সন্ধ্যা হতেই তারা দুইজন পাশের পাড়ার সরকার ভিলায় হাজির। টুপকরে দেয়াল টপকে দুইজনে বাগানের মধ্যে প্রবেশ করলো। দেয়ালের কাছের গাছগুলো ছিলো পাতাবাহার টাইপের গাছ, তারপরে গোলাপের সারি তারপরে ছিলো কিছু গাঁধা ফুলের গাছ। গাছে একটা গোলাপও ছিলো না, তাই তারা গাঁধা ফুলের দিকে গুটিগুটি পায়ে মাথা নিচু করে এগোচ্ছিলো, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বাড়ির ভিতর থেকে কে যেন ব্যাপারটা কিছুটা আঁচ করেতে পেরে তাদের দিকে টর্চ মেরে বসলো। আর কি! সবাই চোর! চোর! ফুল চোর ! বলে চিৎকার চেচামাচি শুরু করলো। কি আর করা, অতঃপর, দেবদূত ও মামা পড়িমড়ি করে দেয়াল টপকে দৌড় ! একেবারে বাড়ীর কাছে এসে দেবদূতের খেয়াল হলো, তার একপারের জুতা নেই, আর দেয়াল টপকানোর সময় কাঁচে লেগে হাত কেটে একাকার। দেবদূত মনে মনে ভাবে, মানুষগুলো এত স্বার্থপর হয় কেন ? একটা দিনের জন্যেও কি একটু উদার হতে পারে না ? দুই তিনদিন পরতো এমনিতেই ফুলগুলো ঝরে যাবে, তাহলে ঐ গুলো কারও কাজে আসলে কি হয় ?
তারপর আর কি, এইবার শুরুহলো দ্বিতীয় দফা ! মায়ের হাতে মাইর ! রান্না করার কাঠি দিয়ে সেই কি মাইর, মা মারছে দেবদূতকে কাঁদছে, দেবদূতকে কাঁদছে মাও কাঁদছে। অবশেষে সব কষ্ট পানি হয়ে গেলো যখন মা হাতে ১০০ টাকা দিয়ে বললো "যা, ফুল কিনে নিয়ে আয়"।
সেই থেকে দেবদূতের একটা স্বপ্ন , ২/৩ একরের জমিতে শুধু ফুলের বাগান করা। বাগানের চারদিক ঘিরে থাকবে একটা লাল কৃষ্নচুড়া একটা হলুদ রাঁধাচুড়া তারপর আর একটা কৃষ্নচুড়া একটা রাঁধাচুড়া গাছ এইভাবে অল্টারনেটলি। তারপরের স্তরে থাকবে লাল, হলুদ, কালো, গোলাপি পিংক শত রঙের গোলাপ। তারপর বিভিন্ন বেডে থাকবে টগর, ডালিয়া, গন্ধরাজ, রজনিগন্ধা, সন্ধামালতি, গাধা, বেলী, সূর্যমুখি, জবা, শিমুল অপরাজিতা শত শত ফুল। চারদিকে শুধু ফুল আর ফুল। বাগানের ঠিক মাঝখানে একটা ঘর, ঘরটার চারদিকে জানালা, দেবদূত এই ঘরে শুয়ে শুয়ে ফুল দেখবে, শুধু ফুল, প্রান ভরে চোখ জুড়িয়ে ফুল দেখবে।
আর একুশে ফেব্রয়ারীর আগের রাতে ছোট ছোট বাচ্চারা বাগানে ফুল চুরি করতে আসবে দেবদূত লুকিয়া লুকিয়ে তাদের চুরি দেখবে আর আনন্দে তার দুই চোখ ভিজে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০১