somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনজু পাহাড় আর পোহাং বীচে তিন দিন-পর্ব ২ (শেষ)

০৮ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব ১ এখানে

খাওয়া দাওয়া করে খুব টায়ার্ড হয়ে গেছি, উপরে যেয়ে সবাই চিৎকাত, কেউ ঘুমানোর জন্য মোটামুটি রেডি। এমন সময় এক পাতি বস আসলেন, ঘটনা কি, আমদেরকে নীচে যেতে হবে এখন মৌজ মাস্তি করার জন্য, মদ্যপান, নাচানাচি আর গান হবে। মহা বিরক্ত আমি, শালাদের জোসের কোনো শেষ নাই, কত রাত পর্যন্ত করবে এগুলো কে জানে। গেলাম, যেয়ে দেখি মোটামুটি র‌্যাগ চলছে, আমাদের কে জুস ধরিয়ে দেয়া হলো। উপস্হাপক যাকে খুশি ডাকছে, তোমার দেশের গান গাও নাইলে নাচো। আমার আর বৌএর পালা এলো। গুন গুন করে কতো গান গাই, কিন্তু এখন আর কিছু মনে আসেনা। যাইহোক ডুয়েল 'চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি, নও পাহাড়ি ঝরনা' গাইলাম, সাথে ইংরেজীতে অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিলাম। ওয়ান মোর ওয়ান মোর। এবার তো আরও বিপদ, সব গান গুলে খেয়েছি মনে হলো, গাইলাম আরেকটা গান। যে সুরেই গাইনা কেন ওদের ভালো লাগে, তারপর আবার সবার পেটেই দেশী বিদেশী তরল ঢুকেছে।


অনজুতে এই সেই বাংলো বাড়ি

গান শেষ করে রাত ১ টার দিকে শুতে গেলাম, পরের দিন সকাল ৮ টার ভিতরে রওনা দিয়ে থেগুতে পৌঁছাতে হবে। সকালে ঘুমঘুম চোখে উঠে পাহাড়ের কোলে শিশির ভেজা বনে একটু হেটে বেড়ালাম। জায়গায় জায়গায় কিছু ঝর্নাধারাও বয়ে গেছে, সাথে মনমাতানো সুর। সারাদিন সেমিনারে হাটাহাটি, লোকজনের পোষ্টার দেখে বেড়াতে লাগলাম, আসলেই আর তেমন কোন কাজ নেই। দুপুরে বস খেতে নিয়ে গেলেন, বিরক্তিকর পানসে নুডুল খেয়ে দুপুর কাটলো, তারপর আবার সেই সময় পার করা। কোন কোন স্টলে দেখি মগ, টিসার্ট দিচ্ছে, ভাবলাম লাইনে দাড়িয়ে একটা টিসার্ট নেই। যেয়ে দেখি রিলিফের লাইন, হোক লাইন তবুও নেবো। অনেক সময় পর যখন কাছে গেলাম দেখি সব ডাবল এক্সএল সাইজ, ইয়া বড় ঝুল আলা, মেজাজটা আরও বিগড়ে গেলো। যাইহোক অবশেষে সেমিনার শেষে আমরা রওনা দিলাম সমুদ্রের কাছে, পোহাং বীচে।


