somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেচারা গোপাল!!!!???

০৯ ই জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মাতায় মনে হয় পাগলঅমী আছে। মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা চিন্তা করি। উদ্ভট টাইপের এই চিন্তা কোন কোন সময় কলমের ডগায়ও ভর করে। দেখুননা আমার পাগলামীর নজির...
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

নাম তার সদানন্দ। ভারিক্কি চলাফেরা, কথাবার্তা, আচার-আচরণে গুরুয়ানা সেই সে ছোটবেলা থেকেই। কারও সাথে কথা বলা তার স্বভাব বহির্ভূত। এটা তার দোস-গুণ কোনটাই নয়- স্রেফ প্রাকটিস। বাবা বলেছেন সবসময় ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলতে; হ্যাংলামো একদম বারণ। তাই ওর এই হাল।

বন্ধু বলতে ওর আছে এক ওয়ার্ডবুক- ফুল, পাতা, মাছ আর পাখিদের নাম ছাড়া ওতে আর কিছু নেই। সদানন্দের ইচ্ছে বড় হয়ে মেরিকা পড়তে যাবে। ইংরেজীর ভীত শক্ত করতে তাই এই ওয়ার্ডবুক চর্চা।

সদানন্দ এখন মাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্র। রেজিষ্ট্রেশনের জন্য ছবি তুলে এনেছে। বাবা বললেন- চমৎকার ছবি হয়েছে। কিন্তু কি জান বাবা, গোঁফ পুরুষের এক অমূল্য সম্পদ। কথায় বলে, গোঁফে পুরুষ আর গোছে ধান। বুদ্ধিমান সদানন্দ বুঝে গেল গোঁফ ফেলা তার একদম উচিৎ হয়নি। যে করেই হোক এই সম্পত্তি তাকে রক্ষা করতেই হবে। হাজার হোক ব্যক্তিত্ব বলে পুরুষের একটা ব্যাপার আছে না!

মাধ্যমিক পাশ করে যতারীতি কলেজে। এখানে এসে ঘটে গেল এক মহা বিপত্তি। সদানন্দ অবাক হয়- রমনী এত সুন্দর হয়!? পৃথিবীর সব সৌন্দর্যের আধারইতো এই নারী। তার মাথায় গোল বাধে, এলোমেলো হয়ে যায় সব কিছু। নারী বলতে সে শুধু চেনে ষাটোর্ধ ঠাকুমা আর মা কে।

সদানন্দের ছিল লাল্টু মার্কা চেহোরা- যাকে বলে দুধে আলতায় গায়ের রং। যার ফলে অল্পদিনেই কলেজে পরিচিতি পেয়ে গেল। বালিকাদের আড্ডায় সদানন্দ ছাড়া অন্য প্রসঙ্গের অনুপ্রবেশ কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এইতো সেদিন মিতা বলছিল- আরে ওকে কেমন বোকা বোকা মনে হয়। আর যায় কোথায়, ধোলাইয়ের চোটে মিতা বেচারী স্বামীর নামটিই ভুলতে বসেছিল।

ক'দিনেই সদানন্দের মধ্যে রোমিও সত্ত্বার জন্ম নিল। ভালই তো- সারাক্ষণ একটি সুন্দরী বডিগার্ড! মিষ্টি মধুর কথা বলছে; কে হাত ছাড়া করে এমন সুযোগ। তবে শুধু একটু সদিচ্ছা আর বুকের পাটা থাকা চাই...। তাতে সদানন্দের কমতি কিসের! সেই সুবাদেই নিত্য নতুন সঙ্গী জুটে যায়... আজ মলি, কলি, জয়া কিংবা পলি; পরদিন বা অন্য কেউ। কিন্তু কারো সাথে সম্পর্কটা তেমন জমে না। জমলেও তা স্থায়ী হয় না।

মেয়েদের একটা দোষ। ওরা ভী - ষ - ণ হিংসুটে। নিজের লোককে নিজের মত করে গড়ে নিতে চায়। কিন্তু তারা বোঝে না- পুরুষেরও ব্যক্তিত্ব বলে একটা বিষয় আছে। দু'একদিন ঘোরাঘুরির পরই ওরা বলে বসে- এই তুমি আমাকে ভলোবাস?
- হু।
- আমার জন্য কি কি করতে পার?
- স - ব -।
- ন্যাকা! পারবে তোমার ঐ গোঁফ ফেলতে। আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাওতো তোমার গোঁফ রাখা চলবে না, হ্যাদারামের মত দেখায়।
- কি - ন্তু-
- আচ্ছা, আয়নায় নিজেকে দেখেছ কখনো কেমন দেখায়? আরে বুদ্ধু, গোঁফ থাকলে কি স্মার্টনেস আসে?
- রাগ করো না লক্ষিটি... প্লি - জ-... কালই গোঁফ কেটে ফেলবো।

