somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পর্ণো সাইটে RAB ?

১০ ই জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পলাশ মাহবুব

প্রযুক্তির যত উন্নতি হচ্ছে ততই তার সুফল ভোগ করছি আমরা। পাশাপাশি প্রযুক্তির অপপ্রয়োগের ফলে অনেক সময় প্রযুক্তি আমাদের জন্য বিশাল ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ই-নির্ভর এই যুগে ইন্টারনেটের কল্যাণে চারপাশে ছড়িয়ে আছে নানা ধরনের ওয়েব সাইট। কম্পিটারের একটি বাটন টিপলেই খুলে যাচ্ছে তথ্যের বিশাল দুয়ার। এর মধ্যে ভালো যেমন আছে ছড়িয়ে আছে তার উল্টোটাও। বর্তমানে ইন্টারনেট দুনিয়ায় আশংকাজনক হারে বাড়ছে পর্ণো সাইটের সংখ্যা। বাড়ছে সাইটগুলোর ভিজিটরও। অবশ্য পর্ণো সাইটগুলোর মধ্যে বিদেশী সাইটের সংখ্যাই এখন পর্যন্ত বেশি।
তবে দু’বছর আগে থেকে যৌবন জ্বালা ডট কম নামে একটি দেশীয় পর্ণো সাইট যাত্রা শুরু করেছে। এটি দেশীয় পর্ণো সাইটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সাইট। দিন দিন এটি ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের তরুণদের মাঝে। হাফিজ নামের একজন আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী এই সাইটের নির্মাতা এবং পরিচালক। ২০০৫ সালের মে মাসে আমেরিকার নিউইয়র্ক থেকে তিনি এই সাইটটির কার্যক্রম শুরু করেন। তখন থেকেই পুরোদমে চলছে সাইটটির কার্যক্রম। কানাডায় বসবাসকারী কয়েকজন বাংলাদেশীও আছেন এই কার্যক্রমের সঙ্গে। জানা গেছে এই হাফিজ বাংলাদেশে পর্ণো সিডির কু খ্যাত নির্মাতা সুমনের বন্ধু। প্রথম দিকে সাইটটিকে অনেকে বিদেশী সাইট মনে করলেও এখন সবার কাছে তা দেশীয় সাইট হিসেবেই পরিচিত। এখন দেশীয় ইউজাররাই এই সাইটের প্রধান দর্শক এবং সদস্য।
এই সাইটটির হোম পেজ দেখে কারো পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয় যে এটি একটি পর্ণো সাইট। যদিও প্রথমদিকে এটি খোলামেলা পর্ণো সাইটই ছিল। ইদানিং সময়ে নিজেদের আসল চেহারা ঢাকার জন্য হোম পেজে বিভিন্ন রকমের ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়েছে তারা। ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে আড্ডা, জোকস, ফ্রেন্ডশিপসহ এ ধরনের কিছু বিভাগ। পাশাপাশি লোক দেখানো বিভিন্ন তথাকথিত জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গেও নিজেদের জড়িত করার চেষ্টা করছে। আয়োজন করছে বিভিন্ন চ্যারিটি শো। কিন্তু নাম রেজিস্টার করে ভেতরে ঢুকলেই তাদের আসল চেহারা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখানে নিয়মিত সদস্য হওয়ার পদ্ধতিও অভিনব। সদস্য হতে হলে আপনাকে অবশ্যই রগরগে ছবি, ভিডিও কিংবা লেখা পাঠাতে হবে। এবং অতি অবশ্যই তা হতে হবে দেশীয় মেয়েদের। আর এসব ছবি মানেই এক শ্রেণীর মানুষ মেয়েদের অসহায়ত্ব কিংবা দুর্বলতাকে পূঁজি করে। যৌবন জ্বালায় পোস্ট করা অধিকাংশ ছবিই বাংলাদেশী মেয়েদের। এবং ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায় হয় তা