somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার গোয়েন্দা দল

১০ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শুরুতেই বলে রাখি। আমি কিন্তু ছোটবেলা থেকেই খুব নিরীহ টাইপের ছেলে। দুঃখের বিষয় যে কেউ সেটা তখন ঠিকমতো বুঝতে পারতো না। তাই এখনি বলে রাখছি, আমার এই লেখা পরে আপনিও যেন আবার আমাকে ভুল বুঝবেন না।

আমার ক্লাস সিক্স-এর কথা। থাকি মুন্সিগঞ্জের অফিসার্স কোয়ার্টারে। সবে তিন গোয়েন্দা পড়া শুরু করেছি। বুঝতেই পারছেন, মাথায় তখন সবসময়ই একটা গোয়েন্দা গোয়েন্দা ভাব ঘুরঘুর করতো। তো আমাদের কোয়ার্টারের কিছু পিচ্চি এবং আমার কয়েকজন ক্রিয়েটিভ ক্লাসমেট নিয়ে তৈরী করে ফেললাম এক গোয়েন্দা দল। ডিকশনারী খুঁজে অনেক কষ্টে একটা নামও বের করলাম - BRIEF BOLDERS (ব্রিফ = ক্ষুদে, বোল্ডারস = সাহসী)।

এবার শুরু হলো এই ক্ষুদে সাহসীদের ট্রেনিংয়ের পালা। কোয়ার্টারের পাশেই বড় এক পুকুর কাটা হচ্ছিলো তখন। তাতে কোন পানি নেই, কিন্তু নিচে নামার বেশ সুন্দর রাস্তামতো আছে। প্রায় প্রতিদিনই আমরা দল বেঁধে সেই পুকুরে নেমে যেতাম। তারপর চলতো তার দেয়াল বেয়ে মাটি কামড়ে-খামচে আমাদের উপরে উঠার আপ্রাণ প্রচেষ্টা। এটা হচ্ছে আমাদের পাহাড়ে চড়ার ট্রেনিং। এই ট্রেনিং শেষে যখন একেক পিচ্চি বাসায় ফিরতো সারা গায়ে কাঁদামাটি মেখে, বুঝেন তখন তাদের কি অবস্থাই না হতো নির্বোধ অভিভাবকদের পাল্লায় পড়ে। কিন্তু তারপরেও একনিষ্ঠভাবে চলতে লাগলো আমাদের ট্রেনিং পর্ব। আমি তো আমাদের এই গোয়েন্দা দলের ভবিষ্যত সম্পর্কে পুরো নিশ্চিত। ভবিষ্যত অতীব উজ্জ্বল।

এদিকে আমার বড় ভাইয়ের কথা হচ্ছে বন্দুক-পিস্তল ছাড়া কখনোই গোয়েন্দা হওয়া যায় না। চোর-ডাকাতের সাথে তো আর খালি হাতে যুদ্ধ করা সম্ভব না। এছাড়া বড় বড় সব গোয়েন্দারই নাকি এসব থাকে। তবে চিন্তা নেই, সে যেহেতু দয়া করে আমাদের দলে থাকতে রাজি হয়েছেই, এসব তৈরী করার দায়িত্বও সে খুশি মনেই নেবে। যদিও আমি বন্দুক-পিস্তলের ঘোর বিরোধী, কিন্তু দলের অনেকেই দেখলাম আমার মতো শুধু বুদ্ধির উপরে ভরসা করতে খুব একটা রাজি না। (তবে সেটা কি তাদের নিজেদের বুদ্ধি, নাকি আমার, অনেক চিন্তা ভাবনা করেও তার সঠিক কোন উত্তর পাইনি)। আমার ভাইটা আবার ছোট বেলা থেকেই বিশিষ্ট বিজ্ঞানী হিসাবে গুণীমহলে ব্যপক সমাদৃত। গবেষনার স্বার্থে সে ভেঙ্গে নষ্ট করেনি এমন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি আমাদের বাসায় খুব কমই ছিলো। তাই তার বিরোধিতা করে তাকে দলছাড়া করাটাও আমার কাছে খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হলো না। অতএব চলতে লাগলো আমাদের বিভিন্ন ট্রেনিং পর্ব, আগের মতোই।

এক সময় শুরু হলো আমাদের দড়ি বেয়ে উঠানামা করার ট্রেনিং। লম্বা দড়ি কিনে এনে তাতে কয়েক ফুট পরপরই গিঁঠ দিলাম অনেকগুলো। আর আমার ভাই এক টুকরো লোহা বাঁকিয়ে আংটা বানিয়ে লাগিয়ে দিলো সেই দড়ির এক মাথায়। দড়ি রেডি। এবার দড়ি ট্রেনিংয়ের জন্যে বেছে নিলাম আমাদের বিল্ডিংয়ের উপরে সিড়িঘরের ছাদ। ঢিল দিয়ে দড়ির আংটা আটকানো হলো সিড়িঘরের ছাদের কার্নিশে। তারপর একেকজন লাটিমের মতো বনবন করে ঘুরতে ঘুরতে উপরে উঠার চেষ্টা করতে লাগলাম সেই দড়ি বেয়ে। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেলো আমরা বেশ কয়েকজন ওই দড়ি বেয়ে উঠানামায় এমনই পারদর্শী হয়ে উঠলাম যে তা দেখলে কোন বাঁদরও হয়তো লজ্জা পেয়ে যেতো। বলতে পারেন শুধু এই দক্ষতাটাকে কোন একটা কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যেই আমাদের হেডকোয়ার্টার হিসাবে সিড়িঘরের ছোট ওই ছাদটাকেই বেছে নিলাম। এছাড়া সেখানে উঠার অন্য কোন রাস্তা না থাকায় শত্রুপক্ষের কারও পক্ষেও লুকিয়ে আমাদের গোপনীয় মিটিংয়ে কানপাতা সম্ভব না। এই যুক্তি খন্ডাতে না পেরে বাধ্য হয়ে আমার সাথে দলের আরও অনেকেরই কষ্ট করে হলেও উঠতে হতো ওই ছাদে।