বিপদে পড়ে যায় সদানন্দ। একে পিতার আদর্শ, অন্যদিকে প্রিয়ার আদেশ! চিন্তা করতে থাকে- গোঁফ বড় না প্রিয়তমা। ভাবে গোঁফ বড় হতে কমছে কম এক মাস। আর প্রিয়া তো প্রতিদিনই...। তো অপাতত গোঁফ রক্ষাই কুল রক্ষা।

এভাবে কয়েক ডজন সম্পর্কের অভিষেকেই যবনিকা টানতে হয়েছে সদানন্দের। এতে করে ওর মধ্যে এক হতাশা কাজ করতে থাকে। শালার এক গোঁফের জনই কি...
বিদ্রোহী হয়ে ওঠে সদানন্দ। নো মোর গোঁফ। কিন্তু এতদিনের ভলোবাসার ধন চাইলেই তো আর বিসর্জন দেওয়া যায় না। তাই অপেক্ষা করতে থাকে নতুন কোন টিয়া-ময়নার জন্য। দেখা মিললেই ...

সেদিন ইকোনমিক্স ক্লাস শেষে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে সদানন্দ। আচমকা সম্বোধন- গোপাল বাবু, এত উদাসীনতা কিসের?
রাগ হলেও মধুর কণ্ঠ তাকে রাগ প্রশমনে সাহায্য করে।
- আপনি?
- জয়িতা, প্রথম বর্ষ, সাইন্স।
মনে মনে বলে, আর্টস-সাইন্স চুলোয় যাক। জয়িতা, জয় তোমাকে করতেই হবে। তবে মুখে শুধু বলে- তা আপনার জন্য কি করতে পারি?
- আপত্তি না থাকলে ঐ দিকে ঐ আমলকি তলায় একটু বসতে পারি।
- কিন্তু ক্লাস...
- আরে ভাই রাখেন তো আপনার ক্লাস, চলুন।

আমলকি তলায় গা ঘেসাঘেসি করে বসে দু'জন। জয়িতা বাদামের খোসাগুলো ছাড়িয়ে দিচ্ছে আর সদানন্দ...। কথার সুযোগে জয়িতা বলে ফেলে-
- আচ্ছা আপনি জানেন আমি আপনাকে বালোসাসি?
বিস্মিত হয় না সদানন্দ। এই কয়েক মাসে একই কথা তাকে অনেকবার শুনতে হয়েছে।
- প্রত্যেক দিনই তুমি... সরি, তুমি বলে ফেললাম। প্রতিদিনই দেখি কেউ না কেউ তোমার সাথে আছে। বড় আপুদের সামনে যেতে সাহস হয় না।
- আর কিছু বলবে?
- সত্যি বলছি, তোমার ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছে। তোমাকে...
- দেখ আবেগ দিয়ে জীবন চলে না।
- জানি তুমি ভুল বুঝবে। ঠিক আছে, কাল বিকেলে একটু নদীর ধারে আসবে? মানে মনে বলে- ভালোবাসার পরীক্ষায় পাশ আমাকে করতেই হবে।

আর কিছু না বলে সোজা কমনরুমে চলে যায় জয়িতা। সদানন্দকে ফেলে যায় চিন্তার সাগরে। ও মনে মনে বলে- জয়িতা, আমি তোমাকে ছাড়বনা। বারে বারে ঘুঘু ধান খেয়ে যায়। এবার তোমাকে জালে আটকাতেই হবে। আর তা আগামী কালই।

আজ কলেজ বন্ধ, সকালে স্যারের বাসায় পড়া ছিল। যায়নি। সারাদিন বিকালের পরিস্থিতি মোকাবেলার মহড়ায় ব্যস্ত থাকে সদানন্দ। পাঁচটা নাগাদ বেরিয়ে পড়ে। জয়িতার জন্য লুকিয়ে একটি গোলাপ নিতে ভুল করেনা। মিনিট বিশেক পর হাজির হয় নদীর ধারে। জয়িতা আগেই হাজির।
- কেমন আছ জয়িতা?
- ভা - লো। বলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে নিমেষেই নারী মূর্তী ধারণ করে জয়িতা।
কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে- হায় হায়! একি করেছ? যে গোঁফের জন্য তোমাকে এতদিন ভালোবেসেছি তুমি কিনা... অসহ্য! পুরুষগুলো কেন যে এত হ্যাদারাম হয়!
সদানন্দ আলতোভাবে গোলাপটি এগিয়ে ধরে- তোমার জন্য।
- নিকুচি করি গোলাপের। পুরুষ! গোঁফ ছাড়া পুরুষ আর... রইল তোমার ভালোবাসা। পথ দেখ তো বাপু।
বজ্রাহতের ন্যায় জয়িতার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে সদানন্দ। হায়রে আমার ভলোবাসা! কি বিচিত্র তুমি...
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

আসলে ভালোবাসাকি সত্যি সত্যিই এতো বিচত্র!!!!!!!!?????

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×