মেয়েটির অজান্তে তোলা হয়েছে অথবা তাকে ব্ল্যাকমেইলিং করা হয়েছে। দিনকে দিন সাইটটিতে এ ধরনের ছবির সংখ্যা বাড়ছেই। শুধু ছবিই নয় সঙ্গে আছে এ ধরনের ভিডিও কিপিংসও। মোবাইল ক্যামেরায় মেয়েদের কিপিংস ছড়িয়ে দেবার মতো এই বিষয়টিও ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সাইটটিতে। আর সাইটটিতে যেহেতু ছদ্মনামে ঢোকা যায় তাই অনেকেই নির্ভয়ে পোস্ট করছে ছবি এবং ভিডিও কিপিংস। ছবির সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হচ্ছে নাম এমনকি ঠিকানা পর্যন্ত। অন্যদিকে এই সাইটটির বেশির ভাগ ইউজারই বয়সে তরুণ (স্কুল-কলেজের ছাত্র)। যাদের অধিকাংশই আবার একে অপরের পরিচিত। হয় আগে থেকেই কিংবা এই সাইটের মাধ্যমে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে এ ধরনের ইউজার এবং সাইটে পোস্ট করা ছবির সংখ্যা।
বাড়ার অন্য আরেকটি কারণও অবশ্য আছে। এসব পাঠাতে মানুষকে আগ্রহী করার দারুণ ব্যবস্থা নিয়েছে সাইট পরিচালনাকারীরা। যে যত ভালো (এক্সকুসিভ পর্ণো ছবি কিংবা ভিডিও) ম্যাটার পাঠাতে পারবে তার জন্য আছে পুরষ্কারের ব্যবস্থা। ছবির দুলর্ভতার ওপর ভিত্তি করে পুরষ্কারের পরিমান ওঠানামা করে। পুরষ্কারের পাশাপাশি এ ধরনের ছবি যারা পাঠায় সাইটে তাদের আলাদা গুরুত্বও দেয়া হয়। আছে ভোটাভুটির ব্যবস্থাও। যে কারণে অনেক পুরুষই এ ধরনের ছবি কিংবা ভিডিও পাঠাতে আগ্রহী হয়।
তবে যে ছবিই পাঠানো হোক না কেন তা অবশ্যই হতে হবে বাংলাদেশী মেয়েদের। যে কারণে যারা ছবি কিংবা ভিডিও পাঠায় তারা ছবিটি যে বাংলাদেশী, তা বোঝানোর জন্যও বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। যেমন এই সাইটে পোস্ট করা একটি পর্ণো ছবিতে একজন কলেজ ছাত্রী এবং এক ছেলেকে দেখা গেছে। ছবিটি যে ছেলেটি কৌশলে তুলেছে এবং পোস্ট করেছে তা আর কাউকে বলে দিতে হয় না। কিন্তু ছবির মেয়েটি যে বাংলাদেশী তা প্রমাণ করতে খুব কৌশলে মেয়েটির কলেজের মনোগ্রামকে (জামার ব্যাচ) প্রাধান্য দিয়ে ছবিটি তোলা হয়েছে। ছবিটি দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় ছবির মেয়েটি রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ছাত্রী। মূলত এ কাজটি করা হয়েছে মেয়েটি যে বাংলাদেশী তা নিশ্চিত করতে। এবং যে এই ছবিটি পোস্ট করেছে সে কৃতিত্ব নেয়ার জন্য। কারণ বাংলাদেশী মেয়েদের এ ধরনের ছবি দেখলে সাইটে বাংলাদেশী ইউজার বাড়বে। এ ধরনের অসংখ্য ছবি আছে যৌবন জ্বালা সাইটে।
আবার অন্য একটি ছবিতে একটি মেয়ের ন্যুড ছবি দেখা গেছে। কৌশলে তোলা সেই ছবিটি যে বাংলাদেশী কোনও মেয়ের তা প্রমাণ করতে আরও সূক্ষ্ম কৌশলে মেয়েটির পাশে বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত বাংলাদেশী জাতীয় দৈনিক ফেলে রাখা হয়েছে। যাতে করে সাইটের ভিজিটর যে কেউ চট করে বুঝে নিতে পারবে ছবিটি বাংলাদেশী কোনও মেয়ের।
আবার এমন ঘটনাও ঘটেছে, এক ছেলে (যে নিয়মিত সাইটটির ইউজার এবং মেয়েদের সঙ্গে ব্ল্যাক মেইলিং করে তাদের ছবি পোস্ট করে) একদিন সাইটটিতে ঢুকে দেখে ছদ্মনামে কেউ একজন তারই বোনের ন্যুড ছবি সাইটটিতে পোস্ট করে দিয়েছে।
