somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার লেখালেখির গল্প

০৮ ই জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৫:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখালেখি করিবার সাধ ছোটবেলা হইতে আমার ছিল এমন দাবি করাটা বোধ করি অযৌক্তিক।আমার লেখালেখি করিবার অনুপ্রেরণা বলিতে আমার এক ফুফা।তাহার কথা ভাবিলে অবশ্যি ভারী চশমা মোটা গোফের কোন গম্ভীর চেহারা কল্পনার নয়নে আসিয়া উপস্থিত হয় না। তিনি কোন বড় সাহিত্যিক কিনা বলিতে পারি না,তবে সাহিত্যে তার যে তেমন দখল নাই একথা নিশ্চিত করিয়াই বলা যায়।তাহার পরও তিনিই আমার প্রেরনা।কেননা তিনি প্রথম আমাকে বলিয়াছিলেন ভালোমত দেখিলে যে কোন কিছুই করা যায়।বলিয়াই ক্ষান্ত হননি বরং ফুফুর ব্যঙ্গ বিদ্রুপের সমুচিত জবাব দেবার প্রতিজ্ঞায় একদিন তিনি রাধিতে বসিয়া গেলেন।তাও যে সে রান্না নয়, ফুফু যাহা পারেন না এমন একটি আইটেম তিনি বাছিয়া লইলেন।তাহা হইল আড়াই প্যাচের জিলিপি।আমরা ছোটরা মহা ধুমধামের সহিত তাহার সাহায্যে লাগিয়া গেলাম।সারা বিকাল খাটিয়া যাহা হইল তাহাকে জিলিপি না বলিয়া কটকটি বলাই বেশি যুক্তিসংগত বলিয়া বোধ হয়।ফুফা অবশ্য তেলের ভেজালের মর্ম বয়ান করিতে ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন।আমার সেইদিকে তাকাইবার ফুরসত ছিল না।কটকটিরুপ জিলিপি গোগ্রাসে গিলিতে আমি ব্যস্ত।শত হইলেও নিজেদের গড়া।সৃষ্টির অপার্থিব আনন্দ।

যাহা হউক,লেখলেখির কথায় ফিরিয়া আসি।বাচ্চাকাল হইতেই কবিতা অনেক পড়িতাম।দেখিয়া কাজ করিতে পারার ফুফার সেই প্রেরণাই হোক কিংবা স্কুলে বাংলায় ভালো নম্বর পাইতাম বলিয়াই হোক কিংবা আমার মাতা বাংলার শিক্ষিকা বলিয়াই হোক আমি অতি ছোট হইতেই কবিতা লিখিতে আরম্ভ করিলাম।উহা যে অতিশয় নিম্নমানের ছড়াও ভালোমত হইত না তাহা বোধ করি সবাই অনুমান করিতে পারিতেছেন।আমার মাতাকে দেখাইতেই ,এসব রাখিয়া পড়ায় মনযোগ দাও বলে গর্জিয়া উঠিলেন।আমার কাব্য প্রতিভা দমাইয়া রাখিতে চান উনি।যাই হোক মাতার আদেশ শিরোধার্য করিয়া তখনকার মত আমার কাব্য চর্চা থামিয়া গেল।

ক্যাডেট কলেজ নামক জায়গায় আসিয়া আমার সুপ্ত ইচ্ছা আবার জাগ্রত হইয়া উঠিল।এইতো সুযোগ আমার প্রতিভা সবাইকে দেখাইয়া দিবার।দেয়াল পত্রিকা প্রতিযোগিতা সামনে।হঠাৎ করিয়া আমার মাথায় খেলিয়া গেল চার লাইন-

দুরন্ত দুর্বার যোদ্ধা মোরা
সময়ের সাহসী সৈনিক
সত্যের পথে হব না পিছপা
আসুক বিপদ দৈনিক।