প্রতিদিন দুপুরের কাঠফাটা রোদ মাথায় করে কিছু পিচ্চি বাচ্চাকে ওই ছাদের উপরে বসে থাকতে দেখে আশেপাশের বিল্ডিংয়ের অনেকেই হয়তো অবাক হতেন। অবাক হতো আমাদের দলের এক্কেবারে পিচ্চিগুলোও, যারা তখনো ঠিকমতো এই অসাধ্য কাজটা রপ্ত করতে পারেনি। নিচ থেকে হা করে তাকিয়ে তারা আমাদের দেখতো। তাই যেন একটু দয়ার বশবর্তী হয়েই সেই পিচ্চিগুলোকে দড়ি ট্রেনিং দেয়া শুরু করলাম আরও জোরেসোরে। আর তা করতে গিয়েই একদিন ঘটলো বিপত্তি।

আমাদের দলে দুধভাত হিসাবে ক্লাশ টু-তে পড়া আমার ছোট ভাই ছিলো। পাশের এপার্টমেন্টের এ.এস.পি. আংকেলের ছেলে শাওনও ছিলো একই ক্লাশের। তো একদিন অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে এই পিচ্চিকে দড়ি বেয়ে তুলে দিলাম ছাদে। কিন্তু পিচ্চি তো উঠেছে ঠিকই, এখন আর নামতে পারে না। উলটো আমাদের এই সাফল্য উদযাপনের মাঝখানে শুরু করলো বেরসিকের মতো কান্না। ছাদের উপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে নাকি তার কলজে খাঁচাছাড়া অবস্থা। তার কান্নার মাঝখান থেকে যতোটুকু কথা উদ্ধার করতে পারলাম তা হচ্ছে, সে নাকি আর কখনোই নিচে নামতে পারবে না। সারাজীবন নাকি তার এখন এই ছাদের উপরই কাটাতে হবে। তাকে যতোই বুঝানোর চেষ্টা করি যে সারা জীবন না, আমাদের মতো বড় হয়ে গেলেই সে নিচে নেমে আসতে পারবে, কোনমতেই তার কান্না আর থামে না। তাকে বুঝালাম যে খাবারদাবার নাহয় আমরা এনে নিয়মিত দিয়ে যাব এখানেই। কিন্তু প্রবলেম হলো টয়লেট করবে কোথায়, আর বৃষ্টি এলে কি করবে। এর খুব ভাল কোন সমাধান আমরা দিতে পারলাম না। অতংপর এই পিচ্চির চিৎকার চেচামেচিতে কয়েক ঘন্টা পর তার এক মামা এসে এই কঠিন অবস্থা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলো তাকে। আর সেই সাথে আমাদের যে কঠিন এক চাহনি দিয়ে গেলো তা কোনমতেই আমাদের মতো কোমলমতী উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির অধিকারী কারো জন্যে উপযুক্ত ছিলো না।

যাক, এরপর কি হলো তা নাহয় বিস্তারিত আর না-ই বললাম। তবে আর যাই হোক, সেটা আমাদের গোয়েন্দা দলের সুনামের জন্যে কোন দিক দিয়েই শুভ কিছু ছিলো না। তখন থেকেই বলতে গেলে আমাদের প্রকাশ্য সব কর্মকান্ড বন্ধ করে পুরো আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে হলো। না, আমাকে ধরে মুরুব্বী মহল থেকে ধোলাই-টোলাই কিছু দেয়া হয়নি। তবে কয়েকমাস ধরে কোয়ার্টারের মহিলা মহলে চলতে লাগলো আমাকে নিয়ে মিটিং-সিটিংয়ের নিত্য চর্চা। আর তাতে যে কেউ আমাকে নিয়ে আর যাই হোক ভাল কিছু বলেনি সেকথা বলাই বাহুল্য।

তাহলেই ভাবুন একবার, আমার মতো এক ক্রিয়েটিভ ছেলের কর্মকান্ড থেকে দেশ ও জাতিকে বঞ্চিত করার কতোরকম ষঢ়যন্ত্রই না চলে এসেছে আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। তবে তাই বলে আমি যেমন থেমে থাকিনি, আমার কর্মকান্ডও এগিয়ে চলেছে নিত্য নতুন আইডিয়া নিয়ে নতুন নতুন ধারায়। সেসব ঘটনাও সুযোগ পেলে হয়তো কখনো আপনাদের বলবো এখানে।
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×