somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবুলের জয়.।.।.।.।.।।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অধ্যায় শেষ হলো। বিশ্বব্যাংক ‘না’ করার আগে বাংলাদেশই ‘না’ করে দিল বিশ্বব্যাংককে।
বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে দাতা সংস্থাটিতে চিঠি দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়নের অনুরোধ ফিরিয়ে নেয়। আর বিশ্বব্যাংক এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের চিঠি আমলে নেওয়ার কথা গতকাল শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছে। এর মাধ্যমে শেষ হলো পদ্মা সেতু নিয়ে এক বছর পাঁচ মাস ধরে চলা দীর্ঘ টানাপোড়েন।
বাংলাদেশের এই নাটকীয় পদক্ষেপের কারণে বহুপক্ষীয় দাতা সংস্থার ঋণে পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাবনা প্রায় শেষ হয়ে গেল। কারণ, মূল দাতা না থাকলে সহদাতারাও থাকবে না। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পের মূল দাতা ছিল। এদিকে, গতকাল রাতেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক পৃথক বিবৃতিতে বলেছে, সহ-অর্থায়নের চুক্তি অনুযায়ী, বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে না থাকায় এডিবিও সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাপানের উন্নয়ন সংস্থাও (জাইকা) এখন এই প্রকল্পে থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
মূলত একটি শর্ত পূরণ নিয়ে সমঝোতা না হওয়ার কারণেই ভেস্তে গেছে সহজ শর্তের ঋণে পদ্মা সেতু তৈরির কাজটি। শর্তটি হচ্ছে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের দায়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম থাকতে হবে। শেষ পর্যন্ত সরকার সৈয়দ আবুল হোসেনের পক্ষেই অবস্থান নিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে এ ঘটনায় একমাত্র লাভবান হলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হলো পুরো দেশ।
সরকারি ও দাতা সংস্থার বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির তদন্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে গঠিত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে গতকাল শুক্রবার ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও সংস্থাটির দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ইন্টেগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্সির কর্মকর্তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য গত বৃহস্পতিবার বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান লুই মোরেনো ওকাম্পো এবং বাকি দুই সদস্য ওয়াশিংটনে পৌঁছান। শুক্রবার বৈঠক করে শনিবার বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দেবে বলে পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তার আগেই চিঠি দিয়ে দিল বাংলাদেশ।
গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমকে চিঠিটি পাঠান। চিঠি পাওয়ার পর গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকালে একটি বিবৃতি দেয় বিশ্বব্যাংক। সংক্ষিপ্ত এই বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ‘বাংলাদেশ সরকার গতকাল বিশ্বব্যাংককে জানিয়েছে, তারা পদ্মা সেতুর অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত আমলে নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত শেষ করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) উৎসাহ দিচ্ছে।’
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছিল ২০১১ সালের এপ্রিলে। আর ঋণচুক্তি স্থগিত করা হয়েছিল একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর। এরপর ২০১২ সালের ২৯ জুন দুর্নীতির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগে ঋণচুক্তি পুরোপুরি বাতিল করে দেয় সংস্থাটি। এরপর বাংলাদেশের অনুরোধেই সেপ্টেম্বরে শর্ত সাপেক্ষে বিশ্বব্যাংক আবার অর্থায়নে ফিরে আসার ঘোষণা দেয়। মূল শর্ত ছিল—দুর্নীতি নিয়ে দুদক তদন্ত করবে এবং সেই তদন্ত নিরপেক্ষ ও পূর্ণ হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করবে একটি বিশেষজ্ঞ দল। অক্টোবরেই বাংলাদেশে আসে বিশেষজ্ঞ দলটি। দ্বিতীয় দফায় তাঁরা আবার সফর করে ডিসেম্বরে। এরপর ১৭ ডিসেম্বর তিন বিদেশি নাগরিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এই তালিকায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর নাম ছিল না। কেবল এ কারণেই দুদকের তদন্ত ও মামলা গ্রহণযোগ্য হয়নি বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ দলের কাছে। অসন্তুষ্টির কথা দুদককে জানানোও হয়।
এরপর সরকারের পক্ষ থেকে জানুয়ারির মধ্যে বিশ্বব্যাংকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া থেকে ফিরে বলেন, জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না পেলে বিকল্প ব্যবস্থায় পদ্মা সেতু তৈরি হবে। তবে এর পরও অর্থমন্ত্রী শেষ চেষ্টা করেছিলেন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সেতু তৈরির। এ জন্য তিনি ওয়াশিংটনে যাওয়ার কথাও জানান। এ নিয়ে চিঠি দেওয়ার কথাও তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিই চিঠি দিয়ে বিশ্বব্যাংকের অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটালেন।
প্রথম থেকেই পদ্মা সেতুর ঋণ পাওয়া নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও সরকারের মধ্যে এক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে টানাপোড়েন চলেছে। মন্ত্রিত্ব থাকা নিয়ে সংকট প্রথম শুরু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব থেকে সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরানো হয়। আর সবশেষে অর্থায়নের পুরো বিষয়টি নির্ভর হয়ে পড়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা নিয়ে। এই কথা চিঠি দিয়ে সরকারকে জানানো হলেও দুদক একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে সংকটের আর সুরাহা হয়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংককে দেওয়া চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ দুর্নীতির তদন্ত অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশের এই আশ্বাস গ্রহণযোগ্য হবে না বলেই মনে করছেন দাতা সংস্থার প্রতিনিধিসহ বিশেষজ্ঞরা। কেননা, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান আইনজীবী লুই মোরেনো ওকাম্পো লিখিতভাবে বলেছেন, দুদকের তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। সুতরাং কোনো পর্যবেক্ষণ ছাড়া দুদকের তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে না বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি—এই ধারণা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সহজ শর্তে ঋণ না পেয়ে সরকার এখন দেশীয় উদ্যোগে পদ্মা সেতু করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। অর্থেরও বড় জোগান দেওয়া হবে দেশীয় উৎস থেকে। কিছু অংশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ নেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি দায় সৃষ্টিরও আশঙ্কা রয়েছে। তবে সরকার এখনো পুরো পরিকল্পনার কথা জানায়নি। তবে সরকারি সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ হিসেবে বর্তমান মেয়াদেই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করবে সরকার।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×