আরে কী কবিতা।যাহা হউক আমি বসিয়া ২০ লাইনের অতি বিদ্রোহী কবিতা রচনা করিয়া ফেলিলাম।ইহা ভাবিয়াই আমার মনে কেমন এক বিদ্রোহ ভাব আসিয়া উপস্থিত হয়।যথাসময়ে দেয়াল পত্রিকা প্রকাশিত হইলো।সম্পাদক যখন পত্রিকা পরিচিতিতে আমার দুরন্ত দুর্বার যোদ্ধা র নাম ঘোষনা করিল বিশ্বজয়ের ছাপ আমার চেহারায়।দেখুক আমার জননী।আমার ভিতরকার আগুনকে উপেক্ষা করিয়াছিলেন, তাই বলে তা চাপা থাকিবে না।কিন্তু আমার বিশ্বজয় থামিয়া গেল যখন কাছে গিয়া পত্রিকা পড়ার সুযোগ হইল।হায় আমার কবিতা অথচ ঐ চার লাইন ছাড়া আর কিছুই তো আমার চেনা লাগিতেছে না।আসলে বিভিন্ন হাতে ঘুরিয়া বিভিন্ন জনের হাতের ছোয়ায় আসলে ওটা কবিতা হইয়াছে।আমার অবদান অতি সামান্য।

যাহাই হোক বাংলা গিয়া এবার ইংরেজি দেয়াল পত্রিকার পালা।আমি ততোদিনে আমার নিজের লেখালেখির স্বরূপ বুঝিয়া লেখালেখি থামাইয়া দিয়াছি।আমার এক বন্ধুর লেখক হওয়ার খুব শখ।তো আগের পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হওয়ায় সে আমার নিকট আসিয়া তাহার জন্য যখন কিছু লিখিয়া দিতে বলিল আমি আতঙ্কিত হইলাম।অনুরোধের ঢেকি গিলিয়া লিখিলাম।এবার আর কবিতা লিখার দুঃসাহস করিলাম না।লিখিলাম গদ্য।স্বাধীনতা দিবস নিয়া।বিষয় অতি চমৎকার।আমি আর আমার বন্ধু দুজনেই মুগ্ধ।
এবারও লেখা ছাপা হইল।কিন্তু আমার বন্ধু আমার উপর রাগিয়া গেল।বানান ভুল আর গ্রামার মিসটেকের কারনে এডিটরের হাত হইতে তাহার যে উত্তম মধ্যম খাইতে হইয়াছে তাহা খাইলে বোধ করি আমার ও লেখালেখির সাধ চিরতরে শেষ হইয়া যাইত।

যাহা হউক আমি ভাবিলাম আর না।আমার এক করিতে গিয়া আরেক হইয়া যায়।প্রমথ চৌধুরীর ভাষায় ,শিব গড়িতে যাইয়া বাদর।তাহার পরও যখন আমরা ক্লাশ টুয়েলভে কো এডিটর হিসেবে আমার ডাক পড়িল আমি বসিয়া থাকিতে পারিলাম না।আমি প্রুফ রিডিং করিতে গিয়া মাঝে নিজেও লেখায় হাত দেয়ার দুঃসাহস দেখাইয়া ফেলিলাম।ফল হইল লেখকের বক্তব্য অনেক জায়গায় পরিবর্তন হইয়া গেল।এতে একজন দেয়াল পত্রিকার কাজ খেমা দিল।উহহ কী ভয়ানক অনর্থ ঘটাইয়া ফেলিলাম।মিটমাট করিয়া সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ শেষ হইল।আমরা ১ম হইলাম।কিন্তু একি সেরা লেখা কার হইল?যাহার নাম ঘোষনা হইল সে তো নিজে কিছুই জানে না।আসলে আমি ভুল করিয়া লেখায় লেখকের নাম গন্ডগোল করিয়া ফেলাতে এই বিপত্তি।

বুয়েটে ঢুকার পর আমি লেখিতে বসিলাম নতুন আগ্রহে।অতি দুঃখ কথা রচনা করিয়া এক বন্ধুকে দেখাইলাম ।দেখি সে হাসিতেছে।এমন দুঃখের লেখায় কারো হাসি আসিতে পারে আমার জানা ছিল না।তাকে বলিতে সে বলিল।কাহিনীটা বাংলা সিনেমার মত লাগছে।তুই বাংলা সিনেমার স্ক্রিপ্ট রাইটার হয়ে যা ভালো করবি।

যাহা হউক তবু আমি লিখিয়া যাই ।হোক না সেটা শিব গড়িতে গিয়া বাদর তবুও তো সৃষ্টির আনন্দ।আমি অবশ্য এই লেখাতে আসিয়া সফল হয়েছি বলিয়াই বোধ হইতেছে। কারণ ইহাকে আমি কিছুই করতে চাইনি এবং ইহা "কিছুই না" ই হয়েছে।
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×