব্যাপী অপরিহার্য কিছু চিকিৎসা-সেবা দিতে পারলে শাশ্বত প্রায়-স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে। কিন্তু এর ব্যয় সামান্য নয়। অস্ত্রপচার করে হিপ-জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট, শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে বায়োলজিক্যাল ইনজেকশন, শরীরের ক্ষয়িষ্ণু হারগুলো শক্তপোক্ত করতে ইনজেকশন, হাসপাতাল-সেবার ব্যয় এবং ভেলোরে অবস্থান ও যাতায়াতের ব্যয় হিসাব করে দেখা যাচ্ছে অন্তত ৩৫ লক্ষ টাকার তহবিল গঠন করা আবশ্যকÑ হতাশায় কাঠ হয়ে শাশ্বত’র বাবা ব্যয়ের এই চূড়ান্ত হিসাব পেশ করেছেন আমাদের কাছে। তারা এখন সর্বশান্ত। থাকেন নাটোরের আজিমনগরের নর্থবেঙ্গল সুগার মিল কর্তৃপক্ষের অনুগ্রহে ডি গ্রেডের একটি কোয়ার্টারে, সুগার-মিল উচ্চ বিদ্যালয়ে অস্থায়ী শিক্ষকতার চাকুরি নিয়ে।
গতকাল পর্যন্ত তহবিলের হিসাব
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এবং চূড়ান্ত হিসাবের অপেক্ষার কারণে আমাদের অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ একবারেই এগোয়নি। আমাদের ২টা ব্যাংক এক্যাউন্টে আছে ১,০৭৪২২ টাকা। গতকাল হাতে এসেছে ১২,০৯৮ টাকা। এবং বগুড়ার ব্যবসায়ীরা অন্তত ১ লক্ষ টাকা দেবেন এ-সপ্তাহেই। আমাদের অর্থসংগ্রহ অভিযান এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে। আর, ঢাকায় সামহোয়ার ইন ব্লগ এবং আমার ব্লগ এর বন্ধুদের সাহায্যে সংগ্রহ করা হয়েছে ৪,৮২০০০ টাকা। তারাও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অর্থাৎ, সাকুল্যে ৭ লক্ষাধিক টাকার নিশ্চয়তা আমরা এ-পর্যন্ত করতে পেরেছি। যদিও লাগবে আরও অনেক অনেক টাকা।
ব্যাংক একাউন্ট
২টি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে আমরা অর্থ সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি: শাশ্বত চিকিৎসা সহায়তা, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর: ৩৪২৬০৪৯৮ অগ্রণী ব্যাংক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, রাজশাহী এবং সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর: ১৩৫-১০১-৩৩৭০৫। Swift Code: DBBL-BD-DH-100, Dutch-Bangla Bank Ltd., রাজশাহী শাখা।
যোগাযোগ: আ-আল মামুন, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সেল-ফোন: ০১৭১২-০৬১৮০৪, ই-মেইল: [email protected]
কৃতজ্ঞতা জানাই এবং আরও সহযোগিতার আহ্বান
প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই ম্যাসলাইন মিডিয়া-সেন্টার (এমএমসি) এর নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান মঞ্জুর প্রতিÑ পোস্টার ও রিসিট ছেপে দিয়ে তিনি আমাদের প্রচার শুরু করতে প্রণোদিত করেছেন। আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই আমার ব্লগ ও সামহোয়ার ইন ব্লগ বন্ধুদের প্রতি- যারা আমাদের পাশে আছেন শুরু থেকেই। বগুড়া উদিচী ও রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলনী পরিষদ এবং ব্যবসায়ীবৃন্দ্রের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই স্বপ্রণোদিত হয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য, সেন্টার ফর কমিউনিকেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সিসিডি) শাশ্বতকে নিয়ে আমদের প্রকাশনা মূদ্রণের ভার নিয়েছে, এবং অর্থ সংগ্রহেও সক্রিয় হচ্ছেÑ তাদেরকেও ধন্যবাদ। জেনটেক এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর রুহুল কিউ. সুমন, স্টারনেট কম্পিউটার্স এর আমাদের বন্ধু ও সহমর্মী আব্দুল মালেক তুহিনও আমাদের অর্থ-সংগ্রহ উদ্যোগে সামিল হবার কথা দিয়েছেন।
এবং সেইসাথে, আমরা ব্যবসায়ী-শিল্পপতি-সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি হাত বাড়িয়েছি সহযোগিতার আশায়, একটা সম্ভাবনাময় বাড়ন্ত প্রাণ বাঁচানোরর আশায়। যেন শাশ্বত সত্যকে আমরা অন্তত একটা আরামদায়ক জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারি।
পরবর্তী কর্মসূচিগুলো
আমরা এই ক্যাম্পাসে একটা ফিল্ম ফেস্টিভাল, রাজশাহী শহরে কনসার্ট, এবং ক্যাম্পাস ও শহরে ২টা প্রচারণা-রেলির আয়োজন করে অর্থ-সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেইসাথে, অর্থ-সংগ্রহের অন্যান্য তৎপরতাও চলবে। ঢাকা ও অন্যত্রও কাজ চলছে।
আপনাদের সবাইকে এই সংবাদ সম্মেলনে আগমনের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। আর, শাশ্বত’র চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ৩৫ লক্ষ টাকা সংগৃহীত হবার পূর্ব পর্যন্ত সহযোগিতা দিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাই, কারণ- অতি দ্রুত এই বিপুল পরিমাণ টাকা সংগ্রহে ব্যর্থ হলে শাশ্বতকে রক্ষা করা যাবে না।
আ-আল মামুন
আহ্বায়ক
শাশ্বত চিকিৎসা-সহায়তা কমিটি।
১১ই জুলাই, ২০০৮
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
ঢাকা থেকে আগত ব্লগার বন্ধুদের জন্য বিশ্ববিদ্যায় গেস্ট-হাউসে ২টা রুম বরাদ্ধ করা ছিল। আমার বাসায় খাবারের আয়োজন ছিল। তাঁরা আমাদের অতিথি হবেন এবং সংবাদ-সম্মেলনে যোগ দেবেন এরকমই কথা ছিল। ব্লগার সুজন এবং আমরা কয়েকজন রাত জেগে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ব্লগার উজ্জলও ঢাকা থেকে আসা দলে ছিল। উনারা ট্রেনে এসে ভোরবেলা রাজশাহীতে নামেন গতকাল। উজ্জল ও সুজন ওই ভোরবেলাতেই এসে জানালো উনারা আমাদের অতিথি হচ্ছেন না। আমরা আশা করেছিলাম উনারা প্রেস-কনফারেন্সে অন্তত যোগ দেবেন...কেননা আমার দেশ পত্রিকার মালিক তো আর আমরা নই!
আপনাদেরকে পাশে পেয়েছি...আমরা আমাদের ক্যাম্পেইন স্ট্রাটেজি অনুযায়ীই কাজ করছি শাশ্বতকে বাঁচানোর জন্য, ---কোনো খ্যাতি অর্জনের জন্য নয়। কুখ্যাতি ও সুখ্যাতি দুটোই আমাদের যথেষ্ট আছে।
আপনাদের কটু-অশালীন মন্তব্য বা প্রশংসা কোনোটাই শোনার আকাঙ্ক্ষা আমার নেই। মন্তব্য করার সুযোগ থেকে আপনাদের বঞ্চিত করার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।