তবে চরম আপত্তিকর বিষয়টি ধরা পড়েছে সাইটির ফোরামে গিয়ে। ‘রেড লাইট এরিয়া’ শিরোনামের এডাল্ট ফোরামে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। যার একটি বিভাগের নাম জঅই। ঔঔজঅই শিরোনামের বিভাগটির পুরো নাম ঔঙটইঙঘ ঔঅখঅ জঅচওউ অঈঞওঙঘ ইঅঞঞঅখওঙঘ. অর্থাৎ শুধু র‌্যাবের সংক্ষিপ্ত নামই তারা ব্যবহার করেনি পাশাপাশি কৌশলে ইচ্ছাকৃতভাবেই র‌্যাবের পুরো নামই ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে সাইটটিতে। যাতে করে মানুষ বিভ্রান্ত হয়।
জঅই আমাদের দেশের একটি এলিট ফোর্স। অপরাধ দমন, বিশেষ করে বড় ধরনের অপরাধ এবং অপরাধীদের দমনে এই বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়। এবং এ ধরনের কাজে বাহিনীটি ইতোমধ্যেই দারুণ দক্ষতারও পরিচয় দিয়েছে। দেশের মানুষের কাছে র‌্যাবের আলাদা একটি মর্যাদাও তৈরী হয়েছে। কিন্তু একটি দেশীয় পর্ণো সাইট কিভাবে তাদের পাতায় র‌্যাবকে যুক্ত করার সাহস পায়? সাইটটিতে ঢুকে যে কেউই বিভ্রান্ত হতে পারে। হতে পারে প্রতারিত। অনেকেই ধরে নিতে পারে এই সাইটির সঙ্গে হয়তো র‌্যাব কোনও না কোনওভাবে যুক্ত আছে। সাইটটির নিয়ন্ত্রনকারীরা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই যে তাদের ফোরামে র‌্যাবের নাম যুক্ত করেছে তা পরিষ্কার। দীর্ঘদিন ধরেই এই নামের বিভাগটি আছে যৌবন জ্বালা সাইটে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেন বিষয়টিতে নজর দেয়া হচ্ছে না সেটাই আশ্চর্যের।
যৌবন জ্বালা ডট কমের নির্মাতা হাফিজ আমেরিকা থেকেই সাইটটি পরিচালনা করেন। আর তার পক্ষ হয়ে বাংলাদেশ থেকে যৌবন জ্বালার কার্যক্রম পরিচালনা করেন অপূর্ব ওরফে সাজিদ নামের এক ব্যক্তি। সাজিদ রাজধানীর পল্লবী থেকে এই সাইটের কার্যক্রম দেখাশোনা করেন। তিনিই এই সাইটের দেশীয় বিভিন্ন মেম্বারদের থেকে ডোনেশনের টাকা তুলে মূল লোকদের কাছে পাঠান। পাশাপাশি সাইট চালানোর কথা বলেও অনেক মেম্বরাদের কাছ টাকা নেয় অপূর্ব ওরফে সাজিদ। পাশাপাশি সাইটটিতে নানা ধরনের বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করা হয়। সাইটের মেম্বারদের কাছ থেকে তোলা এবং বিজ্ঞাপনের টাকা দিয়েই রাজকীয়ভাবে চলেন তারা।
জানা গেছে যারা এই সাইটে নিয়মিত ঢোকেন বা সদস্য তারা প্রায়ই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত আড্ডা দেয়। দু মাস আগে এই পর্ণো সাইটটির মূল উদ্ভাবক হাফিজ দেশে এসেছিলেন। সেসময় যৌবন জ্বালার অনেক রেজিস্টার্ড সদস্য রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গেট টুগেদার করেছিলেন। সেখানে তারা কিভাবে সাইটিকে আরও জনপ্রিয় করা যায়, কিভাবে সাইটটিতে আরও বেশি এক্সকুসিভ (!) দেশীয় পর্ণো ছবি এবং ভিডিও কিপিংস যোগ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন।

৪৪টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×