এই সেই জলডোবা নুডুল, যা খেয়ে দুপুর পার করতে হয়েছিলো

পোহাং এ যখন পৌঁছালাম তখন বেশ রাত, ৯/১০ টা হবে। হোটেলে যাওয়ার আগেই সবাই মিলে ঢুকলো সি ফুডের রেস্টুরেন্টে। র ফিস নিলো অনেকেই, আমরা নিলাম বিশাল ফ্রাই ফিস, আর ভাত, সবজি তো আছেই, দুপুরে পেটে ভাত পড়েনি। পেট পুরে ভাত খেলাম, শরীরে সারা দিনের ক্লান্তিতে যেন খেতেও কষ্ট হচ্ছে। ভাবলাম এবার একটু আরাম করে ঘুমোতে যাব। হায় কপাল, উনারা এখন 'নোরেবাং' এ যাবেন। নোরেবাং হলো গান গাওয়ার হোটেল, একটা রুমে ডিজিটাল প্লেয়ারে স্টোর করা অসংখ্য গানের মিউজিক আর লিরিকস স্ক্রীনে দেখায়, ওটা দেখে মাইকে আপনাকে গাইতে হবে মিউজিকের সাথে তাল মিলিয়ে, যতো পারফেক্ট হবে গান সেই অনুযায়ী স্কোর দেখাবে স্ক্রীনে। ওরা অনেক গান গাইতে থাকলো, আমরা তো আর পারিনা, কি আর করা সর্বাংগ দিয়ে নাচার চেষ্টা করলাম। প্রায় সবাই গান গেলো, কেউ কেউ ইংলিশ গানও গেলো।


মেঘলা সকালে মন খারাপ করা সমুদ্র

ওখান থেকে যখন বের হলাম তখনা হাটার শক্তি নাই। কোনরকমে হোটেলের রুমে আসলাম। জানালা দিয়ে সমুদ্রের কালো জলরাশি চোখে পড়লো। ওসব দেখার সময় আর নেই, চড়ুই পাখির মতো একটা কুইক ওয়ার্ম শাওয়ার দিয়েই সোজা বিছানায়। সকাল ৯ টার ভিতর আবার ব্যাক করতে হবে থেগুতে। সকাল ৭ টার আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম, সমুদ্রের পাড়ে না হাটলে কি করে হয়। জ্যাকেট টা গায়ে চাপিয়ে গেলাম বীচে, সে কি উদ্দাম বাতাস, সেই সাথে ঠান্ডাও। ঢেউএর এলেমেলো ফেনার সাথে কিছুক্ষন দৌড়ালাম। হাকডাক শুরু হলো, সবাই রেডি হয়ে নাস্তার জন্য ক্যাফেতে আসো, তোমাদের জন্য আজ আমেরিকান ব্রেকফাস্ট। মনে মনে হাসলাম, বেটা তোদের কিসে আমেরিকা নাই। নাস্তা খাবি তাও আমেরিকান, দেখি কি খাওয়াস তোরা। যেয়ে দেখি দুই পিস পাউরুটি, একটু জেলি, , কলা আর কফি। দুই পিস খেয়ে কয়েক লাফ দিয়ে বেড়ে গেলো, বললাম আরও দুই পিস দিতে। আসতে আসতে সব হজম হয়ে গেলো, চুপচাপ খেয়ে উঠলাম আমেরিকান নাস্তা। রাতে সমুদ্র ভালো করে দেখা হয়নি, ফেরার পথের রাস্তাটা একেবারে সমুদ্র ঘেসা, একদিকে পাহাড়, একদিকে সুমদ্র। যতোটুকু দৃশ্য খাওয়া যায়, চোখ ভরে খেয়ে নিলাম, আর হয়তো কোনদিন আসা হবেনা।


ধেয়ে আসা পানির সাথে দৌড়ানোর মজাই আলাদা

ঐদিনই বিকালবেলা থেগু থেকে বাসে করে সোজা সিউলে চলে আসি। জমজমাট টুর জমে যায় এক নিমিষেই।

[এইটা আমার পন্চাশতম পোস্ট :)। সবাই হাফসেন্চুরি করে ব্যাট উচু করে, আমি কিবোর্ড উচু করে আপনাদের অভিবাদন জানালাম :)। কাজের চাপে হয়তো লেখার গতি দুই একমাসের জন্য একটু কমে যেতে পারে। তবুও ব্লগে ঢুকবো, আপনাদের সবার সুন্দর সুন্দর লেখা পড়বো। সবাই ভালো থাকবেন।]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ১১:৪৫
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×